ঢাকা: দক্ষিণ কলকাতার জনপ্রিয় রোল জায়ান্টগুলোর মধ্যে একটি কাম্পারি। বালিগঞ্জের রাসবিহারি এভিনিউয়ের এ রেস্তোরাঁয় পাওয়া যায় কঠিরোল।
চলুন জেনে নেওয়া যাক জনপ্রিয় এ খাবারটির পেছনের কিছু গল্প।
কাঠি রোল তৈরির শিল্প
কাঠিরোল প্রথম তৈরি হয় ১৯৩০ সালে। কলকাতার হগস স্ট্রিটে নিউ মার্কেটের কাছে নিজামস রেস্টুরেন্ট কাঠিরোলের রেসিপি প্রথম উদ্ভাবন করেছে বলে মনে করা হয়। সেসময় ভাজা মাংস কাঠিতে গেঁথে পরোটায় জড়িয়ে দেওয়া হতো। ভাজার সময় লোহার শিকে মাংস গেঁথে রোস্ট করা হতো। এরপর অবশ্য লোহার শিকের পরিবর্তে বাঁশের কাঠিতে মাংস গেঁথে রোস্ট করার প্রচলন শুরু হয়। খুব দ্রুত এ রোলের নাম হয়ে যায় কাঠিরোল।
কাঠিরোলের আইডিয়া নিজামস থেকে এলেও সত্তরের দশকের মাঝামাঝিতে সেরা রোলের সাম্রাজ্যে নিজামসের একচেটিয়া অাধিপত্য হ্রাস পায়। তখন দাবানলের মতো এই স্ন্যাকটি স্থানীয় অন্য রেস্তোরাঁর হেঁশেলেও তৈরি হতে থাকে।
কাঠিরোলের পরোটা তৈরির একটা বিশেষ কৌশল রয়েছে। এ পরোটা পুরু ও মচমচে হবে কিন্তু বেশি বাদামি হবে না। কাঠিতে লাগানো মাংস জড়িয়ে নেওয়ার সময় ভেঙে না যায় এভাবেই পরোটা তৈরি হয়।
বড় তাওয়াতে এই পরোটা দু’বার ভাজা হয়। প্রথমে তা শুকনো এপিঠ-ওপিঠ করে ও পরে তেলে ভাজা হয়।
পরোটা তৈরির পর এবার পুর তৈরির পালা। লোহার শিকে মাংস রোস্ট করার পর তা গরম তেলে অারেকবার দ্রুত ফ্রাই করে পেঁয়াজ দিয়ে এপিঠ-ওপিঠ করে ভেজে নেওয়া হয়। কোনো কোনো রেস্তোরাঁয় ক্যাপসিকাম ব্যবহার করা হয়। এবার পরোটার ভেতরে রেখে কাঁচামরিচ কুচি, আমচুর (ম্যাঙ্গো পাউডার) ছড়িয়ে রোল করে পেপারে পেঁচিয়ে নিলেই কাঠিরোল তৈরি।
কাঠি রোলের আনুষঙ্গিক মসলা স্থান ও রেস্তোরাঁভেদে ভিন্ন হতে পারে।
অনেক জায়গায় ডিমের রোল পাওয়া যায়। তবে কাঠিরোলে ডিমের ব্যবহার এসেছে অনেক পরে। মাংসপ্রেমীদের প্রিয় তালিকায় থাকলেও বর্তমানে কাঠিরোল কেবলই মাংসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এখন কাঠিরোলের পুর হিসেবে মাংস ছাড়াও থাকে পটেটো ফিলিং, পনির ও সবজির পুর। যারা একেবারেই হালকা খেতে চান তাদের জন্য প্লেইন এগ রোলের অপশন রয়েছে।
কলকাতায় কাঠিরোলের সন্ধান
কলকাতার গড়িয়াহাট রাস বিহারি এভিনিউয়ের বেদুঈন রেস্তোরাঁর কাঠিরোলের সুনাম রয়েছে। রোলের উপকরণে যদিও চিরাচরিত ঘি, তেল, ভাজা মাংস ছাড়া ব্যতিক্রমী কিছু নেই, তবুও এখানকার রোল অনেক বিখ্যাত বলেই লোকে জানে।
এছাড়াও পার্ক স্ট্রিটের পার্ক হোটেল থেকে কয়েক মিনিট দূরত্বে অবস্থিত কুসুম স্ন্যাক বারেও কাঠিরোল পাওয়া যায়। এখানে ভোজনরসিকদের পছন্দমতো অর্ডারে রোল বানিয়ে দেওয়া হয়। সস ছাড়া, ক্যাপসিকাম ছাড়া, বেশি পেঁয়াজ বা যে যেভাবে খেতে চান অর্ডার করেন। মেন্যুতে আরও রয়েছে সিঙ্গেল এগ অ্যান্ড ডাবল মাটন রোল, ডাবল এগ অ্যান্ড সিঙ্গেল মাটন রোল ও ডবল এগ অ্যান্ড ডাবল মাটন রোল।
কাঠিরোলের আরেকটি হটস্পট হচ্ছে ধর্মতলা, পার্ক স্ট্রিট স্যার উইলিয়াম জোনস সরণির গোল্ডেন স্পুন রেস্তোরাঁ। যারা ভেজিটেরিয়ান ও ননভেজিটেরিয়ান নিয়ে উভয়সঙ্কটে রয়েছেন, তাদের জন্য এখানে রয়েছে এগ পনির রোল।
ডায়ামন্ড হার্বার রোডের জিশান কলকাতার অন্যতম জনপ্রিয় রেস্তোরাঁ। এর সাতটি শাখা রয়েছে। পাওয়া যায় মাটন রেজালা, রুমালি রুটি আর এগ মাটন রোল। এখানকার মগজ ও ডিমের রোল একবার চেখে না দেখলেই নয়।
অন্যদিকে ডবল এগ চিকেন কাঠিরোলের জন্য শেক্সপিয়র সরণির পরিজাতের সুনাম রয়েছে। ভিন্নতার সন্ধানে যেতে পারেন নিউ আলিপুর। এখানে এগ চিকেন পটেটো রোল পাওয়া যায়। এটি অবশ্য অনেক পরে এসেছে। হিন্দুস্থান পার্কের আজাদ হিন্দ ধাবার কথা না বললেই নয়। এখানে পাওয়া যায় মজাদার চিকেন শিক রোল।
ব্র্যান্ডেড কাঠিরোলের কথা যদি বাদ দেই তবে বলা যায় কাঠি রোল কলকাতার রাস্তা ও সরু অলিগলিতে অহরহই পাওয়া যায়। আপনি যদি ইলিয়ট রোড বা নিউ মার্কেটের পেছনের গলি ধরে হাঁটতে থাকেন তাহলে কম করে হলেও দু’টি করে রোলের দোকান পেয়ে যাবেন। শুরুতে নিজামসের কথা বলা হয়েছিলো, তা দিয়েই শেষ হোক- নিজামসে আরও রয়েছে ক্ষীরি রোল। যার পুর তৈরি হয় ভেড়া বা খাসির মিরিনেটেড বাঁট (udders) দিয়ে।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৬
এসএমএন/এএ