ঢাকা, সোমবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

ফিচার

মাদকাসক্তি ঠেকাতে এগিয়ে আসতে হবে পরিবার-সমাজকেই

ফিচার ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ৬, ২০১৫
মাদকাসক্তি ঠেকাতে এগিয়ে আসতে হবে পরিবার-সমাজকেই

ঢাকা: মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। কিন্তু এ বিষয়ে আমরা কতটা সজাগ ও সচেতন? এ সম্পর্কে মাদকাসক্ত ব্যক্তির যেমন সচেতন হওয়া জরুরি, তেমনি তার পরিবার ও বন্ধুদের উচিত, আসক্ত ব্যক্তিকে উপেক্ষা বা বর্জন না করে সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করা।



যখন কেউ ধীরে ধীরে মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়েন, তখন তার দৈনন্দিন কাজ ও পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটে। বিভিন্ন সম্পর্কের মধ্যে ধরে চির। মানুষটি তখন হয়ে পড়ে একা, অসহায় ও নিজের কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত। সমাজ থেকে ক্রমেই নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে শুরু করেন। অন্ধকারে ডুবে যেতে থাকেন তিনি।

শুরুটা যেখানে
আমাদের দেশে বেশিরভাগ সময় কৌতুহল থেকে মানুষ ড্রাগের দিকে পা বাড়ান। হঠাৎ কোনো উৎসবে চেখে দেখার মতো ব্যাপার। কখনওবা হাতেখড়ি হয় মাদকাসক্ত বন্ধুর কাছ থেকে। ড্রাগ সেবনের পেছনে সাধারণ ধারণা, এটি কষ্ট ও দুশ্চিন্তা দূর করে এবং তাৎক্ষণিক আনন্দ পাওয়া যায়।

অনেকে বিষণ্ণতা থেকে মুক্তির জন্য ড্রাগ নিতে শুরু করেন। প্রাথমিকভাবে বিষণ্ণতা দূর করতে ড্রাগ নিলেও পরবর্তীতে তা অভ্যাসে পরিণত হয়। যার ফলাফল আসক্তি। মাদক ব্যবহার ও আসক্তি দু’টোর মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। তবে দুটোর ফলাফলই ভয়াবহতার দিকে অগ্রসর হয়।

ব্যক্তি কখন মাদকাসক্ত হন
অন্য অসুখের মতো মাদকাসক্তির কারণও ব্যক্তিভেদে আলাদা। এর মধ্যে সাধারণ কিছু কারণ হচ্ছে- জিনগত, মানসিক স্বাস্থ্য ও সামাজিক পরিবেশ।

মাদকাসক্তির উল্লেখ্য বিষয়সমূহ
•    পরিবারের কেউ মাদকাসক্ত হলে
•    ছোটবেলা থেকে খারাপ ব্যবহার, অবহেলা ও আঘাতমূলক অভিজ্ঞতা, মেন্টাল ডিসঅর্ডার যেমন- ডিপ্রেশন ও এনজাইটি।
•    ব্যক্তিগত ও পারিপার্শ্বিক সমস্যা সমাধানে উপযুক্ত সাহায্য বা সমাধান না পেলে।

এগিয়ে আসতে হবে পরিবার, বন্ধু ও সমাজের
মাদক সেবন থেকে প্রিয়জনদের বিরত রাখতে পরিবার, বন্ধু ও সমাজের গুরুত্বপূর্ণ কিছু দায়িত্ব রয়েছে। একটি কথা মনে রাখা জরুরি, আপনার  অবহেলা বা অবজ্ঞা একটি জীবনকে ধ্বংস করে দিতে পারে। আমাদের দেশে মাদক সেবনকারীদের থেকে মানুষ গা বাঁচিয়ে চলেন। হয়তো ভাবছেন, একজন মাদকসেবনকারী বন্ধুর কবলে পড়ে আপনার সন্তানও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে দূরে সরে না গিয়ে সবাইকে নিয়ে আপনিও সতর্কতার সঙ্গেই এগিয়ে আসুন। ভাবুন, হয়তো আপনার ও আপনার সন্তানের সৎ সহচর্যে বিপদগামী আরেকটি জীবন নতুন ভোরের আলো দেখবে।

করণীয়
প্রিয়জনের মধ্যে কেউ মাদকাসক্ত হলে অপনার কী করণীয় তা একবার ভাবুন। মনে রাখবেন, সব সমস্যারই সমাধান রয়েছে। মাদকাসক্তি থেকেও পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব। তবে কোনো সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে আগে সমস্যাকে বুঝতে হবে। জানতে হবে এর কারণ, বর্তমান পরিস্থিতি, ফলাফল ও বিকল্প। তাহলেই পরিত্রাণের পথ উন্মুক্ত হবে।

আশার দুয়ার
•    বিশ্বাস করাতে চেষ্টা করুন ও আসক্ত ব্যক্তিকে বোঝান, মাদক থেকে উঠে আসতে প্রয়োজন শুধুমাত্র একটি সৎ ইচ্ছা। যদি সত্যিই কেউ তা বর্জন করতে চান তা সম্ভব।
•    বিশেষজ্ঞদের মতে, মাদকাসক্তি একটি ব্রেইন ডিজিজ। তার অর্থ এই না, আপনি অসহায়। উপযুক্ত থেরাপি, ওষুধ, চিকিৎসা ও পরিস্থিতি পরিবর্তণ করে এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।
•    যেকোনো আসক্তি শুরুতেই নিরাময় করা ভালো। কারণ, আসক্তি ক্রমে শক্তিশালী হয়ে পড়লে তা নিরাময় করা অনেক সময়সাধ্য ব্যাপার।
•    মাদক ছাড়তে আসক্ত ব্যক্তিকে চাপ প্রয়োগ করবেন না। এভাবে আসক্তি দূর করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে ব্যক্তির নিজের ইচ্ছে থাকাটা যেমন জরুরি, তেমনি শুভাকাঙ্ক্ষিদের সহানুভূতি থাকতে হবে ও সমস্যা সমাধানে বিকল্প উপায়গুলোর কথা জানান দিতে হবে।
•    মাদকাসক্তি নিরাময় একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। চিকিৎসার সময় অনেকের ক্ষেত্রে অবস্থার অবনতি হতে পারে। কিন্তু তার মানে এই নয়, তিনি কখনও সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন না। এ চিকিৎসা খাপ খাওয়াতে কিছু সময় প্রয়োজন। এজন্য আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে। পাশে থাকতে হবে প্রিয় মানুষটির।   


যখন বুঝতে পারবেন, পাশের মানুষটি মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছেন, তখন তাকে দোষারোপ করবেন না। তাকে বোঝান, মাদক কোনো সমস্যা সমাধানের পথ হতে পারে না। বিকল্প সুন্দর পথ দেখাতে তার হাতটি ধরুন। তাকে অন্ধকার থেকে এগিয়ে নিয়ে যান আলোর পথে। তবেই হবে আপনার, সমাজের ও দেশের সাফল্য।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৫
এসএমএন/এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।