খুলনা: খাঁ খাঁ রোদ। শেষ ফাল্গুনেই যেন চৈত্রের তাপদাহ বইছে।
খুলনার রূপসা উপজেলার রূপসা নদীর পাড়ের রহিমনগরের খুলনা ডকইয়ার্ডে কর্মরত মরিয়ম মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) দুপুরে বাংলানিউজকে বলেন, একজন পুরুষ যে কাজ করতি পারে, তা আমরাও করতি পারি। কষ্ট পুরুষের সমান করলিও বেতন আমাগের একটু কম।
ওই নারী শ্রমিক বলেন, প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা শ্রম দিয়ে থাকি। আমরা যখন কাঁদার মধ্যে দাঁড়িয়ে কাজ করি তখন পায়ে গাম্বুস পরি। আর যখন রং করি তখন রং করার পোশাক পরি। শুধু চোখ দুটো বাইরে থাকে। এর ফলে আমাদের গায়ে রং লাগে না। রঙের কাজ করলে প্রতিদিন ২৮০ টাকা, ঠুকালে ২৬০ টাকা দেয়। আর মেশিনের কাজ করলে পুরুষদের দেয় ৫০০ টাকা আর নারীদের দেয় ৩০০ টাকা।
জুলেখা নামের আরেক শ্রমিক বলেন, প্রায় ২৫ বছর ধরে ডকইয়ার্ডে চাকরি করি। প্রথম দিকে এত নারী শ্রমিক ছিল না এখন অনেক বেশি। একজন পুরুষের সমান আমরা কাজ করি। আমি গ্রামীণ মেশিনের কাজ করি। এর মাধ্যমে নৌ-যানের জংসহ ময়লা উঠে যায়। প্রথম দিকে ঠুকানোর কাজ করেছি। এরপর রং করেছি। পরে মেশিন ধরতে ধরতে কাজ শিখেছি। প্রায় ১৫ বছর ধরে মেশিনের কাজ করি। লঞ্চ, ট্রলার, জাহাজ ও পল্টুন সব নৌ-যানে কাজ করি।
মুর্শিদা নামের শ্রবণ প্রতিবন্ধী এক নারী শ্রমিক প্রায় ১২ বছর এ ডকইয়ার্ডে কাজ করেন। তিনি কথা না বলতে পারলেও খুব সুন্দর পরিশ্রমের কাজ করতে পারেন বলে জানান ডক কর্মকর্তারা।
খুলনা ডকইয়ার্ডের ইলেক্ট্রো মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মো. শাহ নেওয়াজ বাংলানিউজকে বলেন, খুলনা শিপইয়ার্ড এরপরেই মেসার্স খুলনা ডকইয়ার্ডের অবস্থান। খুলনায় ৪০টির অধিক ডকইয়ার্ড আছে। তার মধ্যে খুলনা ডকইয়ার্ড সবচেয়ে বড়। এখানে খুলনা ও মোংলা বন্দরে একটি নতুন পন্টুন তৈরি করা হয়েছে ও একটি পানির বার্জ ১শ ফিট লম্বা মেরামত করা হয়েছে। এছাড়া বিআইডব্লিউটিএর একাধিক পন্টুন নতুন তৈরি ও মেরামত করা হয়েছে। এখনো বিভিন্ন পন্টুনের মেরামতের কাজ চলছে।
এছাড়া সরকারি-বেসরকারি খুলনা ডকইয়ার্ড এ বিভিন্ন ধরনের জলযান নতুন তৈরি ও মেরামত করা হয়। খুলনা ডকইয়ার্ড খুলনার বহু মানুষের কর্মসংস্থানের জায়গা। রোদ, বৃষ্টি-ঝড় উপেক্ষা করে পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি খুলনা ডকইয়ার্ডে নারী শ্রমিকরা সমান শ্রম দিয়ে থাকেন।
খুলনা ডকইয়ার্ড মালিক সমিতির সভাপতি মো. সালাহউদ্দীন খান বাংলানিউজকে বলেন, ২০০৭ সালে খুলনা ডকইয়ার্ড প্রতিষ্ঠিত। ডকইয়ার্ডে নৌ-যান নির্মাণ ও মেরামতে দিনরাত কাজ করছেন দুই শতাধিক শ্রমিক। এর মধ্যে নারী শ্রমিক রয়েছেন প্রায় অর্ধেক। খুলনা ডকইয়ার্ড ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে জেলাপর্যায়ে সেবাখাতে সর্বোচ্চ মূল্য সংযোজন কর পরিশোধকারী সম্মাননা পান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনা ডকইয়ার্ড ছাড়াও মেসার্স রকি ডকইয়ার্ড, মেসার্স রূপসা ডকইয়ার্ড, মেসার্স ফাতেমা ডকইয়ার্ড, মেসার্স মুন লাইট ডকইয়ার্ড, মেসার্স শিপসা ডকইয়ার্ড, মেসার্স চৌধুরী ডকইয়ার্ড, মেসার্স দাদাজী ডকইয়ার্ডসহ প্রায় ৪০টির অধিক ডকইয়ার্ড খুলনায় রয়েছে। যেখানে প্রধানত ছোট-মাঝারি আকারের অভ্যন্তরীণ জলপথের জাহাজ এবং উপকূলীয় জাহাজ নির্মাণ ও মেরামত করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২৩
এমআরএম/এএটি