ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

প্রকৃতির জলে সেজেছে অরণ্যভূমি

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৩ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০২২
প্রকৃতির জলে সেজেছে অরণ্যভূমি

মৌলভীবাজার: চারিপাশে বন্যার পানি আর পানি! মৌলভীবাজারের বিভিন্ন উপজেলার নানা আপডেট খবরা-খবর। এগুলোতে দৃষ্টি রাখতে রাখতে বানভাসি মানুষের চরম কষ্টের সঙ্গে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে জীবন।

স্থানীয়রা আজ এই অনাকাঙ্ক্ষিত জলময় দুর্গতি থেকে চান মুক্তি। সবার মুক্তি তো একই জায়গায় নয়! কারো কারো মুক্তি প্রকৃতির বুকে। অরণ্যভূমির ঘন সবুজ নির্জন কোণে। যেখানে রয়েছে কেবল প্রশান্তি। অনাবিল সেই শান্তির পরশ। যেখানটাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা একনাগারে বসে থাকা যায়। অথবা ঘুরে বেড়ানো যায় এমন সব অনাবিল সবুজের বুকজুড়ে। সম্প্রতি সাতটি পাহাড়ি ছড়ার মিলনস্থলের দিকে যাত্রা। অরণ্যপ্রকৃতি এখানে নববর্ষার গতিধারা পেয়ে নিজেকে সাজিয়ে রেখে প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্যেই। যেনো সে আপন মনের অব্যক্ত ভাষায় বলছে- এসো, আমি তো তোমাদের জন্যেই অপেক্ষমান! প্রতি বর্ষায় তোমাদের জন্যেই তো নতুন করে সেজে উঠি। তোমাদের প্রতিটি চরণচিহ্ন আমাকে আগামীর করে বাঁচিয়ে রাখে। ...আরো কত কী! 

বর্ষার দাপট এখানেও লেগেছে বেশ। তবে সে বর্ষা জলবদ্ধতা, বন্যা এসব প্রাকৃতিক অরাজকতা সৃষ্টি করতে পারিনি। পাকা পথ থেকে সবুজের গতিধারা বয়ে নিয়ে অরণ্যের গভীরে। দূর থেকে দেখলে শুধুই যেনো প্রাণের স্বস্তি। একটা বৃক্ষ তার মায়াভরা ডালপালা দিয়ে অপর বৃক্ষটিকে জড়িয়ে ধরে আছে। আহাঃ পরশে পরশে সুখানুভূতিতে যেনো ভাসছে ওরা!

শুধুই কী বৃক্ষ? শুধু বৃক্ষ নয়, নানা লতাগুল্মও তা-ই। একে অপরের সঙ্গে দারুণ মাখাখাখি। এ যেন জন্মজন্মান্তরের জানাশোনা। তাদের চেনাপরিচিতির স্বাভাবিক গণ্ডি। কিংবা একত্রে বেড়ে ওঠার শৈশবতাড়িত মিলনানন্দ। সবুজের আরেকটি বাঁক ঘুরতেই দেখি বুনোফুল! কী আশ্চর্য সুন্দর! হৃদয় ভরে উঠে। ছুঁতে ইচ্ছে করে। কিন্তু ভয়ার্ত বাক্যজুড়ে দিয়ে বাঁধসাধেন সঙ্গীয় গাইড! তার কথায়- ‘পিট ভাইপার’রা (সবুজ বোড়া সাপ) নির্জন ডালে বসে থাকে। গাছ-পাতার রং আর পিট ভাইপারের শরীরের রং একেবারে একই, তাই সহজে দেখা যায় না। একটু অসতর্ক হলেই নাকি বিপদ! অরণ্যভ্রমণের দারুণ দুর্গতি নিয়ে দ্রুতই হাসপাতাল, ক্লিনিক বা বাড়ি ফিরতে হয়।

তবু ফুলটির প্রতি মায়াভরা দৃষ্টি এতোটুকু ক্ষীণ বা ভয়ার্ত হয়ে উঠেনি। প্রকৃতির পরম নির্জন কোণে পরিবেশের এমন মনোমুগ্ধকর অচেনা বন্ধুরাই সবার অলক্ষ্যে প্রস্ফুটিত হয়ে প্রকৃতির সুস্থতার জানান দেয়। কী চমৎকার!তারপর বালুময় একটু শান্তি উঠানে এসে পড়া। হাঁটতে গিয়ে চরণযুগল বালুর কণায় কণায় সামান্য অনুভূতিতে মিশে যাচ্ছে। এখানেই অন্যরকম এক সৌন্দর্য গোপনে প্রকাশিত। শুকনো ছড়ার এই পথ ধরেই এক ঘণ্টার ফুটট্রেইল (পায়ে চলা ৪র্থ)। অরণ্যপ্রেমীরা এই পথ ধরেই সৌন্দর্যের গভীরে প্রবেশ করেন। কেউ কেউ ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকেন। বিস্ময়কর রূপের ছটা প্রত্যক্ষ করার পাশাপাশি ঘ্রাণ নেন, বুনো ঘ্রাণ। যা তাদের দীর্ঘশ্রমক্লান্তিকে প্রশান্তিতে ভরিয়ে দেয়। এখানকার এই পাহাড়ি ছড়াগুলো বিস্ময়কর। কেননা, বর্ষা পানির এখানে বেশিক্ষণ থাকে না। দ্রুত এসে দ্রুত চলে যায়। পেছনে রেখে যায় এমন আশ্চর্য সুন্দর বালুকাবেলা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০২২
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।