ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

ডিভি লটারি : সৌভাগ্যের হাতছানি

মনোয়ারুল ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১০
ডিভি লটারি : সৌভাগ্যের হাতছানি

অনেকের মনের ছোট্ট কোণে বাস করে স্ট্যাচু অব লিবার্টি ছোঁয়ার প্রবল ইচ্ছা। কিন্তু সাধ, সাধ্য আর বৈদেশিক আইন-কানুনের বাধা পেরোতে গিয়ে অনেকের সেই সাধ অপূর্ণই থেকে যায়।

তবে ডিভি লটারির কল্যাণে প্রতি বছর ভাগ্যবানদের জন্য একটি বড় সুযোগ আসে। প্রতি বছরের মতো এ বছরও শুরু হয়েছে অনলাইনে ডিভি লটারির আবেদন কার্যক্রম। ভাগ্যবান হলে এবারও হয়তো অনেকের যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার অপূর্ণ স্বপ্ন পূরণ হতে পারে। ডিভি লটারির মাধ্যমে পাওয়া ভিসার আওতায় এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার বাংলাদেশি স্বপ্নের দেশ যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছে।

ডিভি লটারি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস অনুমোদিত অভিবাসী ভিসা কর্মসূচি। প্রতি বছর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এ লটারির আয়োজন করে। বিশ্বজুড়ে মোট ছয়টি ভৌগোলিক অঞ্চলের অধিবাসীদের ভিসা দেওয়া হয়। আর বেশি ভিসা দেওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রের যেসব এলাকায় মানুষজন কম বসবাস করে সেসব এলাকার জন্য।

জানা গেছে, গত পাঁচ বছরে বিশ্বের যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৫০ হাজারের বেশি লোক পাঠিয়েছে সেসব দেশের নাগরিকদের আর ভিসা দেওয়া হবে না। ফলে এবার ভারত, পাকিস্তান, চীন, ব্রাজিল, কানাডা, যুক্তরাজ্যসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ দেশ বাদ পড়েছে। সৌভাগ্যবশত বাংলাদেশ সে তালিকায় নেই। তাছাড়া ডিভি-২০১১ লটারিতে অর্থাৎ গত বছর যেসব দেশের লোক আবেদন করেছেন তারাও এবার আবেদন করতে পারবেন।

ডিভি সূত্র আরও জানিয়েছে, যেসব আবেদনকারী সঠিক মাপের ছবিসহ অনলাইন আবেদনপত্রটি পূরণ করতে পারবেন তারা লটারির বিবেচনায় প্রধান্য পাবেন। তাছাড়া আগে যাদের যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা বা কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে তাদের নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। ডিভি ২০১২ কর্মসূচিতে আবেদন করার ন্যূনতম কোনও বয়সসীমা উল্লেখ না করা হলেও ১৮ বছরের নিচে ব্যক্তিগতভাবে যে কোনো আবেদনকারীই অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। কিন্তু আবেদনকারীর পরিবারের সদস্য হিসেবে (যেমন সন্তান) অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। আর শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে কমপক্ষে এইচএসসি পাস অথবা বিগত ৫ বছরের মধ্যে অন্তত ২ বছর কোনও পেশাগত অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া
আগ্রহী আবেদনকারীদের www.dvlottery.state.gov ঠিকানার ওয়েবসাইট থেকে আবেদন করতে হবে। আবেদন করতে এ সাইটে প্রবেশ করে Begin Standard Entry অপশনে কিক করতে হবে। তারপর আবেদনের অনলাইন ফরম আসবে। এ ফরমে নিজের নাম, পিতা ও মাতার নাম, জন্ম সংক্রান্ত তথ্য, যোগাযোগের ঠিকানা, ব্যক্তিগত ই-মেইল অ্যাড্রেস, শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ পারিবারিক তথ্য প্রদান করতে হবে। সংশ্লিষ্ট তথ্য ভালোভাবে পূরণের পর Continue অপশনে কিক করতে হবে। এবার পূরণ করা তথ্যগুলো এক নজরে দেখাবে। সব তথ্য সঠিক হলে Submit অপশনে কিক করলে চূড়ান্তভাবে ফরমটি জমা হয়ে যাবে এবং একটি কনফার্মেশন লেটার আসবে। এতে আবেদনকারীর নাম এবং কনফার্মেশন নম্বর থাকবে। এ পৃষ্ঠাটি অবশ্যই প্রিন্ট করে সংরক্ষণ করতে হবে। কারণ লটারিতে বিজয়ী হলে পরবর্তী কাগজপত্র  তৈরি করতে এ লেটারটির প্রয়োজন পড়বে।

উল্লেখ্য, ফরমটি পূরণের সময় অবশ্যই নিজের ব্যক্তিগত ই-মেইল ঠিকানা দিতে হবে। কারণ এ ঠিকানায় লটারিতে বিজয়ীর তথ্য জানানো হবে। এছাড়া অন্যান্য সব তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।

ছবিসংক্রান্ত তথ্য
আবেদনের সময় ছবি সম্পাদন এবং আপলোডের বিষয়টি খুবই গুরত্বপূর্ণ। আবেদনের সময় আবেদনকারীর ছবি নির্দিষ্ট স্থানে এবং স্ত্রী ও সন্তান থাকলে তাদের ছবিও নির্ধারিত স্থানে আলাদাভাবে আপলোড করতে হবে। ছবি অবশ্যই ডিজিটাল বৈশিষ্ট্যের হতে হবে। সরাসরি ডিজিটাল ক্যামেরায় তোলা ছবি বা ডিজিটাল স্ক্যানারে স্ক্যান করা ছবি আপলোড করা যাবে।  

