ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

নিরালাপুঞ্জিতে চলছে গাছ কাটার উৎসব!

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০২১
নিরালাপুঞ্জিতে চলছে গাছ কাটার উৎসব! কাটা গাছের গুঁড়ি। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: প্রকৃতির প্রতি মানুষের কোনো ধরনের দয়া-মায়া আর অবশিষ্ট নেই। সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাক্রমে এ কথাটাই জানান দিচ্ছে বারবার।

হাতি হত্যা থেকে শুরু করে বন ধ্বংস সবখানে আজ শুধুই নিষ্ঠুরতার প্রমাণ। মানুষ ও প্রকৃতির সবচেয়ে বড় বন্ধু যে গাছ, সে কথা আজ মূল্যহীন।  

কেননা, মানুষই ব্যক্তিস্বার্থ রক্ষার জন্য মূল্যবান গাছপালাকে কেটে বন ধ্বংসের মাধ্যমে পরিবেশ-প্রকৃতির সবচেয়ে বড় ক্ষতি সাধন করে চলেছে।  

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার সবচেয়ে দুর্গম পাহাড়ি নিরালাপুঞ্জি এলাকা। সীমান্তবর্তী এই জনপদে রয়েছে গাছগাছালিপূর্ণ গভীর অরণ্যপরিবেশ।

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী খাসিয়া সম্প্রদায়ের অধিবাসীদের বসবাস এই নিরালাপুঞ্জিতে। প্রায় শতাধিক পরিবার টিলার ভাঁজে ভাঁজে মাটি ও সিমেন্টের ঘর তৈরি করে বসবাস করছে।  

সম্প্রতি নিরালাপুঞ্জিতে গিয়ে দেখা গেল, খাসিয়ারাই কাটছে তাদের সম্ভাবনাময় পান চাষের উপযোগী গাছগুলো। পার্শ্ববর্তী ফুটবল খেলার মাঠ সংলগ্ন টিলায় পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে শত শত গাছ কেটে কেটে টিলা ভেতরে যত্রতত্র ফেলে রাখা হয়েছে। সংখ্যা হিসাবে কয়েকশত হবে।

নিরালাপুঞ্জিতে আসার সময় দেখা গেল, তিন টনের ট্রাক এই গাছগুলোকে বহন করে শহরের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

নিরালাপুঞ্জির গাছ কাটার এ উৎসবের মধ্যে একদিন এসে দারুণভাবে হতভম্ব হয়ে পড়তে হলো। একেকটি বড় বড় গাছ কাটার ফলে পাশের ছোট ছোট গাছগুলোরও মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। ওই সব ছোট ছোট গাছের ডালপালাগুলো ভেঙে গেছে। স্থানীয় দুই বাসিন্দা এমবিশন এবং খোলাস বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নিরালাপুঞ্জিতে গাছকাটা চলছে। ইতোমধ্যে প্রায় চার-পাঁচশত গাছ কাটা হয়ে গেছে। এই গাছগুলোর বয়স প্রায় ৪-৫০ বছর হবে। এই কয়েক মাসে প্রায় হাজার খানেক গাছ কাটা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য স্থানীয়রা অভিযোগ করে বাংলানিউজকে বলেন, এই নিরালাপুঞ্জির মন্ত্রী (পুঞ্জিপ্রধান) এবং তার অনুসারীরা এর সঙ্গে জড়িত। আমরা কেউ এ ব্যাপারে কথা বলতে পারিনি। কথা বলতে গেলে হুমকিসহ পুঞ্জিছাড়া করার ভয় দেখানো হয়।  

পুঞ্জিপ্রধানের পক্ষে এলবিস প্রতাম নামক একজন এসে নিজের পরিচয় তুলে ধরে বলেন, তিনি এই পুঞ্জির সহকারী মন্ত্রী এবং মন্ত্রীর ফুফাতো ভাই।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এই পুঞ্জির মন্ত্রী তাহেরা প্রতাম এসব গাছ কাটার সঙ্গে জড়িত না। কারা গাছ কাটছে তিনি জানেন না বলে জানেন।  

নিরালাপুঞ্জির মন্ত্রী তাহেরা প্রতামের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে তিনি অসুস্থ এবং দেখা করা সম্ভব না বলে জানান প্রতাম। পরে অবশ্য অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও উনার সঙ্গে দেখা করা সম্ভব হয়নি।    
 
মৌলভীবাজার রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা দীন ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, নিরালাপুঞ্জিতে ৩২৫টি গাছের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ গাছগুলোর প্রজাতির মধ্যে রয়েছে চাপালিশ, বনাক, গামাই, রোংগি, পাখিয়ারা, গর্জন, রাতা, নেউর, মসকন, করই, জাম, চিকরাশি প্রভৃতি। এ গাছগুলো কর্তনের মেয়াদকাল ১৯/৯/২১ থেকে ৫/২/২২ সাল পর্যন্ত।    

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, গাছকাটার বিষয়টি আমি জেনেছি। গাছ পরিবেশের উপকারি অংশ। কেউ ইচ্ছে করলেই নিজের খেয়াল খুশি মতো গাছ কাটতে পারবেন না। এজন্য সরকারি নীতিমালা ও দিক-নির্দেশনা রয়েছে। এ ব্যাপারে আমি নিজে সরেজমিন পরিদর্শন করে তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০২১
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।