ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

বিলের মাছ নেই চলনবিলের বাজারে (ভিডিওসহ)

আসিফ আজিজ ও শুভ্রনীল সাগর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৬
বিলের মাছ নেই চলনবিলের বাজারে (ভিডিওসহ) ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চলনবিল, নাটোর থেকে ফিরে: চলনবিলাঞ্চলে পা রাখার আগ থেকেই বিলের টাটকা মাছ খাওয়ার উত্তেজনা ছিলো। হালতি বিলের খোলাবাড়িয়া গ্রামে ঢুকেই দহ বা কুনিতে ট্যাংরা, পুঁটি ধরা দেখে অবস্থা হলো আগুনে ঘি দেওয়ার মতো।

এরইমধ্যে সন্ধ্যায় পাশের ছোট্ট বাজারটিতে কোনো মাছ দেখতে না পেরে মন খারাপ।

রাতে ভুট্টো ভাই পোলাও-মাংসের ব্যবস্থা করেছেন। বিলে চরা হাঁসের মাংসের গন্ধে ভুরভুর করছে খাওয়ার খবর। মাছও এলো দু’রকম। কিন্তু বহু কাঙ্ক্ষিত বিলের ছোট মাছ কই! হয়তো চোখের ভাবগতি দেখে বুঝলেন, কী খুঁজছি। তাই বলেই ফেললেন, বাজারে যায়ে কুনো মাচ পাইনি। বিলের মাছ বাজারেত পাওয়া কটিন। সোব বাইরে চ’লে যায়। তাই বাদ্য হয়ে এই সিলভার কার্প কিনলাম।

বিলের মাছ না খাওয়াতে পেরে কিছুটা অনুশোচনাও করলেন। পরের দিন সকালেও ঘণ্টা ধরে শোল, বোয়াল, পুঁটি, ট্যাংরা, গচি মাছ ধরা দেখলাম। জানা গেলো, সব মাছই চলে যাবে আড়তে। দামও তারা পাবেন চড়া।

দুপুর নাগাদ পৌঁছুলাম চলনবিলে। বিলের বুক ফেঁড়ে যাওয়া ডুবো সড়ক দিয়ে ১০ গ্রাম পেরিয়ে রাস্তার পাশের একটি বাজার দেখে থামলো আমাদের বাহন। এর কিছুক্ষণ আগেই কুনিতে মাছ ধরা দেখে থেমেছিলাম আরও একবার।

কাদা মেখে মাছ ধরছিলেন রনি আর মোসলেম। কুনির পাশে একটি অস্থায়ী তাঁবু বানানো। কিনারে গর্ত করে পলিথিন দিয়ে পানির মধ্যে মাছ জিইয়ে রাখা। এরমধ্যে শোল ও টাকিই বেশি।

পাশের বালতিতে শিং, মাগুর। আর ঝাঁপির মধ্যে কাকিলা, ট্যাংরা, গচি, পুঁটি, খলিসা প্রভৃতি মাছ। তখনও মাছ ধরা শেষ হয়নি। তারা দু’জন ক্লান্ত হয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। একজন ছিলেন কাদাপানিতে।

মাছের দাম এবং কোথায় বিক্রি হবে জানতে চাইলে মোসলেম বলেন, আজ পুনেরো (১৫) হাজার টাকার মুতোন বিক্কিরি হবি। কয়দিন ধরেই বিক্কিরি করিচ্চি। সিংড়্যা আড়তেত নিয়ে বিক্কিরি করি। তারপর সেটি থেকে বিভিন্ন জাগাত চলে যায়।

জ্যান্ত মাছের লাফালাফি কিছুক্ষণ উপভোগ করে কিলোমিটারখানেক দূরের ডাহিয়া বাজারে থেমেও একই অভিজ্ঞতা হলো। টাটকা সব সবজির বাজারে মাছের বড়ই ‍আকাল। তিন চারজন বিক্রেতা চাষের তেলাপিয়া, পাঙ্গাস আর সিলভার কার্প মাছ নিয়ে বসে আছেন। অথচ একটু দূরেই ধরা হচ্ছে দেশি সব মাছ।
 
