ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ফিচার

বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার : আছে বিস্ময়, আছে রহস্য

ফেরদৌস মাহমুদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১০
বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার : আছে বিস্ময়, আছে রহস্য

আপনি কি পৃথিবীতে বসেই দূর নক্ষত্রলোক ঘুরে আসতে চান, খুব কাছে থেকে  দেখতে চান দূর মহাকাশের গ্রহ-নক্ষত্রদের মিলনমেলা? তাহলে চলে আসুন ঢাকার বিজয় সরণিতে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটারে। প্রযুক্তির কল্যাণে প্রায় একই অনুভূতি আপনি লাভ করতে পারবেন এখানে।

বাংলাদেশ সরকারের বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এখানে ১২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি করেছে দেশের একমাত্র প্লানেটোরিয়াম নভোথিয়েটার। এ প্রকল্প শুরু হয় ১৯৯৭ সালে এবং এর কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৪ সালে। এখানে প্রদর্শনীর জন্য জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারত থেকে উন্নতমানের সরঞ্জাম আনা হয়েছে।


বিনোদনের মাধ্যমে দেশের নাগরিক বিশেষত শিক্ষার্থীদের মহাকাশবিজ্ঞান সম্পর্কে ধারণা দেওয়া, কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস দূর করে বিজ্ঞানশিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করাই এই প্রতিষ্ঠানটির মূল উদ্দেশ্য।


এই নভোথিয়েটারের অর্ধগোলাকৃতি কক্ষে আছে বিমোহিত করার মতো পারফোরেটেড অ্যালুমিনিয়ামের পর্দা, এই জাতীয় পর্দায় চোখ রাখলে পুরো হলরুমের ছাদটাকেও মনে হয় সিনেমার অংশ। রয়েছে জাপানের গোতো কোম্পানির জিএসএস হ্যেলিয়াস প্রজেক্টর। এটি বিভিন্ন স্পেশাল ইফেক্ট সৃষ্টি করে। রয়েছে অ্যাস্ট্রোভিশন ৭০ প্রজেক্টর, যা ফিল্মে গ্রহ-নক্ষত্র দেখার সময় দর্শকের অনুভূতিকে অনেক বেশি সজাগ করে তোলে। এছাড়া বিশাল অ্যালুমিনিয়াম পর্দার সাথে এই জাতীয় উন্নতমানের প্রজেক্টরের সমন্বয়ে ফিল্ম দেখতে বসলে গোটা দৃশ্যকে মনে হয় জীবন্ত। তাই নভোথিয়েটারের এই প্রদর্শনী হয়ে ওঠে সারাজীবন মনে রাখার মতো।


প্রদর্শনী :  নভোথিয়েটারে নিয়মিত দুটি ফিল্ম প্রদর্শিত হয়। একটি মহাকাশবিষয়ক শো ‘জার্নি টু ইনফিনিটি’, অন্যটি  বাংলাদেশবিষয়ক তথ্যচিত্র  ‘এই আমাদের বাংলাদেশ’। ‘জার্নি টু ইনফিনিটি’ শোতে মহাকাশ বিষয়ক বিভিন্ন তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এটি আমেরিকান ডকুফিল্ম নির্মাতা ড. বিল গুসের সৃষ্টি। এই তথ্যচিত্রটি এখানকার উচ্চক্ষমতার প্রক্ষেপণযন্ত্রের অনিন্দ্য-সুন্দর আলোচ্ছটায় দর্শকদের যেন পৌঁছে দেয় গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে, মিল্কিওয়ে ও গ্যালাক্সিতে। মনেই হবে না যে, আপনি ফিল্মে দেখছেন। বরং মনে হবে আপনিও এ বিশাল মহাশূন্যের মধ্যে ভাসছেন। মনে হবে বিস্ময় জাগানো রহস্যময় বিগব্যাং বা মহাবিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে সৌরজগতের সৃষ্টিপ্রক্রিয়ার সাথে কোনো না কোনোভাবে আপনিও সম্পর্কিত। বৃহৎ ও স্পষ্টভাবে এই ফিল্মে আপনি দেখবেন  : চন্দ্রগ্রহণ, সূর্যগ্রহণ, উল্কাপাত; বিভিন্ন দেশের বছরের বিভিন্ন সময়ের রাতের আকাশ; দূর অতীত, বর্তমান ও দূর ভবিষ্যতের গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান ও বিচরণ; পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহের পৃষ্ঠদেশ; সূর্যের অভ্যন্তরীণ ক্রিয়া-বিক্রিয়া, নক্ষত্রমণ্ডলির বহিঃত্বক; নক্ষত্রের মৃত্যু এবং সর্বগ্রাসী কৃষ্ণগহবরে এদের কোনো কোনোটির হারিয়ে যাওয়ার দৃশ্য এবং সর্বোপরি বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণ। আর দেখার পাশাপাশি সিম্যুলেশন ইফেক্টের কারণে দর্শকদের মনে তৈরি হবে ঘটনাস্থলে সশরীরে হাজির থাকার অনির্বচণীয় অনুভূতি।


