রংপুর: একাত্তরে কী যেন এক রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেই রোগ অভিশাপ হয়ে কেড়ে নিয়েছে তার দৃষ্টিশক্তি।
বংশীবাদক এই জীবিকা সংগ্রামীর নাম রাজকুমার। রংপুর মহানগরের পীরজাদা এলাকায় বসবাস তার। সম্প্রতি রংপুর টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সামনে একটি চায়ের দোকানে দেখা হয় রাজকুমারের সঙ্গে।
আলাপে জানা যায়, রাজকুমার পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। একাত্তরে দেশের স্বাধীনতার জন্য যখন চূড়ান্ত আন্দোলন চলছিল, ঠিক তখনই শুরু হয় চোখের মহামারী রোগ। তাতে আক্রান্ত হন রাজকুমারও। এই রোগের চিকিৎসা করার মতো তার বাবার সামর্থ্য ছিলো না বলে চিরতরে আলো হারিয়ে ফেলেন রাজকুমার।
পরে বাবার ইচ্ছে পূরণে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। সেই সংসারে জন্ম নেয় এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে জয়ন্ত রায় (১৮) এখন পড়ছেন রংপুর কারমাইকেল কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে। আর মেয়ে অনামিকা রায় (১৬) পড়ছেন নার্সিং কলেজে। এই সংসার টানতে আর ছেলে মেয়েকে পড়াশোনা করাতে ২১ বছর ধরে রংপুরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ঘুরে বেড়াচ্ছেন রাজকুমার। বাঁশিওয়ালা এই রাজকুমারকে চেনে রংপুর নগরীর লালকুঠির মোড়, মুন্সিপাড়া, জুন্মাপাড়া, কাচারীবাজার, ধাপ, টার্মিনাল এলাকার সব মানুষ। এই বাঁশি বাজিয়ে তিনি মানুষকে আনন্দিত করেন, মোহিত করেন, বিনিময়ে নেন কিছু বখশিস। যে বখশিসে তার জীবিকা চলে, চলে তার ছেলে মেয়ের পড়াশোনা।
রাজকুমার বলেন, আমি ভিক্ষা করবো না। বাঁশি বাজিয়ে মানুষকে আনন্দ দিয়ে ছেলে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে যাবো।
অন্ধত্বের সঙ্গে লড়াই করে জীবনের ঘানি টেনে যাওয়া এই বাঁশিওয়ালা বলেন, মানুষ আমাকে অনেক সাহায্য দিয়ে থাকে। বাঁশি বাজিয়ে প্রতিদিন ১৫০-২০০ টাকা পাই।
জানতে চাইলে রাজকুমার উত্তর দেন, সরকার তাকে তিন মাস পরপর ১৫শ’ টাকা করে অন্ধ ভাতা দিয়ে থাকে। কিন্তু এ টাকা দিয়ে সংসার চলে না। সেজন্যই হাতে বাঁশি নিতে হয়েছে।
রাজকুমার তার আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, ‘তোরা মোর ফটো তুলনেন। মোক কিছু সরকারের কাছ থাকি ট্যাকা নিয়ে দেমেন। তোরা সংবাদিক। মোর কতা ভাল করি পেপারত ন্যাকেন। ’সংগ্রামী রাজকুমার তার পরবর্তী জীবনের জন্যও সবার কাছে দোয়া চান। তবে তিনি সরকারের কাছে আবেদন করেন, যেন তার দুই সন্তানকে মানুষ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কারণ, রাজকুমারের আশঙ্কা তিনি হয়তো আর বেশি দিন বাঁশি বাজাতে পারবেন না।
বাংলাদেশ সময়: ০০২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০১৬
এইচএ/