বিক্রেতারা বলেন, কী করবো ভাই, আমরা তো পাই না। বেশি দাম দিয়ে পাইকাররা কিনে লিয়ে শহরেতে যায়। ঢাকাতও যায় মাচ। আর বেশি দাম দিয়ে কিনে আমরা তো বেশি দামেত বেঁচতে পারি না।

দেশি স্বাদু পানির মাছের সবচেয়ে বড় উৎস চলনবিলের বাজারে বিলের মাছ দেখতে না পাওয়া এবং খেতে না পারা হতাশারই বটে।

বিল থেকে শহরে ফেরার পথে সিংড়া বাজারের নেমে হোটেলে বিলের মাছ খাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় নামা হলো। কিন্তু বিধি বাম! এখানকার কোনো হোটেলেও মিলনো না কোনো ছোট মাছ। এমনি বোয়ালও না।
 
হতাশ হয়ে না খেয়ে নাটোর শহরে গিয়ে মন ভরলো। ট্যাংরা, পুঁটি, গচি, মলা, শিং, বেলে- সব মাছই আছে শহরের হোটেলে। অথচ বিল ও এর আশপাশের কোনো জায়গায় দেখা মেলে না চলনবিলের মাছ।

এই বিল যাদের প্রাণ, বেঁচে থাকার অবলম্বন তাদের কপালে ঠিকমতো জোটে না বিলের সুস্বাদু মাছ। শহরের বাজারে বেশি দাম পাওয়া যায়। তাই মাছ ধরে কেউ নিজের বাজারে বিক্রি করতে চায় না। ‍আবার বিক্রেতারা কিনে বেশি দামে এলাকার মানুষের কাছে বিক্রিও করতে পারে না। তাই চলনবিলের মাছ খাওয়ার জন্য প্রধান ভরসা শহরের হোটেলগুলোই।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৬
এসএস/এএ/এটি

** চলনবিলে হাঁস পুষে লাখপতি (ভিডিওসহ)
** হালতি বিলে দাগ কেটে ক্রিকেট, ধুমছে খেলা (ভিডিওসহ)

** ভাসমান স্কুলে হাতেখড়ি, দ্বীপস্কুলে পড়াশোনা
** দত্তপাড়ার মিষ্টি পান ঠোঁট রাঙাচ্ছে সৌদিতে
** একফসলি জমিতেই ভাত-কাপড়
** লাল ইটের দ্বীপগ্রাম (ভিডিওসহ)
** চলনবিলের শুটকিতে নারীর হাতের জাদু
** ‘পাকিস্তানিরাও সালাম দিতে বাধ্য হতো’
** মহিষের পিঠে নাটোর!
** চাঁপাইয়ের কালাই রুটিতে বুঁদ নাটোর
** উষ্ণতম লালপুরে শীতে কাবু পশু-পাখিও!
** পানি নেই মিনি কক্সবাজারে!
** টিনের চালে বৃষ্টি নুপুর (অডিওসহ)
** চলনবিলের রোদচকচকে মাছ শিকার (ভিডিওসহ)
** ঘরে সিরিয়াল, বাজারে তুমুল আড্ডা
** বৃষ্টিতে কনকনে শীত, প্যান্ট-লুঙ্গি একসঙ্গে!
** ভরদুপুরে কাকভোর!
** ডুবো রাস্তায় চৌচির হালতি
** হঠাৎ বৃষ্টিতে শীতের দাপট
** ঝুড়ি পাতলেই টেংরা-পুঁটি (ভিডিওসহ)
** শহীদ সাগরে আজও রক্তের চোরা স্রোত
** ‘অলৌকিক’ কুয়া, বট ও নারিকেল গাছের গল্প
** মানবতার ভাববিশ্বে পরিভ্রমণ
** সুধীরের সন্দেশ-ছানার জিলাপির টানে
** নতুন বইয়ে নতুন উদ্যম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।