সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেন (রাজশাহী) থেকে: ‘সোনামুখি হোইক আর যে সুই হোইক ম্যাজিকের মতে নিমিষেই সুতো লাগবে। একটা নিয়েই দেখেন স্যার, খুব কাজে আসবে।
রাজশাহী থেকে রাজধানী ঢাকা মুখে রেল লাইনের দুই পাত বেয়ে দুর্বার গতিতে ছুটে চলেছে সিল্কসিটি এক্সপ্রেস আন্তঃনগর ট্রেন। এর মধ্যেই সুইয়ে সুতা লাগানোর ক্ষুদ্র অটোম্যাটিক মেশিনটি বিক্রির জন্য হকারি করেন ডাবলু সরকার।
কারণ এই সুই সুতার বাঁধনেই বেঁধে আছে তার অভাব-অনাটনের সংসার। তাই জীবিকার কারণেই তার এই মিনতি।
যাত্রাপথে ডাবলুর এই আবেদনে সারা দেন অনেকেই। কেবল তা-ই নয় অনেক পুরুষ যাত্রী তার কাছ থেকে শিখে নেন ঝামেলা ছাড়াই সুইয়ে সুতা লাগোনোর কৌশল। বাড়ি ফিরে ক্ষুদ্র পণ্যটি হাতে দিয়ে গৃহিণীকে চমকে দেওয়ায়ই যেন তাদের উদ্দেশ্য।
ব্যবসার কথা জিজ্ঞেস করতেই ডাবলু জানালেন, রাজশাহী থেকে ঈশ্বরদী স্টেশন পর্যন্তই তার গন্তব্য। আন্তঃ নগর ট্রেনে উঠে সেখানে গেলেও ফিরেন কমিউটার ট্রেনে। ভ্রাম্যমাণ ব্যবসার জন্য এই রুটটি তার বেশি পছন্দ। এছাড়া কখনো কখনো রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটেও হকারি করে বেড়ান। আর মনে ধরলে ঢাকাও চলে যান ডাবলু।
সকাল সাতটা থেকে রাত ১০টা। এর মধ্যে কেবল দুপুরে খাওয়ার বিরতি। তাও সারতে হয় ট্রেনের ক্যান্টিনে। এক ট্রেন থেকে অন্য ট্রেন। মুখে খইয়ের মতো কথা ফোটাতে হয়। কথার জাদুতে মানুষকে মোহিত করাই যে তার কাজ। না হলে ব্যবসা লাটে উঠবে, অট্টহাসি দিয়ে জানান এ রুটের পরিচিত হকার ডাবলু।
লাভের প্রশ্নে ডাবলু বলেন, ব্যবসা তিনি করলেও লাভ হয় কোম্পানির। মাসিক মাত্র তিন হাজার টাকা বেতনে ঢাকার একটি কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধি হয়ে কাজ করেন তিনি। দিন শেষে কত পিস নিলেন আর কত পিস বিক্রি করলেন তার হিসাব দিতে হয় কোম্পানিকে।
আর বিক্রি কম হলে খেতে হয় ম্যানেজারের বকুনি। জানান, এই টাকায় তার সংসার চলে না। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় তার ডান হাতের হাড়ের উপরে সন্ধিচ্ছেদ হয়েছে। টাকার অভাবে চিকিৎসা করানো হয়নি। তাই ভারী কাজ করতে না পারায় বেছে নিয়েছেন হকারি পেশা।
এর আগে ট্রেনে খেলনা বিক্রি করতেন। কিন্তু সুইয়ে সুতো লাগানোর ক্ষুদ্র পণ্যটির ব্যবসা বেশি ভালো। চোখের সমস্যার কারণে অনেকে সুইয়ে সুতা পড়াতে পারেন না। তাই চলার পথে মাত্র ২০ টাকার এ পণ্যটি হাতের নাগালে পেয়ে অনেকেই কেনেন। সে তুলনায় খেলনা বিক্রি হয় না।
লেখাপড়ার কথা জানতে চাইলে সরস উত্তর দেন ডাবলু। বলেন, তিনি বিল পাস! দারিদ্র্যতার কারণে স্কুলের বারান্দায় যাওয়া হয়নি তার। বিলে বিলে ঘুরে কেটেছে তার শৈশব। তবে শত কষ্টের মধ্যেও সন্তানদের লেখা-পড়া শেখাতে ভুল করেননি। তার বড় ছেলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে, আর অন্যজন চতুর্থ শ্রেণিতে। থাকেন রাজশাহী মহানগরীর আবহাওয়া অফিসের পাশে শ্যামপুর এলাকায়।
নিজে ট্রেনে হকারি করলেও দুই ছেলেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার স্বপ্ন দেখেন। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সেই ইচ্ছার কথা জানান ডাবলু।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১৬
এসএস/এএটি/এটি