ঢাকা, রবিবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২, ১১ মে ২০২৫, ১৩ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

চা বাগানের দুর্লভ ‘বনাক’ ফুল

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭:৪৬, মে ১০, ২০২৫
চা বাগানের দুর্লভ ‘বনাক’ ফুল অপূর্বভাবে চা বাগানের প্রকৃতিতে ফুটে আছে বনাক ফুল। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: চা বাগান এবং পাহাড়ি বন সংলগ্ন এলাকা খুব কাছাকাছি। বয়ে যাওয়া পথের এদিক আর ওদিক! এ যেন বননির্ভর জীববৈচিত্র্যের জন্য দারুণ এক পটভূমি।

এখানেই পাখিসহ নানা বন্যপ্রাণীদের অনুসন্ধানে সকালের সময়টা কেটে যায়। সেই অনুসন্ধানের এক পর্বে দৃষ্টি গিয়ে পড়ে অদূরে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকা এক বড় বৃক্ষের দিকে। ফুলে ফুলে ভরা উঠা তার শরীর আত্ম সৌন্দর্যের দারুণ এক অহংকার!

চা বাগানের দুর্গম টিলা বেয়ে সেই গাছটার পাশে পৌঁছুতে বেশ বেগ পেতে হলো। কাছে গিয়েই চোখে বিস্ময়! এই গাছের ফুলগুলো ঠিক যেন চা গাছের ফুলের মতো! ক্যামেলিয়া ফ্লাওয়ার। অফ-হোয়াইট রঙের শোভায় রাঙা। মধ্যে তার অনেকগুলো পরাগরেণুর অপূর্ব সংমিশ্রণ।  

ডালের মাথায়, ডালের মাঝখানে এক বা দ্বৈত অথবা গুচ্ছকারে আপন মাধুর্য নিয়ে নীরবে ফুটে আছে ফুলগুলো। বৃক্ষ ও পুষ্প গবেষকের সাথে যোগাযোগ করে এই অপ্রচলিত এবং অচেনা ফুলটিকে শনাক্ত করা গেছে। এই ফুলগুলোর নাম ‘বনাক’। প্রকৃতি থেকে এই বৃক্ষটি আজ ধীরে ধীরে চোখের আড়াল হয়ে যাচ্ছে।  


জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষায় এই ফুলটিও নিজেকে অন্যসব ফুলের মতোই মেলে ধরেছে। নানা কীট, কালো ভ্রমণ, মৌমাছি, নানা প্রজাপতি এমন কি ছোট পাখিগুলো নিয়মিত আসা-যাওয়া করছে ওই গাছে। যেন এক আরণ্যক উৎসব! প্রতিধ্বনিত প্রকৃতির আপন আহ্বানে।  

উদ্ভিদ গবেষক জিনিয়া নাসরিন সুমন বাংলানিউজকে বলেন, চা পরিবারের এই উদ্ভিদের নাম ‘কনক’, ‘বনাক’ বা ‘মাকড়িশাল’। এর বৈজ্ঞানিক নাম Schima wallichii এবং পরিবার Theaceae। এরা ‘ক্যামেলিয়া’ বা চা পরিবারের উদ্ভিদ। চা এর নাম কিন্তু ক্যামেরিয়া। সেই অর্থে এটাও এক প্রকার ক্যামেলিয়া। অন্য অর্থে ‘চা-ফুল’। চা গাছগুলোকে ছেঁটে বামন করে রাখা হয়। সিলেটের মাধবকুণ্ড বড় চা-গাছ আছে, ছোট গাছের উচ্চতায়। চা গাছের ফুল এই কনকের চেয়ে কিছুটা ছোট।

তিনি আরও বলেন, ক্যামেলিয়ার যেসব অর্নামেন্টাল লাল/গোলাপি আমাদের দেশে আছে তা ডবল পেটাল। এই কনক নাম এসেছে এর সোনারঙা কেশর থেকে। সীতাকুণ্ডের সাইনবোর্ডের লেখা আছে- এই গাছের কাঠ থেকে লাঙল তৈরি হয়। এর কাঠ খুবই উন্নতমানের। একে শাল গাছের সাথে তুলনা করে মাকড়িশাল নামে অভিহিত করা হয়েছে। এর বিস্তার ইন্দো-চাইনিজ থেকে বোর্নিও পর্যন্ত।

অন্যান্য এলাকায় এই ফুলের নামকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পার্বত্য এলাকায় ডাকে ‘মন চাঁপা’। এদের মতোই ডিমপোচ ফুল ‘সুলতান চাঁপা’। তবে তা অন্য পরিবারের। এই বনাকের আরেকটি প্রজাতি সিলেটে পাওয়া যায়। এর নাম- খাসিয়া বনাক বা Schima khasiana. এদের ফুলের সাথে নাগকেশরের মিল আছে। চা বা ক্যামেলিয়া জাতের ফল। ফলের মথা সুচালো। ৫ ভাগ করা হয়। আগেই বলেছি এর কাঠ শক্ত। তাই মূল্যবানও। বিল্ডিং, ব্রিজ, কৃষি যন্ত্রণা বাগানে ব্যবহৃত হয়। এরা আমাদের দেশি প্রজাতির উদ্ভিদ বলে কম যত্নে এদের বৃদ্ধি ও বিস্তার হয় ভালো।  

তবে নতুন করে এসব গাছ বনে লাগানো না হলে এ বৃক্ষটি বিরল হয়ে যাবে – এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়। বিদেশি বৃক্ষের রোপণ বাদ দিয়ে এসব মূল্যবান এবং বিলুপ্তপ্রায় দেশি বৃক্ষ রোপণ করি উচিত বলে জানান এই গবেষক।  

বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।