ঢাকা, শনিবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২, ১০ মে ২০২৫, ১২ জিলকদ ১৪৪৬

ফিচার

চিত্রা পাড়ের জেলেরা এখনো ভোঁদড় দিয়ে মাছ ধরে!

ইমরান হোসেন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪:০৮, ডিসেম্বর ১, ২০১৪
চিত্রা পাড়ের জেলেরা এখনো ভোঁদড় দিয়ে মাছ ধরে! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

নড়াইল: একসময় জেলেদের মাছ ধরার মাধ্যমগুলোর মধ্যে ভোঁদড় ছিল অন্যতম। তবে কালের বিবর্তনে এ চিত্র আর দেখা যায় না।

তবে এখনও ভোদড় দিয়ে মাছ ধরে নড়াইলের চিত্রা পাড়ের জেলেরা!

নড়াইল সদরের কলোড়া ইউনিয়নের গ্রাম গোয়ালবাড়ি। এ গ্রামে অন্ততঃ ২শ জেলে পরিবারের বসবাস। এদের মধ্যে ২৬/২৭ পরিবারের জেলেরা ভিন্ন প্রক্রিয়ায় ভোঁদড় দিয়ে মাছ শিকার করে।

এরকম রতডাঙ্গা আর লস্করপুর গ্রামে আরো কয়েকটি জেলে পরিবার রয়েছে তারাও একইভাবে মাছ শিকার করে জীবনধারণ করছে।

প্রতিটি জেলে নৌকার একপ্রান্তে ভোঁদড়ের জন্য আলাদা করে ঘর বানানো থাকে। এই ঘরে রাতে ঘুমায় ভোঁদড়। মাছ ধরার সময় হলে ঘরের ডালা খুলে দিলেই লাফিয়ে পড়ে পানিতে তারপর মাছ শিকার করতে থাকে। ভোঁদড় (আঞ্চলিক ভাষায় ধাড়িয়া/ধেড়ে) মাছ শিকার করে খেতে পছন্দ করে। তাদের এই শিকারকে কাজে লাগায় এখানকার জেলেরা। ভোঁদড়ের মাছ শিকারের সুযোগ নিয়ে নৌকায় বাধা জাল নদীতে ফেলে দেয় জেলেরা। এরপর ভোঁদড় ছেড়ে দেওয়া হয়। আর ভোঁদড় পানিতে নেমে মাছ তাড়া করে খেতে গেলে সেই মাছ জেলেদের জালে এসে ধরা পড়ে। প্রতিদিন রাতে জেলেরা ভোঁদড় নিয়ে এভাবেই মাছ ধরতে বের হয়।

এভাবে প্রায় ২শ‘ বছর ধরে ভোঁদড়ের সাহায্যে মাছ শিকার করে আসছেন শচীন বিশ্বাস, গুরুপদ বিশ্বাস আর পাগল চান বিশ্বাসের মতো আরো কয়েকটি পরিবার।

প্রতিবছরই অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাসের বেশি সময় ধরে তারা ১০টি নৌকা আর ভোদড় নিয়ে নদীপথে পাড়ি জমান। মাছ ধরেন আর ঘাটে ঘাটে বিক্রি করেন। বছরের এই সময়ে ওই জেলেরা যা আয় করেন তা দিয়েই প্রায় সারা বছর চালাতে হয় তাদের সংসার। একসময় নদীতে বেশি পানি থাকায় সুন্দরবন পর্যন্ত চলে যেতেন চিত্রা পাড়ের এই জেলেরা।
 
ভোঁদড়ের প্রধান খাদ্য হলো মাছ, এছাড়াও এরা ব্যাঙও খেয়ে থাকে। প্রতিটি ভোঁদড় বছরে সাত/আট বার বাচ্চা প্রসব করে। এরা কমপক্ষ ১০ বছর বেঁচে থাকে। পূর্ণবয়স্ক একেকটি ভোঁদড়ের দাম সাত থেকে ১২ হাজার টাকা।

বাংলাদেশ সময়: ০৪০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।