ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

বই পাগল সুমনের গল্প

গোলাম রসূল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০১৪
বই পাগল সুমনের গল্প ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: মো. সুমন। বয়স ২৭ কি ২৮ হবে।

থাকেন নবাবগঞ্জের হাজারীবাগ এলাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের সামনের রাস্তায় ফুটপাতে পুরানো বইয়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। শুধু একদিনের জন্য নয়। সব সময়ের জন্যই। কারণ এটাই যে তার পেশা।   

জানালেন এটা তার বাবার ব্যবসা। ১৮ বছর ধরে তার বাবা চারুকলা ইনস্টিটিউটের সামনের রাস্তার এই জায়গাটিতেই বসে ব্যবসা করেছেন। বাবার অনুপস্থিতে সুমন করছেন ১২/১৩ বছর ধরে।

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের মানবজমিন, পল্লী কবি জসিমউদ্দিনের সোজন বাদিয়ার ঘাট থেকে শুরু করে হিলারি ক্লিনটনের লিভিং হিষ্ট্রি, রুশ সাহিত্যিক লিও তলস্তয়ের ওয়ার অ্যান্ড পিস, নজরুলের সঞ্চিতা এবং হ্যারিপটার সিরিজের সর্বশেষ বইয়ের সমাহার সুমনের এই দোকান।   

আছে সাংবাদিকদের জন্য ড. মুসতাক আহমেদের টেলিভিশন সাংবাদিকতা এবং চলচ্চিত্র জগতের মানুষের জন্য গাস্তঁ রোবেজের সিনেমার কথাসহ নানা ধরনের বই।  

ধানমন্ডিতে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন সুমন। সেই সময়ে বাবার আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল। তারপর বাংলা মাধ্যমে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়া।

চেহারায় প্রচণ্ড ক্ষোভ ও আক্ষেপ নিয়ে তিনি বাংলানিউজকে জানালেন, শুধুমাত্র অর্থের অভাবেই পড়াশোনাটা বন্ধ হয়েছে।

সুমন আরো জানালেন, পুরাতন বই বিক্রি করে তার মোটামোটি চলে। কোনো দিন দুই থেকে তিন হাজার, আবার কোনো দিন এক হাজার টাকার বই বিক্রি করেন। বিয়ে করেছেন কি-না জানতে চাইলে ২৮ বছরের এ যুবা বলেন, বিয়ের বয়স হয়েছে তবে দোকানের আয় দিয়ে বিয়ে করার সাহস পাচ্ছি না।

সুমনের বইয়ের ক্রেতাদের বেশিরভাগই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সরকারি চাকরিজীবী বলে জানান তিনি। তাদের চাহিদার প্রতি খেয়াল রেখে সব লেখকের সব ধরনের বই-ই তিনি সংগ্রহ করেন ও বিক্রি করেন। তবে হুমায়ুন আহমেদ, জহির রায়হান ও ইংরেজি সাহিত্যের বই তুলনামূলকভাবে বেশি বিক্রি হয় বলে জানালেন, এ তরুণ ব্যবসায়ী।  
  
শুধু বই বিক্রি করেই সুমনের কাজ শেষ হয়ে যায় না। তারও মনের ক্ষুধা আছে। আর সে ক্ষুধা মেটানোর জন্য তিনি যখনই সুযোগ পান তখনই বই পড়েন। জানালেন ইতোমধ্যেই অনেক বই পড়ে ফেলেছেন তিনি।

বাংলানিউজের সঙ্গে যখন তার কথা হচ্ছিল তখনও তার হাতে ছিল সৈয়দ মুজতবা আলীর শ্রেষ্ঠ গল্প নামে একটি বই। জানালেন, আজকে এই বইটি পড়ে শেষ করবেন। প্রতিদিন কোনো না কোনো বই পড়া তার নেশা।  

দোকানে বই কিনতে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী মারিয়া ইসলাম ঝুঁমকো বাংলানিউজকে বলেন, সুমন ভাইয়ের দোকানে পুরাতন বইয়ের সংগ্রহ খুবই ভালো। তাই প্রায়ই আসি তার কাছে। এছাড়া যখনই কোনো দুর্লভ ও ব্যতিক্রমধর্মী বইয়ের প্রয়োজন পড়ে তখন সবার আগে মনে পড়ে সুমন ভাইয়ের কথা।

তাছাড়া, পছন্দের বই কম দামে কিনতে সুমন ভাইয়ের দোকান একটি আদর্শ স্থান বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

এ পৃথিবীতে অধিকাংশ মানুষের জীবন নিয়ে ভাবনা থাকে, থাকে স্বপ্ন। কিছু মানুষ আছে যাদের কোনো স্বপ্ন নেই, নেই ভবিষ্যত পরিকল্পনা। সুমনও স্বপ্নহীনদের দলে। জানালেন, জীবন নিয়ে তার কোনো ভাবনা নেই। চলছে, চলুক...।

বাংলাদেশ সময়: ১১১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।