ফেনী থেকে: এক সময়ে ফেনীর দোর্দণ্ড দাপটের আওয়ামী লীগ নেতা জয়নাল হাজারির বাড়ি এখন পরিত্যক্ত বিরান ভূমি! জনমানব শুন্য নিরবে দাঁড়িয়ে রয়েছে জয়নাল হাজারির ফেনীর মাস্টার পাড়ার বিশাল এ বাড়িটি।
এক সময় যে বাড়িকে ঘিরে ছিলো বিশাল কর্মযজ্ঞ।
বাড়ির বারান্দায় পড়ে থাকা আসবাব পত্রগুলোতেও ফুটে উঠেছে পরিত্যক্ততার ছাপ। দেয়ালের ইটে ধরেছে শেওলা, অযত্নে পড়ে আছে দামী ভাষ্কর্যগুলোও। লতা গুল্মের আচ্ছাধনে তৈরি হয়েছে এক ধরনের ভুতুড়ে পরিবেশ।
নিরাপত্তা হুমকির কারণে জয়নাল হাজারী দীর্ঘদিন আসেন না ফেনীতে। মাঝে মধ্যে এলেও ফেনীর মানুষের কাছে জানা যায় তার আসা-যাওয়া হয় নিরবে, নির্ভৃতে।
জয়নাল হাজারির বাড়ির পাশে থাকেন মিহির লাল নামের এক ব্যক্তি। তিনি ওই বাড়ির দেখা শোনা করেন। তিনি জানান, হাজারী মাঝে মধ্যে আসেন, এই তো মাস তিনেক আগে এসেছিলেন একবার। তবে এ বাড়ির সামনের স্টেশনারী দোকানদার রাজু জানান, জয়নাল হাজারী আসেন না অনেকদিন। তাকে আসতে দেখি না।
এক সময়ের আলোচিত-সমালোচিত জয়নাল হাজারী ফেনী-দাগনভূঁঞা আসনের ৩ বার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিগত ১৯৯৬ মেয়াদের আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের ফলে বরাবরই দেশে-বিদেশে আলোচিত-সমালোচিত ছিলেন এ ব্যক্তি। আর এ বিতর্কিত কর্মকাণ্ড শুরু হয় তার গড়া ক্লাস কমিটি নিয়ে।
এক সময়ের ফেনীর আলোচিত টাইগার বাহিনীর বিপরীতে তিনি ১৯৯৩ সালে গঠন করেন স্টিয়ারিং কমিটি। পরে ১৯৯৬ সালে তার নাম পরিবর্তন করে ক্লাস কমিটি রাখেন।
জেলার ৪৩টি ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে এসব কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্য প্রায় ৫ হাজার ছিলো বলে জানা যায়। এ ক্লাস কমিটি এক সময় ফেনীর মানুষের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠে।
যে টাইগার বাহিনীর বিপরীতে তিনি এ কমিটি গঠন করেন সেই টাইগার বাহিনীর প্রধান হাজী আলাউদ্দিন এখন আওয়ামী লীগে ভালই আছেন। কিন্তু ভাল নেই জয়নাল হাজারি।
২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর আত্মগোপনে চলে যান জয়নাল হাজারী। এরপর বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তিনি ফেনীতে আর ফিরে আসতে পারেনি। ২২ মামলার আসামি হয়ে দীর্ঘদিন তিনি আত্মগোপনে দেশের বাইরে থাকেন।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশে ফেরেন তিনি। তার বিরুদ্ধে মামলা থাকায় দীর্ঘদিন জেলও খাটতে হয়।
জামিনে বের হওয়ার পর ফেনী আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আগের সেই জায়গা আর ফিরে পাননি তিনি।
বাংলাদেশ সময় ০৭৫৫ ঘন্টা, মার্চ ১২, ২০১৬
এসকে/আরএ