একদিন আগে শহীদ মিনারে তুমি ফুলে ফুলে ভরে উঠেছিলে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই তোমাকে পরম শ্রদ্ধা জানাতে ফুল হাতে জড়ো হয়েছিলো।
টিপরাছড়া চা বাগানের শ্রমিক পরিবারে জন্মেছি। নাম নির্মা । ১২ নম্বর বুনার্জী লাইনে থাকি আমরা। আমার বাবার নাম ময়েশ্বর বুনার্জী। জন্মের পর থেকেই দেখছি নিষ্ঠুর দারিদ্র্যতা। ছোট ছোট অপমান। আমার গর্ভধারিনী মা মারা গেছে সেই কবে! তারপর বাবার দ্বিতীয় বিয়ে! আমাদের পরিবারে ছোট দুই ভাই এলো।
সৎ-মা কখনো ‘আপন মা’ হতে পারেন না- কথাটি প্রতিদিন একটু একটু করে মর্মে মর্মে উপলব্ধি করি! বাবাকে কিছু বলতে পারিনা। কারণ আমার মুখে যে কথা নেই!
সবাই স্কুলে যায়, আমি স্কুলে যেতে পারিনা। আমার নাকি স্কুল নেই। স্কুলের পোশাক পড়ে আমাদের এলাকার ছেলে-মেয়েরা যখন স্কুলে যায় তখন আমারও ভীষণ স্কুলে যেতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু আমার ওই ধরণের স্কুল নেই! কে পড়াবে আমাদের? কোথায় শিখবো আমরা?
বাগানের অনেকেই আমাকে পরম মমতা আর স্নেহের চোখে দেখেন। স্নেহের দৃষ্টি দিয়ে ভুলিয়ে দেন কথা বলতে না পারার নিজস্ব যন্ত্রণাটুকু। বুঝতে পারি-কথা না বলতে পারলেও অনেকগুলো প্রিয়মুখ আমার মনের ভাষাটুকুকে তারা তাদের মতো করে ধারণ করে রাখে। আমার খোঁজ-খবর নেয়।
অপরদিকে, কারো কারো লোলুপদৃষ্টিকে প্রচন্ড ভয় পাই আমি। তবে তা বুঝতে পারি সহজেই। অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটে যাবার ভয়ে নিরাপদ দূরত্বে চলে যাই। কতিপয় দুষ্টমানুষের চোখের সেই বিকৃত ভাষাগুলোকে আজ আমি আয়ত্ব করে ফেলেছি।
বড় শখ ছিলো, তোমার অ, আ, ক, খ-গুলোকে ভাষায় উচ্চারণ করার। কিন্তু পারলাম কই? সবাই যখন মায়ের ভাষায় কথা বলে তখন আমার খুব কষ্ট হয় জানো! এটা আমার সারাজীবনের নীরব যন্ত্রণা। ভেতরে ভেতরে এ অনুশোচনার যন্ত্রণায় পুড়তে থাকি প্রতিদিন।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৭
বিবিবি/ওএইচ/বিএস