ভোলা: ২২ বছরে ভোলার উপকূলীয় এলাকায় ৭০ ভাগ জলচর পাখিদের আগমন কমেছে। পাখিদের আবাসস্থলে গরু-মহিষ এবং মানুষের বিচরণ, খাদ্য সংকট, পাখি শিকারিদের দৌরাত্ম, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশগত নানা কারণে পাখিদের সংখ্যা কমেছে।
ভোলার উপকূলীয় এলাকার ৬০টি চরে টানা নয়দিন পাখি শুমারি শেষে এ তথ্য প্রকাশ করে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব।
বুধবার (১৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সূত্রটি জানায়, ২০০০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত জরিপে উপকূলে প্রায় ৭০ ভাগের মত পাখি কমেছে। ১৯৯৬ সাল থেকে উপকূলে চলে আসছে এ পাখি শুমারি। প্রতি বছরের মতো এ বছরও পাখি শুমারি শেষ হয়েছে।
২০০০ সালে উপকূলীয় এলাকায় যখন পাখি শুমারি হয়, তখন পাখির সংখ্যা ছিল এক লাখের মত। কিন্তু ২০২২ সালে তা কমে ৩৩ হাজার ৬৪টি হয়েছে। যা খুবই উদ্বোগজনক বলে মনে করছেন পাখি গবেষকরা।
চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার উপকূলীয় ৬০টি চরে শুমারি করে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিনিধি দলটি।
মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর কোলঘেঁষা চরে পাখি গণনা করা হয়। টেলিস্কোপসহ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পাখি গণনা করেন বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সদস্যরা। একই সঙ্গে পাখিদের পায়ে রিং পরানো এবং স্যাটেলাইট ট্যাগ বসিয়ে জলচর পাখিদের অবস্থান নির্ণয় করছে দলটি। তাদের গবেষণায় উঠে এসেছে নানা তথ্য।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব, বন বিভাগের টেকসই বন ও জীবিকা প্রকল্প (সুফল), প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন, আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংস্থা (আইইউসিএন-IUCN) যৌথ উদ্যোগে গত ৯ জানুয়ারি থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত নয়দিন বাংলাদেশের মধ্য দক্ষিণ উপকূলে এশীয় জলচর পাখি শুমারি ২০২২ পরিচালিত হয়। ভোলার খেয়াঘাট থেকে শুরু হয় এ শুমারি। এ শুমারিতে অংশ নেন বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট সায়াম ইউ চৌধুরী, সদস্য এম এ মুহিত, শফিকুর রহমান, নাজিম উদ্দিন খান ও মোহাম্মদ ফয়সাল।
ওই জরিপে ৫৮ প্রজাতির মোট ৩৩,০৬৪টি জলচর পাখি গণনা করা হয়। এর মধ্যে উল্লোখযোগ্য বৈশ্বিকভাবে বিপন্ন পাখি দেশি গাংচোষা ৫৪০টি- (Indian Skimmer) এবং বাদামী মাথা গাংচিল (Brown-headed Gull) ৪,১৬২টি পাওয়া গেছে। প্রতিনিধি দলটি মাছ ধরার ট্রলারে করে উপকূল থেকে উপকূলে পাখি গণনা করেন।
গুরুত্বপূর্ণ চরগুলোর মধ্যে আছে চর তাজাম্মল, চর পাতিলা, ঢালচর, শিবচর, চর নিজাম, ভেলুমিয়ার চর, দমার চর, চর কুকরি মুকরি, চর শাহজালাল, চর মনপুরা, চর মন্তাজ, সোনার চর, রোজিনার চর ইত্যাদি। নিঝুম দ্বীপ ও এর আশপাশের এলাকায় সবচেয়ে বেশি পাখি গণনা করা হয়েছে। সেখানে পাখি মিলেছে ১০ হাজার ৬৫টি।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের সদস্য এমএ মুহিত বলেন, সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া এবং তিব্বতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে শীতের সময় বাংলাদেশের উপকূলে চলে আসে অসংখ্য পরিযায়ী পাখি। বিগত সময়ের চেয়ে এ বছর ৫৮ প্রজাতির জলচর পাখির দেখা মিললেও পাখিদের আগমন প্রায় ৭০ ভাগ কমে এসেছে বলা চলে।
তিনি বলেন, আমি যখন ২০০০ সালে প্রথম পাখি শুমারিতে অংশ নিই, তখন পাখি ছিল এক লাখের মতো। কিন্তু এ বছর হয়েছে মাত্র ৩৩ হাজার।
জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানবসৃষ্ট কিছু কারণে কমেছে পাখি। এছাড়া উপকূলে পাখিদের আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যাওয়া, খাদ্য সংকট এবং চরাঞ্চলে গরু-মহিষ এবং মানুষের উপস্থিতির কারণে পাখিদের বিচরণ কমে গেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২২
এসআই