ঢাকা: বলা যায়, ভাসমান মহানগরী হারমনি অব দ্য সিস। বিশ্বে এ পর্যন্ত নির্মিত সবচেয়ে বড় ও ভারী জাহাজ এটি।
হারমনি অব দ্য সিস যেনো সমুদ্রের মধ্যে আরেক পৃথিবী। ভূমধ্যসাগর বা ক্যারিবিয়ানে ছুটিছাটায় সর্বোচ্চ বিনোদন দিতে জাহাজটি অায়োজনের কোনো কমতি রাখেনি। এক হাজার একশো ৮৭ ফুট লম্বা ও দুইশো ৩০ ফুট উচ্চতার জাহাজটি ছয় হাজার সাতশো ৮০ জন যাত্রী বহন করতে পারবে।
জাহাজটির নির্মাণকাজ শুরু হয় এখন থেকে ৩২ মাস আগে ২০১৩ সালে। নির্মাণে কাজ করেছেন মোট দুই হাজার পাঁচশো শ্রমিক। রয়েল ক্যারিবিয়ান ইন্টারন্যাশনাল নৌবহরের ২৫তম জাহাজ হারমনি অব দ্য সিস নির্মাণখাতে ব্যয় হয়েছে সাতশো মিলিয়ন পাউন্ড।
এর বিশেষত্বের দিক থেকে প্রথমে বলতে হবে যাত্রী ধারণক্ষমতা সম্পর্কে। বিশ্বের সর্বাধিক যাত্রী ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ভ্রমণ জাহাজ এটি। বিশ্বের সবচেয়ে বড় যাত্রীবাহী জেট এয়ারবাস A380 -তে সিটের সংখ্যা পাঁচশো ২৫টি। তুলনা দিতে গেলে বলা যায়, হারমনি অব দ্য সিস তার চেয়েও দশগুণ বেশি যাত্রী বহন করতে পারবে। দ্রুততার দিক থেকে জাহাজটি ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটার বেগে ছোটে।
এতে রয়েছে মোট ১৮টি ডেক। এর মধ্যে ১৬টি ডেকে রয়েছে দুই হাজার সাতশো ৪৭টি কেবিন। যা কিনা বর্তমানে যেকোনো জাহাজের চেয়ে অনেক বেশি। এটি এত বড় যে যাত্রীরা যাতে হারিয়ে না যান সেজন্য তাদের জিপিএস (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) ব্যবহার করতে হবে।
দু’টি তলা নিয়ে বিস্তৃত জাহাজের সিগনেচার রুমটি রয়েল লফট স্যুট বলে পরিচিত। রয়েল লফট স্যুটের প্রথম তলায় রয়েছে এক হাজার ছয়শো স্কয়ার ফুটের একটি লিভিং স্পেস। অন্যদিকে আটশো ৭৪ স্কয়ার ফুটের দ্বিতীয় তলাটি শহরের বড় কোনো অ্যাপার্টমেন্টের চেয়েও অনেক বড়।
হারমনি অব দ্য সিস যেহেতু একটি ভ্রমণ জাহাজ সেহেতু এখানে ছুটি কাটাতে আসা যাত্রীদের আনন্দযাপনে যেনো এতটুকু অসুবিধা না হয় তাই বিশ্বের ৮০টি দেশ থেকে প্রায় দুই হাজার একশো জন কর্মচারী তাদের সেবায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও সবচেয়ে এক্সক্লুসিভ কেবিনে যারা থাকবেন তাদের সেবায় থাকবে রয়েল জেনিস উপাধির খানসামা। এরা অতিথিদের মালপত্র খুলতে ও গোছাতে অতিথিদের সাহায্য করবে।
ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ বা ডিনার নিয়ে অতিথি বা যাত্রীদের কোনো চিন্তা নেই। হারমনি অব দ্য সিসে রয়েছে ২০টি ডাইনিং অপশন ও বার। খাবারের মধ্যে রয়েছে হটডগ থেকে সুশি পর্যন্ত- সবকিছু। রয়েছে সেলিব্রেটি শেফ জেমি অলিভারের রেস্টুরেন্ট জেমি’স ইতালিয়ান। খোলা হয়েছে একটি বায়োনিক বার। যেখানে রোবটরা কাস্টমারদের চাহিদা অনুযায়ী ককটেল বানিয়ে দেবে।
চিত্তবিনোদন, কেনাকাটা ও শরীরচর্চার জন্য রয়েছে খেলার জায়গা, কমেডি ও জ্যাজ ক্লাব, বুটিক শপ, সি স্পা ও ফিটনেস সেন্টার, ইয়োথ জোন, ২৩টি সুইমিংপুল, স্পের্টস জোন ও সেন্ট্রাল পার্ক।
জাহাজের মধ্যখানে অবস্থিত সেন্ট্রাল পার্কে রয়েছে সাড়ে দশ হাজারের বেশি উদ্ভিদ, ৪৮টি অাঙুরগাছ ও ৫২টি বড় গাছ। এগুলোর কোনো কোনোটি ২০ ফুট পর্যন্ত লম্বা।
হারমনি অব দ্য সিস জাহাজটি সেন্ট নেজাইর বন্দর থেকে তার প্রথম পরীক্ষামূলক যাত্রা করে চলতি বছরের মার্চে। মে মাসের ২২ তারিখ রটারড্যামের উদ্দেশ্যে প্রথম আনুষ্ঠানিক যাত্রায় এটি সাউথহ্যাম্পটন ছাড়বে। সেখানে চার রাত থেকে ২৬ মে ফ্রান্সে পরবর্তী ট্রিপ শেষ করে ২৯ মে জাহাজটি গ্রীষ্মকালীন ভ্রমণে রওয়ানা হবে বার্সেলোনার উদ্দেশ্যে।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।
বাংলাদেশ সময়: ০০২৫ ঘণ্টা, মে ১৮, ২০১৬
এসএমএন/এএ