ঢাকা: পথের শিশুদের ঘরের শিশু হিসেবে দেখার আহ্বানের মধ্য দিয়ে সারাদেশেই পালিত হল জাতীয় শিশু দিবস। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস ঘিরে সচেতন মানুষের এ প্রত্যাশাও ফুটে উঠেছে।
আশার কথা, বর্তমান সরকার পথের শিশুদের ঘরের শিশু হিসেবে দেখতে চায়। পথশিশু ও বস্তির শিশুদের আর্থিক সচ্ছলতায় গড়ে তলতে চায়। সুবিধা বঞ্চিত প্রতিটি শিশুকে আর্থিক সচ্ছল করতে দায় এখন সরকারেরই সব চেয়ে বেশি। আর তাই বিগত সময় শিশুদের কল্যাণে বিভিন্ন পদক্ষেপও নিয়েছে সরকার।
২০২১ সালে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে তথা সরকারের রূপকল্প বাস্তবায়নে এ দায় বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিটি শিশু সচ্ছল না হলে সরকারের রূপকল্প যেমন বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে, তেমনি ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের তালিকায় বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে।
সরকারের এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শ্রমজীবী শিশুদের কল্যাণে জাতিসংঘের ‘শিশু অধিকার ও ব্যবসায় নীতিমালা’য় (সিআরপিবি) ২০১৩ সালে স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। এরই ধারাবাহিকতায় পথশিশুসহ সুবিধা বঞ্চিত শ্রমজীবী শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকারের সময় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় শিশুদের জন্য জাতীয় সামজিক দায়বদ্ধতা নীতি-২০১৫, খসড়াও তৈরি করেছে। যদিও এর আগে প্রাতিষ্ঠানিক নানা উদ্যোগ সরকারের রয়েছে।
সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ‘আনন্দ’ স্কুল, ‘টুনটুনির পাঠশালা’ করে বেশ কিছু শিশুকে আলোর মুখ দেখানো কিছু উদ্যোগে দৃষ্টান্ত তৈরি হয়েছে, তা খুবই সীমিত। আর বিত্তবানরা সেভাবে এগিয়ে আসেননি শিশুদের কল্যাণে। উপরন্তু সচেতনতার অভাবে শিশুরাই বিভিন্ন সময় নিগৃহীতই হচ্ছে। তাই শিশুদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থাগুলোর দাবি পথ শিশুদের ঘরের শিশু হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করতে প্রধান দায়িত্ব পালন করতে হবে সরকারকেই।
শ্রম ও কর্মসংস্থান, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে জানা গেছে, শিশুদের উন্নয়নে সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২০২১ সালে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত দেখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্যোগ নেন শিশুদের শিক্ষা ও শিশুদের আর্থিভাবে সক্ষমতা তৈরি করতে।
এ লক্ষে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় পথশিশুদের শিক্ষার আলো পৌঁছুতে পদক্ষেপ নিয়েছে আগে থেকেই। বস্তি ও ফুটপাতের শিশুদের শিক্ষিত করে তুলতে বিভিন্ন প্রকল্পও হাতে নেওয়া হয়েছে। আর এসব শিশুকে আর্থিকভাবে সচ্ছল করে তুলতে ‘শিশুদের জন্য জাতীয় সামজিক দায়বদ্ধতা নীতির খসড়া প্রস্তুত করেছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
রূপকল্প বাস্তবায়নে সরকার সরাসরি বিভিন্ন পদক্ষেপের পাশপাশি সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষাদান কর্মসূচি চলছে নানাভাবেই।
শিশুদের জন্য জাতীয় সামজিক দায়বদ্ধতা নীতির খসড়ায় বলা হয়, ১৯৭৪ সালের শিশু আইন ২০১৩ সালে সংশোধন করা হয়েছে। সংশোধিত আইন অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সীরা সবাই শিশু। শিশু ও শ্রমিকদের কল্যাণে ২০০৬ সালের শ্রম আইন ২০১৩ সালে সংশোধন করা হয়েছে। এছাড়া জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি-২০১০, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতি-২০১১ এবং জাতীয় শ্রম নীতি-২০১২ পাস করা হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতায় শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছে।
খসড়ায় আরো বলা হয়, বর্তমান সরকারের রূপকল্প বাস্তবায়নে এখন একটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে পথ শিশু ও বস্তির শিশুদের সার্বিক উন্নয়ন। এ কারণেই সরকারের নতুন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ পথশিশুসহ সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের জন্য শিশুদের জন্য জাতীয় সামজিক দায়বদ্ধতা নীতি-২০১৫ খসড়া চুড়ান্ত করা।
এতো কিছুর পরেও জাতির জনকের জন্মদিনে শিশুদের কল্যাণের দাবিটি ছিল জোরালো। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা এসব দাবিতে ছিল সোচ্চার। বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ) সভাপতি কবীর চৌধুরী তন্ময় সরকারের প্রতি পথ শিশুদের ঘরের শিশু করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, পথের শিশুকে ঘরের শিশু হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৫২ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৬
এসএমএ/জেডএম