পাথরঘাটা (বরগুনা): পূর্বদিকে বয়ে গেছে বিষখালী নদী। দক্ষিণে কয়েক কিলোমিটার এগুলেই বিশাল বিস্তৃত জলরাশির বঙ্গোপসাগর।
এককালের প্রত্যন্ত-দুর্গম জনপদ পাথরঘাটা। কালের বিবর্তনে এখন প্রশাসনিক থানা থেকে পৌরসভা ও উপজেলায় উন্নীত হয়েছে। লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। প্রত্যেকটি অঞ্চলের কোনো না কোনো ঐতিহাসিক নির্মাণ স্মৃতিস্তম্ভ, স্মৃতিসৌধ কিংবা যে কোনো ধরনের স্থাপনা থাকে। যে বিষয়টি বছরের পর বছর কিংবা যুগযুগ ধরে ওই অঞ্চলের মানুষকে জাগরিত করে। ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাক্ষ্যবহন করে।
তেমনি একটি স্থাপনা বা স্মৃতিস্তম্ভ পাথরঘাটার খাসচারী ময়দান। পাথরঘাটা গৌরবোজ্জল ইতিহাসের পাতায় চিরভাস্বর এ খাসচারীর স্মৃতিস্তম্ভ। একাত্তরের গণহত্যার চরম এক সাক্ষ্য নিয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী স্মৃতিস্তম্ভটি।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিহানাদার বাহিনী এবং তাদের এ দেশীয় দোসরদের বুলেটের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে শাহাদাৎ বরণকারী বঙ্গ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে ১৯৭৫ সালের ২৫ আগস্ট এখানে স্মৃতিস্তম্ভটি আনুষ্ঠানিকভাবে উম্মোচন করেন তৎকালীন বরগুনা মহকুমা প্রশাসক সিরাজউদ্দিন আহমেদ।
প্রতি বছর জাতীয় দিবস এলেই কেবল ফুলের মালা দিয়ে শহীদদের স্মরণ করেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়। কিন্তু শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভটি রক্ষণাবেক্ষণ কিংবা সংরক্ষণের দায়িত্ব নিতে কাউকেই দেখা যায়নি। অথচ এ স্মৃতিস্তম্ভটি ইতিহাসের সাক্ষী। এ স্মৃতিস্তম্ভকে অনেকেই পুঁজি করে রাজনীতির বক্তৃতা, সভা-সমাবেশ করছেন।
যাদের রক্তঋণ বহন করছে এ স্মৃতিস্তম্ভ
শহীদ আতিকুল্লাহ (সার্কেল অফিসার রাজস্ব), শহীদ এএসআই আবদুল মজিদ, শহীদ শাহজাহান, শহীদ আলো, শহীদ কনক, শহীদ দিলীপ, শহীদ লক্ষণদাসহ পাথরঘাটা থানার নাম না জানা অন্য সব শহীদের স্মরণে ১৯৭৫ সালের ২৫ আগস্ট এ স্তম্ভটির আনুষ্ঠানিক উম্মোচনের পর থেকেই দাঁড়িয়ে রয়েছে স্বাধীনতার সাক্ষী। সেই থেকেই এখানে সব ধরনের সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
পাথরঘাটার সব রাজনৈতিক দলের সভামঞ্চ ওই একই স্থানে, সরকারি পর্যায়ের কোনো অনুষ্ঠান হলেও ওই খাসকাচারী স্মৃতিস্তম্ভের পাদদেশেই তা অনুষ্ঠিত হয়। এভাবে নাটক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ সবধরনের সরকারি-বেসরকারি অনুষ্ঠানকে ঘিরে খাসকাচারী ময়দানের গুরুত্ব বেড়ে গেছে। পরিচিতি পেয়েছে উপকূলের ঐতিহাসিক স্থাপনা বা স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে। এ স্মৃতিস্তম্ভটি মানুষের মধ্যে গুরুত্ব পেলেও আজ তা অবহেলায় পড়ে রয়েছে।
স্মৃতিস্তম্ভটি বাঘার খানা
স্মৃতিস্তম্ভটি ঢেলে সাজানো তো দূরের কথা রক্ষণাবেক্ষণ না করার কারণে এখানে-সেখানে ভেড়া আর ছাগলের বসত ঘর, সব সময়ই ভেড়া, ছাগল ও ফুটপাতের দোকানের আসর বসে এখানে। স্মৃতিস্তম্ভটি পাথরঘাটার কেন্দ্রীয় স্তম্ভ হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছে এবং পাথরঘাটার মানুষ সেভাবে এটিকে দেখছে।
সু-নজর নেই কারোর-ই
যাদের স্মরণে স্মৃতি স্তম্ভটি নির্মাণ করা হয়েছে তাদের নিয়ে কেউ ভাবে না, কথা বলে না। অবহেলা আর অযত্নের কারণে আজ সেই ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভটি জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ছায়া দেওয়ার মতো একটি মাত্র রেইনট্রি গাছ, তাও আজ মৃত্যপ্রায়। সরকার আসে সরকার যায়, পাথরঘাটার অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু পরিবর্তন হয়নি স্বাধীনতার একমাত্র চিহ্ন এ স্মৃতিস্তম্ভটির। এটাকে রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য কেউ-ই মাথা ঘামাচ্ছে না।
তবে পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রিপন বাংলানিউজকে বলেন, ১৯৭৫ সালের পরে এ পর্যন্ত স্বাধীনতার সাক্ষী স্মৃতিস্তম্ভটিকে কেউ রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা নেয়নি। ওই স্তম্ভটিকে আধুনিকায়নের জন্য ইতোমধ্যেই মহাপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তাতে প্রায় ২৫ লাখ টাকা ব্যয় হবে। খুবই শিগগিরই এটি বাস্তবায়ন হবে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০১৬
এসএইচ/জেডএম