ঢাকা: রবিউল, বয়স অনুমান ৭-৮ বছর। বয়সটা তো দূরন্তপনার।
শুধু কি তাই, মা-বাবার আদর-সোহাগ নিয়ে বেড়ে উঠার কথা ছিল ওর। কিন্তু আজ এসব থেকে অনেক দূরে রবিউল। নেই মা-বাবার শাসন। যখন যা ইচ্ছে তাই করে বেড়ায়। ঘুমে কাতর হলে মাটিতেই ঘুমিয়ে পড়ে, খিদে পেলে মানুষের কাছে হাত পাতে।
দিনাজপুরে জন্ম জানিয়ে রবিউল বলে, মা-বাবার অজ্ঞাতসারে সে একা ঢাকা চলে এসেছে। বাড়ি থেকে বের হয়েছিল কখন, ঠিকমতো বলতেও পারছে না সে। এরপর যোগ দেয় রাজধানীর একদল পথশিশুর সঙ্গে। যাদের সবাই নেশাগ্রস্ত ভবঘুরে শিশু-কিশোর।
রবিউলের দলে রয়েছে ১০/১২ জন। প্রায় একই বয়সী সবাই রাজধানীর মিরপুরের শাহ আলী মাজার ও আশেপাশের এলাকায় থাকে। প্রতিদিন দুপুরে মাজারের উদ্যোগে সর্বস্তরের জন্য দেওয়া খাবার খায়। দিনরাত এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরি করে। মন যা চায় তাই করে। অধিকাংশ রাতই কাটে মাজারের বারান্দা বা সিঁড়িতে।
গত সোমবার (২৩ মে) দিনগত রাত ১টার দিকে মিরপুর শাহ আলী মাজারে শিশুদের ছবি তুলতে গেলে বিশেষ ভঙ্গিতে পোজ দেয় রবিউল। ছবি দেখতে কেমন হলো ক্যামেরায় উঁকি দিয়েও দেখতে চায় সে।
ছবি তোলার সময় কয়েকজন দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। আবার কেউ মুখ ঢেকে রাখে। কারণ, তারা মনে করেছে, তাদের ছবি পত্রিকায় প্রকাশ হবে। যেহেতু তারা নেশাগ্রস্ত তাই তাদেরকে পুলিশ ধরে নিয়ে যেতে পারে ভেবে ভয় পায়!
এ সময় জিজ্ঞেস করতেই সে জানায়, বেশ কয়েক মাস আগে একদিন বাড়ি থেকে বের হয়ে একাই গাড়িতে চড়ে ঢাকায় চলে আসি। তারপর মানুষের কাছে হাত পেতে টাকা নিয়ে খাবার কিনি। রাত হলে ফুটপাতে ঘুমাই। এভাবে কিছুদিনের মধ্যে আরও কয়েকজন পথশিশুর সঙ্গে রবিউলের পরিচয় হয়। এরপর থেকে সেই দলের মধ্যে আছে সে।
শাহ আলী মাজারে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি, দৌড়-ঝাপ, গড়াগড়ি, খেলাধূলা যখন যা ইচ্ছে করে তাই করে বেড়ায় রবিউল ও তার দলের অন্য শিশুরা।
মায়ের কথা মনে পড়ে কিনা জানতে চাইলে রবিউল বলে, আগে খুব বেশি মনে পড়তো, এখন আর পড়ে না। মাকে ভুলে যাচ্ছি। বড় ভাই ও ছোট বোনের কথা মনে নেই। তাদের নামও ভুলে গেছি। তবে মায়ের নাম আমেনা ও বাবার নাম জলিল বলে জানায় রবিউল।
শুধু রবিউলই নয়, রাজধানীতে এমন হাজার হাজার শিশু রয়েছে যাদের, কেউ মা-বাবার সন্ধান জানে না তারা। কারও মা-বাবার মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটেছে, কেউ তার মা-বাবাকে হারিয়ে ফেলেছে। সেই পথশিশুদের নেই কোনো পড়ালেখা, নেই অধিকার, অনিশ্চিত তাদের ভবিষ্যৎ।
রবিউলের দলের আরেক শিশু জানায়, কখনো ভিক্ষা করি, কখনো বাজারে বোঝা বহন করি, ঠেলাগাড়ি চালিয়ে টাকা রোজগার করি। বেশি অভাবে পড়লে সুযোগে চুরিও করি। এরপর সে টাকা দিয়ে দলবেঁধে নেশা করি ও ঘুরে বেড়াই। কখনো লোকচক্ষুর সামনে, কখনো আড়ালে-আবডালে নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করে তারা।
শাহ আলী মাজারে কর্তব্যরত একাধিক নিরাপত্তাকর্মী জানান, সাধারণত রাত ১০টার পর মাজারের ভেতরে প্রবেশ নিষেধ। কিন্তু তারপরও অনেক ভাসমান নারী, পুরুষ ও শিশু-কিশোর সেখানে রাতযাপন করতে আসে। মানবতার দিক বিবেচনা করে তাদের সেখানে থাকতে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৬
টিএইচ/জেডএস