বগুড়া: বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী ‘পোড়াদহ’ মেলা প্রায় চারশ বছরের পুরোনো। প্রতি বছরের মতো এ বছর মাঘের শেষ বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এ মেলা।
গ্রামীণ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে বগুড়া জেলা শহর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার পূর্বে গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নে ইছামতির তীরে পোড়াদহ এলাকায় এ মেলা বসে। ফলে মেলাটি সবার কাছে ‘পোড়াদহ’ মেলা নামেই সর্বাধিক পরিচিত। পরদিন একই স্থানে বসবে বউমেলা।
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার মহিষাবান ও পোড়াদহ গ্রামের প্রবীণ মোজ্জামেল হোসেন, হাবিবুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে আলাপচারিতায় ঐতিহ্যবাহী এ মেলা সম্পর্কে এমন তথ্য জানা যায়।
জানা গেছে, প্রায় চারশ বছর আগের ঘটনা। মেলাস্থলে ছিল একটি বিশাল বটবৃক্ষ। সেখানে একদিন হঠাৎ এক সন্ন্যাসীর আবির্ভাব ঘটে। পরে সেখানে আশ্রম তৈরি করেন সন্ন্যাসীরা। একপর্যায়ে স্থানটি পূণ্যস্থানে পরিণত হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে।
স্থানীয়রা জানান, মেলা মানেই আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠা। নতুন জামাই-বউ ও স্বজনদের নিমন্ত্রণ জানানো। যদিও নিমন্ত্রণ দেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন-পুরোনো বিবেচনা করা হয় না। কারণ, মেলা বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ। সেই ঐতিহ্য ধারণ করে সবাই মেতে ওঠেন বাধভাঙা উৎসবে।
প্রতিবছর মাঘের শেষ বুধবার এ স্থানে সন্ন্যাসী পূজার আয়োজন করে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। সমাগত হন দূর-দূরান্তের ভক্তরা। কালের আবর্তে স্থানটিতে লোকজনের উপস্থিতি বাড়তেই থাকে। এভাবে গোড়াপত্তন ঘটে পোড়াদহ মেলার। ধর্মের গন্ডি পেরিয়ে সব ধর্মের মানুষের মেলবন্ধনে পরিণত হয় এ মেলা। মেলাটি একদিনের। তবে উৎসবের আমেজ থাকে সপ্তাহব্যাপী। নতুন জামাই-বউ ও স্বজনরা মিলে এ উৎসব করেন।
এ মেলার প্রধান আকর্ষণ বিভিন্ন জাতের মাছ। বুধবার ভোর হতে না হতেই আড়তে আনা হয় বড় বড় মাছ। আর ভোর থেকেই আড়তে আড়তে ছুটে যান খুচরা ব্যবসায়ীরা। চাহিদা অনুযায়ী তারা মাছ কেনেন। পরে মাছের পসরা সাজিয়ে দোকানে দোকানে বসেন ব্যবসায়ীরা। দিনভর দোকানগুলোয় চলে কেনাকাটা।
রুই, কাতলা, বাঘাইড়, মৃগেল, বোয়াল, সিলভার কার্প, বিগহেড, কালিবাউস, পাঙ্গাসসহ বিভিন্ন জাতের মাছ পাওয়া যায় এ মেলায়। মেলায় আগে দুই থেকে আড়াই মণ ওজনের বাঘাইড়ও পাওয়া যেত। এখন পাওয়া যায় ১৫ থেকে ২০ কেজি ওজনের রুই, কাতলা, পাঙ্গাস।
পোড়াদহ মেলার আরেক আকর্ষণ বাহারি মিষ্টান্ন সামগ্রী। মাছ আকৃতির মিষ্টি, রসগোল্লা, সন্দেশ, জিলাপি, নিমকি, তিলের নাড়ু, খই, শুকনা মিষ্টি পাওয়া যায়। দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের মিষ্টি পোড়াদহ মেলার অন্যতম আকর্ষণ।
রকমারি জাতের মাছ ও বাহারি মিষ্টান্ন সামগ্রীর পাশাপাশি পোড়াদহ মেলায় বাহারি ডিজাইনের কসমেটিকস, খেলনা, চুড়ি, কানের দুল, মালা, কাজল, মেকআপ বক্স, ব্যাট, বল ভিডিও গেমসসহ নানা ধরনের প্রসাধনী ও খেলনা সামগ্রী পাওয়া যায়। এছাড়া এ মেলায় পাওয়া যায় কাঠের, স্টিল ও লোহার বিভিন্ন আসবাবপত্র। মেলায় বাঁশের নানা পণ্যের দেখা মেলে। যা গ্রামীণ ঐতিহ্য বহন করে।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৫
কেইউএ/এসআই