মৌলভীবাজার: শরীরে রোদ লাগানো– ব্যাপারটিতে ক্ষতির কিছু নেই। উপকার ছাড়া।
শিশুরাসহ আমাদের অনেকেই আজ অনেকাংশে গৃহবন্দি। শরীরের চামড়ায় আমরা রোদ পোহাতে পছন্দ করি না। অথবা কারো করো ক্ষেত্রে সুযোগও নেই। ভুলেও যদি কখনো আমাদের শরীরে রোদ এসে স্পর্শ করে সেই রোদকে আমরা ঢেলে ফেলার চেষ্টা করি। এই অভ্যাস মজ্জাগত।
রোদের কিরণহীন দেহ তাই স্বাভাবিকভাবে হারাচ্ছে রোগব্যাধির প্রতিরোধ ক্ষমতা। তবে আশার কথা, মাত্র ২০ মিনিটের রোদের কিরণ আমাদের শরীরে তৈরি করে থাকে উপকারী ভিটামিন ‘ডি’।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক উপ-পরিচালক (ডিডি) কৃষিবিদ কাজী লুৎফুল বারী বাংলানিউজকে বলেন, সুস্থ থাকার জন্য এবং শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ভিটামিন-ডি এর বিকল্প নেই। ভিটামিন-ডি মানে ভিটামিন-ডি থ্রি। এই ভিটামিনটি ৮০ শতাংশ আসে সানলাইট (সূর্যের আলো) থেকে। সানলাইট যখন শরীরে পড়বে তখন ভিটামিন ডি টা সংশ্লেষণ হয়। কারণ, সূর্যের আলোর মাঝে ভিটামিন ডি নেই। শরীরে এসে লাগলে তারপর ভিটামিন ডি তৈরি হয়।
রোদের সময় সম্পর্কে তিনি বলেন, দুপুরের রোদে অন্তত ২০ মিনিট আপনাকে শরীরে রোদ লাগাতে হবে। এটা দুপুরের কড়া রোদে হতে হবে। সকালের মিষ্টি রোদে হবে না। সকাল ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত ওই রোদটা। আমাদের একটি ধারণা আছে যে, সকালের হালকা রোদ শরীরে লাগালেই হবে। আসলে তা নয়। দুপুরের কড়া রোদ হতে হবে। এই রোদে যদি বসে থাকতে পারেন, হাঁটতে পারেন ঘুরতে পারেন তাহলেও ডিটামিন ডি পাওয়া যাবে। বিদেশিরা যেভাবে সমুদ্র সৈকতে সানবাথ (সূর্যস্নান) করে সেভাবে হলে খুব ভালো হয়।
মাত্র ২০ মিনিট আপনি সূর্য থেকে সানলাইট শরীরে এক্সপোজ করে রাখবেন। প্রতিদিন লাগবে না। সপ্তাহে ৩/৪ দিন এভাবে করলেই হবে। তখন আপনার শরীরে সানলাইট সংশ্লেষণ হয়ে যাবে। এটাই এনাফ (যথেষ্ট) বলে জানান তিনি।
ভিটামিন-ডি টেস্ট সম্পর্কে তিনি বলেন, শরীরের ৮০ শতাংশ ভিটামিন ডি আসে সূর্যের এই ম্যাকানিজম (পদ্ধতি) থেকে। আর ২০ শতাংশ ভিটামিন পাবেন ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার যেমন- ডিম, দুধ, মুরগির কলিজা, খাসির কলিজা প্রভৃতি কলিজা থেকে। আপনি আপনার শরীরের ভিটামিন ডি টেস্টও করাতে পারেন। আমি একবার আমার ডিটামিন ডি টেস্ট করিয়ে ছিলাম। এই টেস্টটি একটু কস্টলি, ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা লাগে। আমরা রিপোর্ট এসেছিল ১৬। যেখানে ৩০ থাকা দরকার। এই ১৬ আমার শরীরের ইনসাফিসিয়্যান্ট লেভেল (অপর্যাপ্ত স্তর)। আমি নিজেও সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ দিন শরীরে রোগ লাগাবার চেষ্টা করি।
‘ডেভিফিয়েন্সি’ এর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রায় ৯০/৯৫ শতাংশ লোকের ভিটামিন ডি পরীক্ষা করালে এমন ইনসাফিসিয়্যান লেভেলের রিপোর্ট পাওয়া যাবে। আমরা যারা সবসময় ঘরে থাকি, অফিসে বসে কাজ করি। শুধু গ্রামের খেটেখাওয়া মানুষ, যারা প্রায় সময়ই সানলাইটে থাকে তাদের হয়তো ভিটামিন ডি হয়তো সাফিসিয়্যান্ট আছে। এখন তো ডিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম একত্র করে আধুনিক ওষুধও বের হয়েছে। ডিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম অনেকটা ভাই ভাই এর মতো! চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এগুলো মাঝে মাঝে আমাদের খাওয়া খুব বেশি দরকার। ওষুধ থেকে এগুলো আমাদের তো পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই আমাদের ভিটামিন ডি এর ডেভিফিয়েন্সি (অভাব) থাকছেই।
ভিটামিন-ডি এর কাজ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের শরীরে ক্যালসিয়াকে ক্যারি (বহন) করে নিয়ে যায় ভিটামিন ডি। ক্যালসিয়াম তো প্রায়ই খাচ্ছি আমরা। কিন্তু এটাকে বহন করে যথাস্থানে নিয়ে যেতে পারে না ভিটামিন ডি’র অভাবে। তাহলে দেখা যাচ্ছে একটার সাথে অপরটা জড়িত। আগের দিনে নানান ধরনের পর্যাপ্ত ফল-মূল, পর্যাপ্ত নানা জাতের মাছ খাওয়া হতো। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়ামসহ অন্যান্য ভিটামিন আমরা সহজেই পেয়ে যেতাম। ভিটামিন ডি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
এখন তো আমরা সবাই গৃহবন্দি। এমনকি শিশুরা পর্যন্ত এখন রোদে যায় না। একটু সময়ও রোদে খালি গায়ে থাকে না। কোনো কোনো বাচ্চারা আবার নিজে থেকে খালি গায়ে থাকলে মা-বাবা বকাঝকা করে এবং জামাকাপড় পরিয়ে দেন। তাহলে, প্রয়োজনীয় রোদের কিরণ তার শরীরে গিয়ে ভিটামিন তৈরি করতে পারলো না।
বাচ্চাদের মাঝে মাঝে খালি গায়ে থেকে শরীরে রোদ লাগানো শারীরিকভাবে খুব প্রয়োজন বলে জানান কৃষিবিদ কাজী লুৎফুল বারী।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০২২
বিবিবি/এএটি