“সেটা ২০০৪ সাল। সিঙ্গাপুরে অবসর সময় কাটাচ্ছিলাম।
ঠিক এভাবেই বাংলাদেশের অনলাইন সাংবাদিকতা চর্চার সূচনালগ্নের কথাগুলো বলছিলেন আলমগীর হোসেন। সামনে অবাক হয়ে তার কাছে অনলাইন সাংবাদিকতার গল্প শুনছিলেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল অার্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)র গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) সকালে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাস অডিটরিয়ামে আয়োজন করা হয় 'মিট দ্য এডিটর' নামের এ কর্মসূচি। সেখানে বক্তৃতার পর শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন আলমগীর হোসেন।
বাংলাদেশে অনলাইন সাংবাদিকতার পথিকৃৎ হিসেবে সুপরিচিত, স্বনামধন্য এই সাংবাদিক বর্তমানে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম’র এডিটর ইন চিফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, একটি সংবাদমাধ্যমকে এই প্রতিযোগিতার বাজারে স্থান করে নিতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন দক্ষ কর্মী বাহিনী আর দক্ষতার সঙ্গে সে কর্মীদের পরিচালনা করার বিষয়টিও জরুরি।
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম অল্প সময়ের মধ্যে জনপ্রিয়তা পাওয়ার পেছনে এটাই যেমন কারণ, তেমনি একই কারণে মাত্র দুই বছরেই জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠে গিয়েছিলো বিডিনিউজ২৪। সেসময় বিডিনিউজের যারা কর্মী ছিলেন তাদের অনেকেই বর্তমানে দেশের প্রধান প্রধান সংবাদমাধ্যমে দায়িত্বশীল ভূমিকায় রয়েছেন। বাংলানিউজের কর্মীদেরও অনেকে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে গিয়ে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন, বলেন তিনি।
ষাটোর্ধ্ব এই প্রথিতযশা সাংবাদিক সাড়ে চার দশকের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার ডালা থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দিক তুলে ধরে শিক্ষার্থীদের সামনে হাজির করেন।
বলেন, সাংবাদিকতার সবচেয়ে বড় দিক একাগ্রতা। পেশাকে ভালোবেসে কাজ করে যাওয়া।
আলমগীর হোসেন বলেন, ৩২ বছর কাগজের পত্রিকায় সাংবাদিকতা করার পর এক সময় ছেড়ে দেয়ার কথা। অনেক সহকর্মীই বলছিলেন আপনার এখনো অনেক কিছু দেয়ার রয়েছে। নিজেও কাজ ছেড়ে থাকতে পারলাম না। আবার ফিরে শুরু করি সাংবাদিকতা। ভালোবাসা থেকেই এই লেগে থাকা।
বিশ্বের শতাধিক দেশে ঘুরে, বড় বড় আন্তর্জাতিক ইভেন্ট কাভার করে, আর বিশ্বের প্রধান প্রধান সংবাদপত্র টেলিভিশন রেডিওর সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে তার ভিত্তিতে অর্জিত অভিজ্ঞতার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
সাংবাদিকতায় কঠোর পরিশ্রমের বিষয়ে আলমগীর হোসেন বলেন, গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিটিকেও পরিশ্রমী হতে হবে। নিজের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ১ জুলাই গুলশানে হলি আর্টিজানে হামলার পর আমি নিজে রিপোর্টারকে ফোন দিয়ে ঘটনাস্থলে যেমন যেতে বলি, তেমনি নিজের বাসা থেকে অফিসে এসে সারারাত নিউজরুমে কাটাই। এমন একটি পরিস্থিতিতে কোনও সংবাদকর্মীর পক্ষেই ঘুমোনো সম্ভব হয় না।
এখন অনলাইনের যুগ। অনেক ধরনের ডিভাইস রয়েছে, যেগুলো ব্যবহার করছে কর্মীরা। একটা সময় ছিলো টাইপরাইটারের যুগ। আর সে সময়ই আমি সাংবাদিকতা শুরু করি। সেসব দিনে আমি নিজে সবসময় একটি টাইপ রাইটার বহন করতাম, বলেন আলমগীর হোসেন।
ভবিষ্যতে কাগজের পত্রিকার দুর্দিনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের জরিপগুলোতে দেখতে পাই সবচেয়ে বেশি, আশি শতাংশ পাঠক স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে বাংলানিউজ ভিজিট করছেন। খবর জানার জন্য এখন আর কেউ সংবাদপত্র পড়ে না। যেগুলোতে কিছু বিশেষ প্রতিবেদন থাকে সেগুলোতে চোখ বোলানো হয়। না হলে দেখাই হয় না। কারণ কাগজের প্রতিটি ঘটনাই পুরনো।
পত্রিকার আকার ছোট হয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একসময় লন্ডন টাইমস বড় আকারে বের হতো। এতোবড় পত্রিকার পাতা খুললে পাশের মানুষের গাঁয়ে যেয়ে পড়তো। এখন সেগুলো ট্যাবলয়েড হয়ে এসেছে। একই অবস্থা সানডে টাইমসের। এসবই আরো সহজ করে তোলার জন্যেই অনলাইনে চলে আসছে। বাংলাদেশে সবচাইতে জনপ্রিয় দৈনিকটির কলেবরও ছোট।
এছাড়াও কাগজের পত্রিকার কারণে বৃক্ষ নিধন এবং পরিবেশের ক্ষতির বিষয়টিও তুলে ধরেন বাংলানিউজের এডিটর ইন চিফ।
পরের অংশ>> গণমাধ্যমের জন্য দরকার নিবেদিত দক্ষ কর্মী
বাংলাদেশ সময় ১৮১২ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৬
এমএন/এমএমকে