এ দৃশ্যে যে মেয়েটির মন নেচে ওঠে তার নাম ফুলমণি। বাগানটি তারই।
এ যেন ফুলেদের পাশে আরেকটি ‘ফুল’ হয়ে ফুটে থাকা! তার অস্পষ্ট মৃদু ‘আ আ...’ ধ্বনি যখন মুখ গহ্বর থেকে হঠাৎ হঠাৎ বের হয়, তখন ব্যথায় ভরে ওঠে সবার দৃষ্টি।
সবার অভিন্ন মত একটি বাক্যে এসে মিলিত হতে থাকে – ‘আহা, মেয়েটি কথা বলতে পারে না...!’
সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালিঘাট ইউনিয়নে ফুলমণিদের উঠানে গিয়ে জানা গেছে, ফুলমণিরা তিন বোন। অন্য দুই বোনও শারীরিক সমস্যায় ভুগছে, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। কিছুই দেখতে পারে না তারা। বড় বোন মালতি। আর মেঝ গৌরির দৃষ্টিহীনতার পাশাপাশি পায়েও সমস্যা রয়েছে।
আর ফুলমণি সবার ছোট, সবার আদরের। তাই মায়া-মমতাও একটু বেশি। বাবার নাম গোলা তাতি। তিনি কাজ করেন চাবাগানের বড় সাহেবের বাংলোতে। ফুলমণিদের মায়ের নাম মায়া তাঁতি।
ছবি তোলার কথা বলতেই আনন্দ দেখা গেল ওদের চোখে-মুখে। গায়ে থাকা পুরনো, রংজ্বলা জামা পাল্টে নতুন জামা পরে নিলো। ফুলমণি তার অন্য দুই বোনকে জামা পরতে সাহায্য করলো, তাদের চুলও আঁচড়ে দিলো।
মেয়েদের সম্পর্কে কিছু জানতে চাইলে মায়া তাতির মুখে অভিমানের সুর- ‘আমাদের কথা আর কি জানতে চাইবেন বাবু? কে আমাদের খেয়াল রাখে? অসুস্থ তিন মেয়েকে নিয়ে বড় কষ্টে আছি’।
তিনি বলেন, ‘ফুলমণিরা প্রায় কাছাকাছি বয়সের। বছর দু’একের ছোট-বড় একে অন্যের চেয়ে। মালতি আর গৌরি তো চোখেই দেখতে পারে না। ফুলমণিই সব সময় ওই দুই বোনের খেয়াল রাখে। সংসারের সবকিছু সে একাই সামলাতে পারে। কিন্তু আমার এ সুন্দর মেয়েটিকে ঈশ্বর কথা বলার ক্ষমতা দেননি’।
‘প্রতিবন্ধীভাতা পায় কি-না’- প্রশ্নের উত্তরে মায়া তাতি বলেন, ‘তিন মেয়েরই ভাতা পাওয়ার কথা থাকলেও একজন পাচ্ছে’।
কালিঘাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান প্রাণেশ গোয়ালা বাংলানিউজকে বলেন, ‘তালিকা না দেখে এ মুহূর্তে বলতে পারছি না, ওরা প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে কি-না। তবে সবাইকে তো আর ভাতা দেওয়া সম্ভব নয়’।
‘প্রতিবন্ধিতা’র বিষয়টি জোর দিয়ে উত্থাপন করা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও কালিঘাট ইউপি চেয়ারম্যান।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০১ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০১৭
বিবিবি/এসএইচ