অপর ফিল্মটিতে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির প্রতিফলন রয়েছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূলে যে মানবিকতা, সাম্য, গণতন্ত্র আর অসাম্প্রদায়িকতার চেতনা, তার কথা বর্ণিত আছে। এটি পরিচালনা, চিত্রনাট্য তৈরি ও ধারাবিবরণী করেছেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক।

ক্যাপসুল রাইড সিমুলেটর : এটি এমন একটি রোলার কোস্টার, যেখানে প্রাচীন পিরামিডের মধ্য দিয়ে সময়ের  দরোজা পেরিয়ে মিশর ভ্রমণের অনুভূতি লাভ করা সম্ভব। ক্যাপসুল রাইড সিমুলেটরে আসন সংখ্যা ৩০ । জনপ্রতি টিকিটের মূল্য ২০ টাকা। নভোথিয়েটারের  বাহির ও ভেতরের কাউন্টার থেকে টিকেট সংগ্রহ করা যায়।

অন্যান্য সায়েন্টিফিক প্রদর্শন : এই নভোথিয়েটারে আরো আছে প্রদর্শনযোগ্য বিচিত্র সায়েন্টিফিক বিষয়। এর বেশিরভাগই গ্রহ-নক্ষত্র-ছায়াপথ সংক্রান্ত।   যেমনÑ ‘সৌরজগতের গ্রহসমূহের মডেল’, মহাকাশবিষয়ক চিত্র; সূর্য, পৃথিবী ও চাঁদের মডেলসহ নানা কিছু। আছে বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য জানার জন্য একটি টাচস্ক্রিন কম্পিউটার, যার মধ্যে আঙুল ছোঁয়ানো মাত্রই পাওয়া সম্ভব বিজ্ঞানভিত্তিক বিভিন্ন তথ্য।

প্রবেশ তথ্য : শুধু মূল চত্বরে প্রবেশ ফি ১০ টাকা। তবে প্লানেটোরিয়াম শো/রাইড সিমুলেটরের টিকিট সংগ্রহ করলে এ টিকিটের প্রয়োজন হবে না। প্লানেটোরিয়াম শোর জন্য জনপ্রতি টিকিটমূল্য ৫০ টাকা। প্রতিদিন পাঁচবার প্রদর্শনী চলে। সকাল ১১টা, দুপুর ১টা, বেলা ৩টা, বিকেল ৫টা ও সন্ধে ৭টায়। সাপ্তাহিক বন্ধ বুধবার। অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনেও বন্ধ থাকে। প্রদর্শনীর আগে কাউন্টার থেকে টিকেট বিক্রি করা হয়। আর কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য পরিচালক বরাবর আবেদন করা সাপেক্ষে অগ্রিম টিকেট বরাদ্দের ব্যবস্থা আছে।

অন্যান্য বিষয় : নভোথিয়েটারে রয়েছে ১৫০ আসনের অডিটোরিয়াম, ৫০ আসনের কনফারেন্স রুম, গাড়ি পার্কিং ও খালি জায়গা, যা সরকার নির্ধারিত হারে ভাড়া দেয়া হয়। তবে দু’বছরের কম বয়সী শিশু এবং বিশেষ অসুস্থ ব্যক্তিদের নভোথিয়েটারের প্রদর্শনী উপভোগ না করাই ভালো।


নভোথিয়েটারের মূল ভবনে প্রবেশের আগে আছে একটি ছোট্ট জলাশয়, সেখানে বিচিত্র মাছ সাঁতরে বেড়ায়। আপনি চাইলে ওই সব মাছকে  কিছুটা খাবার দিয়ে আসতে পারেন, মুগ্ধ হয়ে দেখতে পারেন তাদের খাবার গ্রহণের শৈল্পিক দৃশ্যও।

তথ্য ও যোগাযোগ : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান নভোথিয়েটার
               দূরভাষ: ৯১৩৮৮৭৮, ৯১৩৯৫৭৭, ৮১১০১৮৪, ৯১৩০০০৬
       
বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১৮৩০, জুলাই ১৩, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।