ঢাকা: রাজধানীর আগারগাঁও বস্তিতে থাকেন অন্ধ ভিক্ষুক খলিল রহমান পাঠান। তার ঘরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়লো চকচকে বিছানার চাদর।
খলিল রহমানের ১০ বছর বয়সী এক মেয়ে নিয়ে আগারগাঁও মোড়, ফার্মগেট ও শ্যামোলী মোড়ে ভিক্ষা করেন। ভিক্ষা করে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় হয় তার। তবে তার বস্তিতে থেকে এমন পরিপাটি ও সাজানো গোছোনো ঘরের কারণ তার ভিক্ষার আয় নয়। আগারগাঁও বস্তিতে বাড়ির মালিক তিনি। এখানে আটটি রুম ভাড়া দিয়ে মাসে আয় করেন ১৬ হাজার টাকা। সব মিলেই বৃদ্ধ এ ভিক্ষুকের মাসিক আয় ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা বলে জানান বস্তিবাসীরা। এমনকি তার ব্যাংক ব্যালেন্স আছে বলেও দাবি করেন বেশ কিছু বস্তিবাসী।
মঙ্গলবার (১২ জুলাই) রাজধানীর আগারগাঁও বস্তিতে ঘুরে ভিক্ষুক খলিল রহমানের বিষয়ে এমন তথ্যই জানা গেলো। তিন মেয়ে সন্তানের জনক খলিল। মেয়েদের সবার বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন। স্ত্রী নিয়েই আগারগাঁও বস্তিতে তার বসবাস।
ময়লা-আর্বজনার মধ্যে নোংরা পরিবেশেই সাধারণত বস্তিবাসীরা বসবাস করে থাকেন। আগারগাঁও বস্তিবাসীর অধিকাংশ বাসিন্দারেই নোংরা ঘর, ছেঁড়া বিছানার চাদর, স্তূপ করা ময়লা কাপড়-চোপড় দেখা যায়। তবে ভিক্ষুক খলিলের ঘর একবারে পরিপাটি। তার কথা-বার্তাতেও বাড়িওয়ালা সুলভ ভাবভঙ্গি প্রকাশ পায়। যদিও প্রথমে বিভিন্ন অভাব অভিযোগের কথা বলছিলেন। তার আয়ের কথাও গোপন করার চেষ্টা করলেন। বিক্রমপুর থেকে শূন্য হাতে ঢাকায় এসে কীভাবে বস্তির ঘরগুলোর মালিক হলেন- এসব কিছু খুলে বলেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এ ভিক্ষুক।
‘বিক্রমপুর থেকে ঢাকায় আসি খালি হাতে। অন্ধ মানুষ ভিক্ষা ছাড়া কোনো গতি নেই। তাই ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করি। প্রথম যখন এ বস্তি গড়ে ওঠে, সে সময় ভিক্ষার টাকা জমিয়ে ঘরগুলো বানাইছিলাম। এখান থেকে মাসে রুম প্রতি ২ হাজার টাকা করে ভাড়া আসে। ভিক্ষার টাকা ও ঘর ভাড়ার টাকা দিয়ে স্বামী-স্ত্রী চলি। আমার বউ বাতের ব্যাথার কারণে কিছু করতে পারে না। তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি তারা সুখে আছে। ’ এসব কথা বললেন খলিল।
তবে বৃদ্ধ এ ভিক্ষুক বিদ্যুৎ বিলের জন্য ভাড়ার সঙ্গে আরও ৫০০ টাকা করে নেন বলে জানান তার ভাড়াটিয়ারা।
আগারগাঁও বস্তিতে থাকে ভিক্ষুক খলিলের হেলপার বাবা-মা হারা রিমি। সে বাংলানিউজকে বলে, ‘ভিক্ষা করে প্রতিদিন কমপক্ষে ৪শ’ টাকা করে আসে। আবার কোনোদিন এক হাজার টাকাও আসে। আমাকে ভিক্ষার টাকার চার ভাগের এক ভাগ দেয়। ’
এমন আয়ের পরও খলিল বলেন, ‘আমরা বস্তিবাসী, সরকার আমাদের জন্য মাঝে-মাঝে সাহায্য দিতে পারে। অনেক সমস্যার মধ্যে দিন পার করি আমরা। অবশ্য সরকারি যেসব বরাদ্দ আসে তা কর্মকর্তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়, আমাদের কখন দেবে। আমরা দু'জন ৫০০ টাকা করে বয়স্ক ভাতা ছাড়া কিছুই পাই না। বস্তির ঘরগুলো না থাকলে অনেক সমস্যায় পড়তাম। ’
বস্তিতে ঘর বানানোর জন্য কাউকে চাঁদা দিতে হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাকে ঘর বানানোর সময় কোনো ব্যক্তিকে চাঁদা দিতে হয় নাই। এখন একটা সমস্যা সরকারি জায়গায় কখন আবার ওঠায় দেয় এই চিন্তায় আছি। সরকার ইচ্ছা করলে ওঠাতে পারে তবে আমার দাবি, ওঠিয়ে দিলে ক্ষতিপূরণ যেন দেওয়া হয়। ’
ভিক্ষুক খলিল সম্পর্কে বস্তির বাসিন্দা রেহানা বলেন, ‘এই বুড়ার মাসে অনেক টাকা ইনকাম। মেয়েদেরও টাকা পাঠায়। কিছুদিন আগে এক মেয়ের এ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিলো। তাতে একলাখ টাকা নিজের পকেট থেকে খরচ করছে। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৬
এমসি/টিআই