ঢাকা: এখন থেকে চার বছর আগের কথা। একটি বীভৎস ট্রেন দুর্ঘটনায় জেমস ইয়াংয়ের জীবন পাল্টে গেছে আজীবনের জন্য।
২২ বছর বয়সী জেমস বর্তমানে বায়োলজিক্যাল বিজ্ঞানী হিসেবে কাজ করছেন। দুর্ঘটনার রাতে তিনি পূর্ব লন্ডনের ডকল্যান্ড লাইট রেলওয়েতে বন্ধুদের সঙ্গে বেরিয়েছিলেন। প্ল্যাটফর্মে হেঁটে যাওয়ার সময় তিনি চলন্ত ট্রেনের দরজা খুলতে হাত বাড়ান। কিন্তু দরজার বাটন প্রেস করার সময় ট্রেনের গতিবেগের সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে তিনি ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। ফলে পড়ে যান দুই বগির মাঝখানে।
জেমস জানান, আমার বন্ধুরা আমাকে খুঁজছিলো কিন্তু দেখতে পাচ্ছিলো না আমাকে।
জেমসের এই ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়ার ঘটনা সিসিটিভিতে রয়ে গেছে। কিন্তু জেমসের মনে নেই কিছুই। ট্রেন থামলে তার বন্ধুরা ট্রেনে ব্যাপারটা জানালে দু’জন লোক এসে তাকে উদ্ধার করে। একটি অ্যাম্বুলেন্স হেলিকপ্টার এসে রয়েল লন্ডন হাসপাতালে নিয়ে যায় জেমসকে। টানা ১২ দিনের কোমায় ছিলেন তিনি। তার থেতলে যাওয়া মুখ ও শরীর পুনরায় তৈরি করতে ১২টি অপারেশন করতে হয়।
কৃত্রিম হাত ও পা লাগানোর সাড়ে তিনমাস পর বাড়ি ফেরেন জেমস। কৃত্রিম হাত বলতে ছিলো হুকের মতো একটি জিনিস, যা দিয়ে সীমিত কিছু কাজ করা যেতো। কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট ছিলেন না জেমস।
গত বছর জেমসের জীবন আরেকবারের মতো পাল্টালো। এবার পাল্টালো যতটা তার জন্য ভালো, ঠিক ততটাই। জাপানিজ এন্টারটেইনমেন্ট কোম্পানি কোনামির একটি বিজ্ঞাপন জেমসের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বিজ্ঞাপনে যাদের একটি হাত নেই ও বায়োনিক হাত লাগাতে আগ্রহী এমন কাউকে আহ্বান জানানো হয়। জেমস এ আহ্বানে সাড়া দেন।
তার বায়োনিক হাতটি লাগানো হয় লন্ডনে প্রসথেটিক্স শিল্পী সোফি ডি অলিভেরা বারাতার স্টুডিওতে। সোফি ধাতুর তৈরি বাহুকে জেমসের কাঁধের পেশীর সঙ্গে সংযুক্ত করে দেন। ব্যাটারিচালিত কৃত্রিম হাতের পেশীর সংকোচন প্রসারণের সংকেতগুলো তার ঘাড়ের চামড়ায় সংযুক্ত সেন্সর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে। হাতের এসব সেন্সরগুলোকে বেল্টের মাধ্যমে জেমসের শরীরের উপরের অংশে বসানো হয়।
জেমস জানান, এটি শুধু হাতই নয়। এতে রয়েছে লেজার লাইট, টর্চ, ফোন চার্জে দেওয়ার জন্য একটি ইউএসবি পোর্ট, ঘড়ি এমনকি ড্রোনও।
তবে সবসময় তিনি এ হাত পরে থাকতে পারেন না। কারণ কৃত্রিম হাতটির ওজন চার কেজির বেশি। তাছাড়া গোসল ও ঘুমানোর সময় হাতটি খুলে রাখতে হয়।
জেমস তার নতুন হাত নিয়ে খুশি। তবে তার যান্ত্রিক হাত এখনও সম্পূর্ণ সম্ভাবনাময় লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি। কারণ এ রোবো আর্ম আদিম উপায়ে তার শরীরের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। যদি টাইটানিয়াম ইমপ্ল্যান্টের মাধ্যমে হাতটিকে আপগ্রেড করা যেতো, তাহলে হাতটি তিনি ইচ্ছেমতো নাড়াতে পারতেন বা জিনিসপত্র তুলতে পারতেন।
জেমসের পরবর্তী প্ল্যান হচ্ছে নিজের বায়োনিক বডি তৈরি করা। আর হবে ঘাড় ও বাম পায়ে টাইটানিয়াম ইমপ্ল্যান্টের মাধ্যমে।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।
বাংলাদেশ সময়: ০১১৫ ঘণ্টা, জুন ০৪, ২০১৬
এসএমএন/এএ