ছবি তোলার নিয়ম
ডিজিটাল ক্যামেরায় তোলা ছবি দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ৬০০ পিক্সেল হতে হবে। আর কালার ডেপথ হতে হবে ২৪ বিট। ছবি তোলার সময় মাথা কোনওভাবে ডানে বা বামে, ওপরে বা নিচে করানো যাবে না। চশমা পরা ছবি গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ চশমার ওপর আলো প্রতিফলিত হয়ে বা চোখের ওপর চশমার ফ্রেমের ছাপ পড়ে চেহারা অস্পষ্ট হতে পারে। মাথার ওপরে চুল থেকে শুরু করে থুঁতনির ঠিক নিচ পর্যন্ত অংশের পরিমাপ হতে হবে মোট ছবির শতকরা ৫০ ভাগ থেকে ৬৯ ভাগের মধ্যে। মোট ছবির উচ্চতার শতকরা ৫৬ থেকে ৬৯ ভাগের মধ্যে হতে হবে দু চোখের উচ্চতা। ছবির পিছনের ব্যাকগ্রাউন্ড থাকতে হবে হালকা রঙের। তবে ছবির সামনে থেকে কোনও কালার ব্যবহার করা যাবে না। যদি ব্যাকগ্রাউন্ড কালো হয়, অস্পষ্ট হয়, কম্পোজিশন করা হয়, রেজ্যুলেশন খুব কম হয় তাহলেও আবেদনপত্র অযোগ্য হতে পারে। ধর্মীয় কারণে মাথা ঢাকা বা টুপি পরা ছবি গ্রহণযোগ্য হবে। তবে মুখ যেন কোনওভাবে ঢেকে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সঠিকভাবে ছবি সম্পাদনার পর তা www.dvlottery.state.gov সাইটের Photo Validation অপশন থেকে পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারেন।

ফলাফল
আগামী ৩ নভেম্বর পর্যন্ত  www.dvlottery.state.gov ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ডিভি লটারি ২০১২ পর্বের জন্য অনলাইন আবেদন করা যাবে। আগামী ২০১১ সালের ১ মে থেকে http://www.dvlottery.state.gov/ESC/ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কনফার্মেশন নম্বর, নাম এবং জন্মতারিখ প্রদান সাপেক্ষে লটারির অগ্রগতি বা স্ট্যাটাস আপডেট জানা যাবে।

সতর্কতা
একটা বিষয় অবশ্যই মনে রাখতে হবে ডিভি লটারিতে আবেদনের জন্য কোনও টাকা পয়সা লাগে না। কিন্তু আমাদের দেশের প্রতারক চক্র সহজ-সরল মানুষদের বিভ্রান্ত করে টাকা পয়সা আদায় করে। এদের এড়িয়ে ডিভি লটারির জন্য আবেদন করতে হবে। তাছাড়া অনেক সময় প্রতারক চক্র নিজেদের খরচে আবেদনকারীর ছবি তুলে তাদের নিজেদের ঠিকানা ও ইমেইল ব্যবহার করে অনলাইন আবেদনপত্র পূরণ করে। তাই বিজয়ী হলে চিঠিপত্র সেই চক্রের ঠিকানায় পৌঁছে। এই সুযোগে ডিভি বিজয়ীদের কাছ থেকে সহজেই মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয় এই চক্র। সেক্ষেত্রে নিজের ই-মেইল থেকে পাঠানোই সবচেয়ে ভালো উপায়। তবে কারো সাহায্য নিয়ে ডিভি ফরম পূরণ করলেও আপনার নিজস্ব ই-মেইল ঠিকানাই ব্যবহার করবেন, অন্য কারো নয়। সবচে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো একই ব্যক্তি একাধিক আবেদন করতে পারবে না। তাহলে ডিভি পাওয়া গেলেও আবেদনকারী লটারিতে তালিকাভুক্তির জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবেন।

নির্বাচিত হওয়ার পর করণীয়
ডিভি লটারি প্রাপ্তির পর আবেদনকারীকে কনফার্মেশন লেটারসহ পাসপোর্ট, মেডিকেল রিপোর্ট, পুলিশ সার্টিফিকেটসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জোগাড় করতে হবে। আর পাসপোর্টের জন্য নির্ধারিত ফি, দূতাবাসের নির্ধারিত মেডিকেল রিপোর্ট তৈরির ফি, পুলিশ সার্টিফিকেটের জন্য সরকারি ফি, ইউএস দূতাবাসের সাক্ষাৎকার ফিসহ কিছু খরচ করতে হবে। প্রত্যেক আবেদনকারীকে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রসহ ৭৪৫ ডলার জমা দিতে হবে। এছাড়া স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত চিকিৎসকদের ফি আলাদা প্রদান করতে হবে।

তবে এগুলো সবই পরের প্রশ্ন। প্রথমে আপনাকে নির্ভুলভাবে ফরম পূরণ করে পাঠাতে হবে, যাতে অন্তত আপনি ভাগ্যবানদের তালিকায় নিজের নাম লেখাতে পারেন।  

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ২০১০, অক্টোবর ১৭, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad