ঢাকা, শুক্রবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

ছিলেন বেকার, এখন মাসে আয় ৬০ হাজার টাকারও বেশি

মাছুম কামাল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৩
ছিলেন বেকার, এখন মাসে আয় ৬০ হাজার টাকারও বেশি

ঢাকা: ফ্রিল্যান্সিং বদলে দিয়েছে ফেনী সদর এলাকার সাইফুল ইসলামের জীবন। এক সময় প্রতিনিয়ত চাকরির খোঁজে থাকা সাইফুল এখন ফ্রিল্যান্সিং করে সফল।

সরকারের লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (এলইডিপি) থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং করছেন তিনি। বর্তমানে মাসে গড়ে ৬০ হাজার টাকার বেশি আয় করছেন।

শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপে নিজের গল্প শুনিয়েছেন সাইফুল। জানান, ২০১২ সালে বাবা মার যায়। তখন সদ্য মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হয়েছেন মাত্র। এরপর ভাইদের সহযোগিতায় ২০১৬ সালে ইলেক্ট্রিক্যালে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে ঢাকায় আসেন, চলে চাকরির খোঁজ। প্রথমে একটি কল সেন্টারে খুবই অল্প বেতনে কিছুদিন চাকরি করেন। না পোষানোয় কয়েকদিন পরই ইস্তফা দেন। পরে একটা মার্কেটিং প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। ২ মাস সেখানে চাকরি করার পর প্রতিষ্ঠানটিই বন্ধ হয়ে যায়।

এরপর আরও কয়েক দফায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে বুঝতে পারেন, চাকরি আসলে তাকে দিয়ে হবে না। এরই ফাঁকে ফ্রিল্যান্সিং নিয়ে জানার চেষ্টা শুরু করেন। এভাবে ২ বছর পেরিয়ে যায়। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি তিনি স্কিলস ফর এম্পলয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেইপ) প্রকল্পের আওতায় ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ওপর প্রশিক্ষণ নেন।

সে সময় চিন্তা করেন নিজেকে ফ্রিল্যান্সার হিসেবেই প্রতিষ্ঠা করবেন। দরকার ছিল একটা কম্পিউটারের। কিন্তু কেনার সামর্থ্য ছিল না। ভাইরা পড়ালেখার খরচ চালাতেন বলে তাদের কাছে চাইতেও অস্বস্তি হত। কিন্তু যেই কথা, সেই কাজ। মায়ের সোনার চেন বিক্রি করে ও বোনাজামাইয়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ল্যাপটপ কেনেন তিনি। এরপর সরকারের লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (এলইডিপি) অধীনে প্রশিক্ষণ নেন। ফাঁকে ল্যাপটপ হাতে আসায় কাজ সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিজের মতো করে আরও বিস্তারিত শেখা শুরু করেন।

এরপর চেষ্টা চলে সফল হবার। তখন ২০২০ সাল, করোনার জন্য চাকরি চলে যায় তার। এরপর ফেনীতে চলে যান। চাকরি নেই, হাতে অর্থ ছিল না। ফলে হতাশায় ভুগতেন সে সময়। কাজের জন্য ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের লাইন দরকার ছিল। এরপর মাসিক বিলের একটা বিষয় আছে। সব মিলিয়ে খাপছাড়া হয়ে যাচ্ছিলেন। তবে চেষ্টা চলছিল নিরবচ্ছিন্ন।

সেসময় ইউএসভিপি-বিডার উদ্যোগে আরও একটি প্রশিক্ষণ নেন তিনি। দিনে ১৫-১৬ ঘণ্টা কাজ করতেন সাইফুল। যেখানেই ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কিত রিসোর্স পেতেন, শেখার চেষ্টা করতেন। এরপর এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ২০২০ সালের জুন মাসে প্রথম অস্ট্রেলিয়ান একজন বায়ার তাকে একটি কাজ দেন। ঘণ্টায় ২ ডলার, প্রতিদিন গড়ে ৪-৫ ঘণ্টা করা যেত৷  ফ্রিল্যান্সার ডটকম থেকে কাজটা পেয়েছিলেন, ভালই চলছিল। এরমধ্যেই টুইটারে ফলোয়ার বাড়ানোর আরেকটা কাজ পান তিনি। ১ মাসের সে কাজ করে ২০০ ইউরো উপার্জন করেন।

আত্মবিশ্বাস বাড়ে সাইফুলের। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তার।   নিজের কাজের ক্ষেত্র বাড়ে। ২০২১ সালে পুনরায় ঢাকায় আসেন। ততদিনে আপওয়ার্কে (পেশাদার ফ্রিল্যান্সারদের মার্কেটপ্লেস) কাজ পেতে শুরু করেন। সে সময় লানা ভরিচ নামে একজন ক্রোয়েশিয়ান বায়ার (ক্রেতা) পান। সাইফুলের সফলতার গল্পের অন্যতম কুশীলব তিনি। দীর্ঘ সময় ধরে তার সঙ্গে কাজ করেন সাইফুল। নিজের কাজ কমে যাওয়ার পর তিনি সাইফুলকে অন্য বায়ারও এনে দেন।

২০২২ সালের জানুয়ারিতে এস আই ডিজিটাল মিডিয়া নামে ‘নিজের একক প্রতিষ্ঠানের স্বপ্ন'কে বাস্তবে রূপ দেন সাইফুল। আগামীতে এই প্রতিষ্ঠানের কলেবর বাড়ানোই তার অন্যতম লক্ষ্য।

সাইফুল মূলত ইন্সটাগ্রামের কন্টেন্ট, ফেসবুক বুস্টিং, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট এসব কাজ করেন। কাজে সাফল্যের জন্য তিনি সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে পুরস্কৃত হয়েছেন। সেই সঙ্গে পেশার স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন সরকারিভাবে দেওয়া ফ্রিল্যান্সার পরিচয় পত্র।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৩
এমকে/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।