দাপুনিয়া বাজার, ময়মনসিংহ ঘুরে: গৃহস্থালির কাজে প্লাস্টিকের তৈরি পণ্য সামগ্রীর ব্যবহার অনেক আগেই বেড়েছে। শহুরে জীবনে প্লাস্টিকের পণ্যের একচ্ছত্র দাপটে বিলীন হতে বসেছে বাঁশভিত্তিক কুটিরশিল্পের পণ্য সামগ্রীর ব্যবহার।
কিন্তু গ্রামীণ জীবনে এখনো কুলা, খাঁচা, উড়ি, বাইর, চালন, খালই, মাথাল, ঢোল, ঢুলি, টুকরিসহ রকমারি কুটিরশিল্পের পণ্যের ব্যবহার চোখে পড়ে। বছরের এ সময়টায় বৈশাখে ময়মনসিংহের সদর উপজেলার দাপুনিয়া বাজারে বাঁশের তৈরি পণ্য সামগ্রীর হাট বসে। সপ্তাহে দু’দিন এ হাটে বেচাবিক্রি চলে। তবে দাম চড়া হওয়ায় নাখোশ ক্রেতারা।
জানা যায়, এক সময় শহর ও গ্রামগঞ্জে বাঁশের তৈরি পণ্য সামগ্রীর ব্যাপক প্রচলন ছিল। কিন্তু প্লাস্টিকের পণ্যের দাম সস্তা হওয়ায় গৃহস্থালির কাজে প্লাস্টিক সামগ্রী বাজার দখল করে নেয়। একই সঙ্গে বাঁশের দামও বেড়ে যাওয়া ও চাহিদা কমে যাওয়ায় গৃহস্থালির জন্য বাঁশের তৈরি উপকরণ তৈরি থেকেও মুখ ফিরিয়ে নেন কুটিরশিল্পের কারিগররা। সপ্তাহের দু’দিন রোববার ও বৃহস্পতিবার বাঁশের তৈরি গৃহস্থালির প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের হাট বসে সদর উপজেলার ময়মনসিংহ-ফুলবাড়িয়া সড়কের দাপুনিয়া বাজার এলাকায়। ময়মনসিংহের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষজন এখানে বাঁশের তৈরি সামগ্রী কিনতে আসেন। বিশেষ করে বোরো মৌসুমকে সামনে রেখে এসব পণ্য সামগ্রীর কদর বেড়ে যায়।
ফুলবাড়িয়া থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার দাপুনিয়া বাজারে বাঁশের তৈরি রকমারি পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন আমিনুল হক, সেলিম, আব্দুল মান্নান ও শহীদুল ইসলাম।
তাদের মধ্যে আমিনুলের বয়স পঁয়ত্রিশের কোঠায়। বাড়ি উপজেলার ভালুকজান গ্রামে। দু’বছর ধরে এ ব্যবসা করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন।
সড়কের পাশে আমিনুলের দোকানে রয়েছে খাঁচা, উড়ি, বাইর, চালন, কুলা, পাখা, ঝাড়ুসহ গৃহস্থালির নানা প্রয়োজনীয় জিনিস। আলাপচারিতায় আমিনুল জানান, উপজেলার কইয়ের চালা গ্রাম থেকে এসব পণ্য কিনে এখানে বিক্রি করেন। এর মধ্যে ৭০ থেকে ১০০ টাকায় খাঁচা, ৪০ থেকে ৬০ টাকায় উড়ি, ১০০ থেকে ২০০ টাকায় বাইর, ৪০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে চালনি, ৫০ থেকে ৬০ টাকায় কুলা, ১৫ থেকে ২০ টাকায় হাতপাখা ও ১০ থেকে ১৫ টাকায় হরেক রকমের ঝাড়ু বিক্রি করছেন।
৮ সদস্যের পরিবারের ভরণ-পোষণ চলে এসব পণ্য বিক্রি করেই। ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় এসব জিনিসপত্র কিনে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা লাভে বিক্রি করেন। তার মতো ব্যবসায়ীরা বছরের পৌষ ও মাঘ মাসে কিছুটা কম দামে এসব পণ্যসামগ্রী কিনে রাখেন, জানান আমিনুল।
আমিনুলের সঙ্গে আলাপের সময়েই তার দোকানে ভিড় করেন ক্রেতারা। তাদের মধ্যে মোহাম্মদ আলী একজন। থাকেন দাপুনিয়ার গোস্টা গ্রামে। এ দোকানে তিনি এসেছেন চালন, কুলা ও ঢালি কিনতে। দামে বনিবনা না হওয়ায় ক্ষুব্ধ মোহাম্মদ আলী বলেন, সব দোকানেই দাম বেশি চায়। অহন তো সিজন। এ কারণেই ইচ্ছামতো দাম চাইতাছে।
আমিনুলের দোকানের ঠিক পাশেই চাল মাপার সের ও মাছ ধরার ফাঁদ পল (চাঁই) ও খালই উঠেছে বিক্রেতা শহীদুল ইসলামের দোকানে। বেচাকেনা প্রসঙ্গে এ ব্যবসায়ী হাসিমুখে বলেন, অহন দাওমারির সিজন। বেচা-বিক্রি তো ভালই।
চালন ও কুলা কিনতে এখানে এসেছেন স্থানীয় কাতলাসেন এলাকার হাসিনা বেগম। দরদাম কেমন জানতে চাইলে হাসিনা বলেন, কয়েকদিন পর দাওমারি লাগবো। চাইল, ধান ঝারতে চালন ও কুলা দরকার। কিন্তু যা দাম চায়। আগে না কিইন্না ভুলই অইছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২০, ২০১৬
জেডএস