ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

মুছে যেতে বসেছে ইতিহাসের সাক্ষী ‘জিনজিরা প্রাসাদ’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০১৬
মুছে যেতে বসেছে ইতিহাসের সাক্ষী ‘জিনজিরা প্রাসাদ’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) ঘুরে: শায়েস্তা খান পরবর্তী অনেক ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী ‘জিনজিরা প্রাসাদ’। ঢাকার কেরানীগঞ্জের জিনজিরায় অবস্থিত ইতিহাসের বেদনাবিধুর ঘটনারও সাক্ষী এটি।

কিন্তু অযত্ন ও সংরক্ষণের অভাবে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে কালের সাক্ষী এ প্রাসাদ।  

সরেজমিনে দেখা যায়, বর্তমানে প্রায় বিলুপ্তির পথে জিনজিরা প্রাসাদ। ধ্বংস হতে চলেছে এর আদি রূপ। পৃথকভাবে সামান্য অংশ পরিত্যক্ত থেকেই জানান দিচ্ছে তার অবস্থান।  

প্রাসাদ এলাকায় গড়ে উঠেছে বাড়ি-ঘর ও দোকানপাট। তাই এখন একেবারে কাছে না গেলে এর অস্তিত্ব বোঝা দায়।


 
এর একটি অংশ তিনতলা সমান একটি স্থাপনা। কেউ কেউ এটিকে ফাঁসির মঞ্চ আবার কেউ সিঁড়িঘর বলে থাকেন। স্থাপনার ভেতরে-বাইরে অবর্জনার ভাগাড়ে রূপান্তরিত হতে দেখা যায়। দীর্ঘদিনের অব্যবহার ও অযত্ন-অবহেলার কারণে গাছের শিকড় কঠিনভাবে জড়িয়ে ফেলেছে ভঙ্গুর দেয়ালগুলোকে। দেয়ালের বিভিন্ন স্থান ও ছাদে জন্মেছে বড় বড় বটবৃক্ষ ও অন্যান্য গাছপালা। গোড়া থেকে ছাদ পর্যন্ত দেখা দিয়েছে একাধিক ফাটল ও গর্ত।

স্থানীয় এক বাসিন্দা মাহমুদ খান বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে জানান, প্রাসাদের জায়গাগুলো এখন ব্যক্তি মালিকানাধীন। বিগত প্রায় একযুগের কিছু আগেও তিনটি পৃথক অংশে বিভক্ত হয়ে প্রাসাদটির বেশকিছু অংশ টিকে ছিলো। কিন্তু বেশিরভাগ স্থাপনা ভেঙে সেখানে নতুন স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। তবে এ প্রাসাদটির ধ্বংসের শুরু পাকিস্তান আমল থেকেই। স্বাধীনতার পর এ এলাকায় মানুষের বসতি বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে এর বাইরের দেয়াল এবং পরে মূল প্রাসাদের দেয়াল ভেঙে স্থানীয়রা বাড়ি-ঘর ও দোকানপাট নির্মাণ করেছে। সরকার আগে চাইলে এটিকে একটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে গড়ে তুলতে পারতো।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, বাংলার মুঘল সুবেদার দ্বিতীয় ইব্রাহিম খান ১৭ শতকের দিকে জিনজিরা প্রাসাদটি নির্মাণ করেন। এর চারপাশে খনন করা হয়েছিল পরিখা। বুড়িগঙ্গা নদীর তীর ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছিল প্রাসাদটি। নদীর ওপর একটি কাঠের সেতু নির্মাণ করে কাটরার কাছেই ঢাকা শহরের সঙ্গে এর সংযোগ স্থাপন করা হয়েছিল। প্রাসাদস্থলটি তখন চারপাশে নদী দিয়ে বেষ্টিত ছিলো। এ কারণেই এর নামকরণ করা হয়েছিল, দ্বীপের প্রাসাদ।

বাংলার ইতিহাসের অনেক বিয়োগান্তক ও বেদনাবিধুর ঘটনারও সাক্ষী এই প্রাসাদ। নবাব সরফরাজ খানের (১৭৩৯-১৭৪০) পতনের পর তার মা, স্ত্রী, বোন, পুত্রকন্যা এবং তার হারেমের কয়েকজন নারীকে এ প্রাসাদে অন্তরীণ রাখা হয়। ১৭৫৪ সালে হোসেন কুলি খানের হত্যাকাণ্ডের পর এ প্রাসাদে বসবাসরত তার পরিবারের সদস্যদেরও বন্দীজীবন যাপন করতে হয়। পলাশীর যুদ্ধে সিরাজউদ্দৌলার পতনের পর আলীবর্দী খানের স্ত্রী শরীফুন্নেসা, সিরাজের মা আমেনা বেগম, সিরাজউদ্দৌলার স্ত্রী লুত্ফুন্নেসা বেগম, তার মেয়ে কুদসিয়া বেগম ওরফে উম্মে জোহরাকে জিনজিরা প্রাসাদে অন্তরীণ রাখা হয়। ঃ

সেই সঙ্গে অন্তরীণ করা হয় পলাশী যুদ্ধের অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী ঘসেটি বেগমকেও। ১৭৬০ সালে এ প্রাসাদ থেকে নিয়ে গিয়ে আমেনা বেগম ও ঘসেটি বেগমকে বুড়িগঙ্গা পেরিয়ে ধলেশ্বরী নদীতে নৌকা ডুবিয়ে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে লর্ড ক্লাইভের হস্তক্ষেপে শরীফুন্নেসা, লুত্ফুন্নেসা বেগম ও উম্মে জোহরাকে মুর্শিদাবাদে পাঠানো হয়।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অধিকাংশই জিনজিরা প্রাসাদটিকে ‘হাওলী নগেরা’বলে ডাকেন। সেখান থেকে এ এলাকার নাম জিনজিরা হাউলী হয়েছে বলে মন্তব্য স্থানীয়দের। কিন্তু অবহেলা ও অযত্নে সেই সুযোগ অনেকখানি নষ্ট হয়ে গেছে। এখন প্রাসাদের শেষ স্মৃতিচিহ্ন যা আছে সেটুকুই টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করতে হবে বলে দাবি স্থানীয়দের।

বাংলাদেশ সময়: ০১২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১৬
এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।