মৌলভীবাজার: মাছ খাওয়া এ প্রাণীটির নাম ‘মেছোবিড়াল’। কিন্তু মানুষ তাকে মেছোবাঘ বলে নামকরণ করে সবার মনে ভয়-ভীতির জাগ্রত করেছে।
এ উপকারী প্রাণীটি সম্পর্কে গবেষকরা বলছেন এই প্রাণীটিকে প্রকৃতিতে বাঁচিয়ে রাখার অন্যতম পন্থাই হলো এ প্রাণীটির বিষয়ে স্থানীয় মানুষদের মধ্যে ব্যপক সচেতনতা তৈরি করা।
মেছোবিড়ালের ইংরেজি নাম Fishing Cat। দিনের বেলা এরা জলাশয়ের উপরের ঝোপঝারে লুকিয়ে থাকে। এরা নিশাচর প্রাণি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক এবং মাংশাসী স্তন্যপায়ী বন্যপ্রাণী গবেষক মুনতাসির আকাশ বাংলানিউজকে বলেন, মেছোবিড়াল বাংলাদেশে ‘বিপদাপন্ন প্রাণি’ এবং পৃথিবী ‘প্রায় সংকটাপন্ন’। এরা পরিবেশের উপকারি প্রাণি। হাওর-বিলে অসুস্থ মাছ ভেসে উঠলেই ওরা সেটা খেয়ে ফেলে। তাছাড়া ক্ষতিকর ইঁদুর খেয়ে ফলসের উপকার করে।
মেছোবিড়াল মৌলভীবাজারের বিভিন্ন হাওর-বিলে মাঝে মধ্যে দিনের বেলা মানুষের মাছ ধরার জালে আটকে পড়লে মানুষ এদের পিটিয়ে মেরে থাকে। প্রাকৃতিক হাওর-বিলের ধ্বংসের সঙ্গে সঙ্গে এদের অবস্থাও মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে। দিনের বেলায় লুকিয়ে থাকার জায়গাগুলো ক্রমশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে বলে জানান এ গবেষক।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে সারা পৃথিবীর মধ্যে এই প্রজাতিটি সবচেয়ে বেশি আছে বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। তবে একে নিয়ে গবেষণার পরিমাণ খুবই কম। আমার একটি জরিপ মতে গত দশ বছরে ২০০র বেশি মেছোবিড়াল খবরে এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে এসেছে। যার বেশির ভাগই হাওর অঞ্চলে।
মেছোবিড়াল অবমুক্ত সম্পর্কে তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে প্রায় ৩০টি মেছোবিড়াল হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারের বনগুলোই ছাড়া হয়েছে। তবে এই প্রাণিগুলো পরবর্তীতে কোথায় যায় সে নিয়ে তেমন কোনো তথ্য নেই।
মাংশাসী স্তন্যপায়ী বন্যপ্রাণী গবেষক মুনতাসির আকাশ আরো বলেন, সম্প্রতি লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে আমাদের ভিডিও ট্রেকিং এর সময় রাতে চলাচলকারী মেছোবিড়ালের অবস্থান ধরে। এই বনে মোটামুটি ভাল অবস্থানেই আছে ওরা। তবে এ ব্যাপারে ধারাবাহিক গবেষণার প্রয়োজন।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, মেছোবিড়াল নিরিহ এবং অত্যন্ত গোপনে চলাচলকারী নিশাচর প্রাণী। এরা জলাভূমির মাছ, ক্ষতিকর ইঁদুর খেয়ে জীবনধারণ করে থাকে। আমরা জানতে পেরেছি, হাওরাঞ্চলের কিছু দুষ্টপ্রকৃতির মানুষ ফাঁদ তৈরির মাধ্যমে তার ভেতর হাঁস-মুরগি ঢুকিয়ে তারপর এই মেছোবিড়ালকে ধরে হত্যা করে থাকে। আমরা এ ব্যাপারে মানুষকে সচেতনসহ এ ধরণের অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার ব্যাপারে সচেষ্ট রয়েছি বলে জানান ডিএফও রেজাউল।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫০ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০২১
বিবিবি/কেএআর