খুলনা: ভ্রমণ যাদের নেশা তাদের বলছি, জীবনে একবার হলেও বেড়িয়ে যাবেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আদি বাড়ি ও শ্বশুরবাড়ি। যেখানে গেলে আপনার পরিচয় হবে ইতিহাসের সাথে।
নোবেল বিজয়ী অমর কবির আদি আত্মীয়তা ছড়িয়ে আছে খুলনা জেলাতে। রবীন্দ্রনাথের শ্বশুরবাড়ি খুলনার দক্ষিণডিহি। এখানে এলে দেখবেন, বাংলাসাহিত্যের প্রবাদপুরুষ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আবক্ষ ভাস্কর্য, কবিপত্নীর আবক্ষ ভাষ্কর্য, শ্বশুর বাড়ির দ্বিতল ভবন।
এছাড়া রয়েছে সবুজ-শ্যামল ঘন বাগান, পান-বরজ ও নার্সারি। কিছু সময় হাতে নিয়ে ২৫ বৈশাখ বেড়িয়ে যেতে পারেন দক্ষিণডিহিতে।
প্রতিবছরের মতো কবির ১৫৫তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে ২৫ বৈশাখ কবির স্মৃতিবিজড়িত খুলনার ফুলতলা উপজেলার দক্ষিণডিহি ও রূপসা উপজেলার পিঠাভোগে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। খুলনা জেলা প্রশাসন ২৫ থেকে ২৭ বৈশাখ তিন দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে।
তিনদিনের এ বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে যে কেউ ঘুরে যেতে পারেন রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিধন্য খুলনার দক্ষিণডিহি ও পিঠাভোগ। কেননা এই দক্ষিনডিহি গ্রামেই রয়েছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুর বাড়ি। পিঠাভোগে রয়েছে কবিগুরুর পূর্ব পুরুষের নিবাস।
ইতিমধ্যে কবির স্মৃতিধন্য এ দুই স্থানকে কবি প্রেমীদের মিলন মেলা ও অনুষ্ঠান উপলক্ষে নতুন রূপে সাজানো হয়েছে।
যেভাবে যাবেন দক্ষিণডিহি:
রবীন্দ্রনাথের ২২ বছর বয়সে বিবাহ হয় দক্ষিনডিহি গ্রামের বেনীমাধব রায় চৌধুরীর মেয়ে ভবতারিনী ওরফে মৃণালিনী দেবীর সাথে। দেশের যে কোনো স্থান থেকে খুলনা মহানগরীতে এসে ১৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম ফুলতলা উপজেলা সদর থেকে তিন কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে গেলে দক্ষিণডিহি গ্রাম। গ্রামের ঠিক মধ্যখানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে রবীন্দ্র-মৃণালিনীর স্মৃতিধন্য একটি দোতলা ভবন। এটাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুর বাড়ি।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত দক্ষিণডিহি। ফুল, ফল আর বিচিত্র গাছগাছালিতে ঠাসা সৌম্য-শান্ত গ্রাম দক্ষিণডিহি। কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে দক্ষিণডিহির সম্পর্ক নিবিড়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মা সারদা সুন্দরী দেবী আর কাকি ত্রিপুরা সুন্দরী দেবীর জন্ম এ গ্রামেই। আর রবীন্দ্রনাথের স্ত্রী মৃণালিনী দেবীও দক্ষিণডিহিরই মেয়ে। তার আরেক নাম ভবতারিণী। বিয়ের পর নাম রাখা হয় মৃণালিনী দেবী।
যৌবনে কবি কয়েকবার তার মায়ের সঙ্গে দক্ষিণডিহি গ্রামের মামাবাড়িতে এসেছিলেন। এখানে কবিগুরু ও কবিপত্নীর আবক্ষ ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। ২৫ বৈশাখ ও ২২ শ্রাবণ এখানে নানা আয়োজনে রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী ও কবিপ্রয়াণ দিবস পালন করা হয়।
যেভাবে যাবেন পিঠাভোগ:
খুলনা জেলার রূপসা নদীর পূর্ব তীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে একটি সুপ্রাচীন গ্রাম। নাম তার পিঠাভোগ, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের পূর্ব পুরুষের আদিনিবাস ছিল এই গ্রামের কুশারী বাড়ি ।
খুলনা মহানগরী থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার পূর্বে রূপসা উপজেলায় অবস্থিত এ পিঠাভোগ গ্রামে।
খুলনা আঞ্চলিক প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের পরীক্ষামূলক সমীক্ষায় পিঠাভোগ গ্রামে রবীন্দ্রনাথের পূর্ব পুরুষের ভিটার ভিত্তিপ্রস্তরের সন্ধান পাওয়া গেছে। এখানে কবিগুরুর একটি আবক্ষ ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। প্রতি বছর এখানে রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী উদযাপন করা হচ্ছে।
খুলনা শহর থেকে খুব সহজেই যাওয়া যায় পিঠাভোগ গ্রামে। খুলনা আঞ্চলিক তথ্য অফিসের তথ্য কর্মকর্তা জাকির হোসেন রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালা সম্পর্কে বাংলানিউজকে জানান, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৫ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে তার সহধর্মিনী মৃণালিনী দেবীর স্মৃতি বিজড়িত খুলনার ফুলতলা উপজেলার দক্ষিণডিহিস্থ ‘রবীন্দ্র কমপ্লেক্স’-এ খুলনা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ২৫-২৭ বৈশাখ, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ তিন দিনব্যাপী গ্রহণ করা হয়েছে নানা কর্মসূচি।
এ উপলক্ষে ২৫-২৭ বৈশাখ রবীন্দ্র কমপ্লেক্স-এ অনুষ্ঠিত হবে তিন দিনব্যাপী লোকমেলা। মেলা চলবে প্রতিদিন দুপুর দুইটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত। প্রতিদিন বিকেলে মেলাপ্রাঙ্গনে থাকবে আলোচনা সভা এবং সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
২৫ বৈশাখ (৮ মে) রোববার বিকেল চারটায় জন্মবার্ষিকীর উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম এবং বিশেষ অতিথি থাকবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ।
২৬ বৈশাখ (৯ মে) বিকেল সাড়ে চারটায় আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন খুলনা-৩ আসনে সংসদ সদস্য বেগম মন্নুজান সুফিয়ান।
২৭ বৈশাখ (১০ মে) মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটায় অনুষ্ঠিত হবে সমাপনী অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি উপস্থিত থাকবেন খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুস সামাদ।
বাংলাদেশ সময়: ০২৩২ ঘণ্টা, মে ০৭, ২০১৬
এমআরএম/এমজেএফ/