ঢাকা: ‘মা আমি যাচ্ছি, ভালো থেকো। সৃষ্টিকর্তা আমার মা, স্বজনদের সুস্থ রেখো।
আলাপচারিতার এক পর্যায়ে তাজুল জানালেন তার বাড়ি বগুড়ার কাহালুতে। পরিবারকে একটু সুখের মুখ দেখাতে চার বছর আগে মালয়েশিয়ায় উদ্দেশে পাড়ি জমান তিনি। গেল বছর মাকে দেখার জন্য, মায়ের হাতের রান্না খাওয়ার জন্য দেশে এসেছেন।
এখন ফেরার সময় এসে যাওয়ায় আবারও মায়ের আঁচল ছাড়তে হচ্ছে তাকে। কিন্তু যাবার বেলায় এয়ারপোর্টের ভেতর পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারেনননি মধ্যবয়সী মাকে।
তিনি বলেন, খুব খারাপ লাগছে মাকে ছেড়ে যেতে। আরও বেশি খারাপ লাগছে বিমানবন্দরের প্রবেশপথেই ছেড়ে যেতে হচ্ছে মাকে।
শুধু তাজুল নয়। তার মতো অনেকেরই স্বজনরা এসেছেন বিদায় জানাতে। কিন্তু বিমানবন্দরের প্রবেশপথেই তাদের আটকে দেওয়া হচ্ছে। আর যাদের একটু সামর্থ্য রয়েছে তারা প্রবেশপথ থেকে সামান্য একটু ভেতরে ঢোকার জন্য ভাড়া করছেন সিএনজি অটোরিকশা বা অন্য কোনো বাহন। এজন্য অবশ্য সেখানকার আনসার সদস্যকে কিছুটা উপরি দেওয়ার পাশাপাশি সিএনজি চালককেও দিতে হচ্ছে বেশ কিছু অর্থ।
এমনই এক ভুক্তভোগী নুরুল। তিনি এসেছেন সৌদি আরবগামী তার ভাতিজা রবিউলকে বিদায় দিতে। বিমানবন্দরের বাইরে ভাতিজার সঙ্গে একটি হোটেলে খাবেন বলে আগেই সিএনজি ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু ঢোকার সময় বাধে বিপত্তি।
পরে দায়িত্বরত আনসার সদস্যকে ২০০ টাকা এবং সিএনজি চালককে ৩০০ টাকা দিয়ে ভেতরে ঢুকতে পেরেছেন তিনি।
তিনি বলেন, আমরা নিরুপায়। ভাতিজাকে বিদায় দিতে একটু যদি খরচ হয়েই যায়, কি আর করা!
এ বিষয়ে বিমানবন্দরের প্রবেশফটকে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য এসআই সাজ্জাদ বলেন, আমাদের উপর নির্দেশ আছে যাত্রী ছাড়া কেউ প্রবেশফটক পার হতে পারবেন না। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করছি।
এদিকে বিমান বন্দর প্রবেশফটক পার হওয়ার পর গাড়ি পার্কিংস্থল ও এর আশপাশে বসার স্থানে প্রিয়জনের সঙ্গে বিদায়ী সময় কাটাচ্ছেন কিছুক্ষণ। এ সময় কেউ কাতর মুখে অথবা মোবাইলে ছবি তুলে বিদায় জানাচ্ছেন।
অনেকটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গন্তব্যস্থলে ফিরে যাচ্ছেন তারা পরেরবার প্রিয়জনকে আবার দেখার আসায়।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৫, ২০১৬
আরএইচএস/জেএম