ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

হেস্টিংসের স্ত্রী, মেয়ের সমাধি ও একটি আর্মেনিয়ান চার্চ

এরশাদুল আলম প্রিন্স, ল’ এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১৭
হেস্টিংসের স্ত্রী, মেয়ের সমাধি ও একটি আর্মেনিয়ান চার্চ মুর্শিদাবাদের পথে পথে

মুর্শিদাবাদ ঘুরে: মুর্শিদাবাদের মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অনেক অজানা ইতিহাস। কিন্তু অধিকাংশ ঐতিহাসিক স্থান ও স্থাপনাই আজ অযত্নে অবহেলায় কোনোরকম তাদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। মুর্শিদাবাদ ভারত বর্ষের রাজনৈতিক ইতিহাসের পাদপীঠ। মুর্শিদাবাদ থেকেই ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসনের সূত্রপাত। 

ভারতে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠায় যারা পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেন ওয়ারেন হেস্টিংস তাদের অন্যতম। ওয়ারেন হেস্টিংস প্রথমে ফোর্ট উইলিয়ামের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ১৭৭২ থেকে ১৭৭৪ সাল পর্যন্ত।

এরপর তাকে গভর্নর জেনারেল নিয়োগ করা হয়। এ পদে তিনি ১৭৭৮ সাল থেকে ১৭৮৫ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। মুর্শিদাবাদ তখনও রাজধানীই ছিলো। ফলে ওয়ারেন হেস্টিংস বা অন্যান্য ব্রিটিশ প্রতিনিধিরা এখানে থেকেই কোম্পানির প্রতিনিধিত্ব করতেন।  

ব্রিটিশ সিমেট্রি

হেস্টিংসের সময়েই ভারতের নতুন নতুন এলাকা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হয়। এখানে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিস্তারে তার ভূমিকা অনেক।  

ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৫০ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একজন কর্মকর্তা হিসেবে কলকাতায় আসেন। সেসময় মুর্শিদাবাদের কাসিমবাজার ছিলো অন্যতম ব্যবসাকেন্দ্র। বিশেষ করে এখানকার রেশমি বস্ত্রের সুনাম শুধু ভারতবর্ষ নয়, ছড়িয়ে পড়েছিল বিশ্বব্যাপী। ব্রিটিশরা সে রেশমি বস্ত্র সংগ্রহের জন্য কাশিমবাজারে আসতো। সেই কাসিমবাজারেই ছিলো হেস্টিংসের কর্মস্থল।

১৭৫৬ সালে সিরাজউদ্দৌলা কলকাতা আক্রমণের উদ্দেশে রওয়ানা দেন। মুর্শিদাবাদ থেকে রওয়ানা দিয়ে প্রথমেই তিনি কাসিমবাজার আক্রমণ করেন। এসময় হেস্টিংস কাসিমবাজারেই ছিলেন। সিরাজের হাতে হেস্টিংস প্রথমে বন্দি হন ও পরে সেখান থেকে পালিয়ে যান।  

সিরাজের পর মীর জাফরের দরবারে হেস্টিংস কোম্পানির রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর আরও নানা উত্থান পতনের এক পর্যায়ে তিনি গভর্নর ও পরে গভর্নর জেনারেলও হন।  

হেস্টিংস এখানে মেরি নামে এক বিধবাকে বিয়ে করেন। হেস্টিংস ও মেরির দু’টি সন্তান হয় যারা খুব অল্প বয়সেই মারা যান।  

কাসিমজার রেলস্টেশনের লেভেল ক্রসিং পার হয়ে কিছুটা পথ গেলেই চোখে পড়বে একটি ব্রিটিশ সিমেট্রি। এই সিমেট্রিতেই শায়িত রয়েছেন হেস্টিংসের প্রথম স্ত্রী ও তার একটি কন্যা।  

ব্রিটিশ সিমেট্রি

এ সমাধিক্ষেত্রটি মূলত পলাশী যুদ্ধের পর যেসব ব্রিটিশ অফিসার মুর্শিদাবাদে ছিলেন তাদেরই। ওয়ারেনের স্ত্রী ও মেয়ে ছাড়াও এখানে আর যারা শায়িত রয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন- ডুগাল্ড ক্যাম্পবেল (১৭৮২), লায়ন প্রাগার (১৭৯৩), এনস্টুথার (১৭৩৫), এ. ডনি (১৭৮২), ক্যাপ্টেন হার্টি (১৭৮২), ক্যাপ্টেন ক্লার্ক (১৭৮৩) ও  জন পিস (১৭৯০।

মুর্শিদাবাদের অনেক ঐতিহাসিক স্মৃতিচিহ্নই আজ ধ্বংসপ্রাপ্ত। এ সমাধিক্ষেত্রটির অবস্থাও প্রায় সেরকমই। সমাধিক্ষেত্রগুলোর উপর যে নাম ফলক লেখা ছিলো তা সবই মুছে ফেলা হয়েছে। এখানকার স্থানীয় মানুষই এগুলো মুছে ফেলছে। নিতান্ত অবহেলা ও অসচেতনার ফলেই তারা এ কাজ করছে। এভাবে হয়তো একদিন বোঝাই যাবে না কোনটি কার সমাধি। ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের অন্যতম স্মারক এই সমাধি।  

ওয়ারেন হেস্টিংসের স্ত্রী ও মেয়ের সমাধি

সমাধির একেবারে শেষপ্রান্তে রয়েছে দুইটি সমাধি। এ দুইটিই ওয়ারেন হেস্টিংসের প্রথম স্ত্রী ও এক মেয়ে এলিজাবেথের সমাধি। মেয়েটি মাত্র দুই বছর বয়সে ১১ জুলাই ১৭৫৯ সালে মারা যায়। এ দুইটি সমাধির অবস্থা একটু ভালো, সেখান থেকেই এ ধারণা হলো। নামফলক দেখে বোঝার উপায় নেই।  

এটি বর্তমানে ভারত সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক সংরক্ষিত।  

আর্মেনিয়ান চার্চ

এই ব্রিটিশ সিমেট্রির কাছেই রয়েছে একটি আর্মেনিয়ান চার্চ। বহরমপুর শহরের উত্তর দিকে সৈয়দাবাদে একসময় আর্মেনিয়ানরা বসবাস করতো। পলাশীর যুদ্ধের পর তারা এখানে একটি গির্জা ও ভবন তৈরি করেছিল।  

আর্মেনিয়ান চার্চ

এটি সারাবছর বন্ধই থাকে। শুধু কোনো দর্শনার্থী গেলে পাশের বাড়িতে থাকা কেয়ারটেকার এসে গেটি খুলে ভেতরে নিয়ে যায়। ভেতরে ছিমছাম পরিবেশ। চারদিকে সাজানো গাছপালার মাঝেই রয়েছে এই চার্চটি।  

আর্মেনিয়ান চার্চ 

মাঝে মধ্যে কোনো বিদেশি এলে এখানে এসে ঘুরে যান আর প্রার্থনা করেন।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০১৭
এসএনএস

আগের পর্ব পড়ুন-
** ১ম পর্ব: এক যে ছিলো মুর্শিদাবাদ
** ২য় পর্ব: কলকাতা থেকে মুর্শিদাবাদ
** ৩য় পর্ব: মানুষ যে হায় ভুলে গেছে চির মধুর ভালোবাসা
** ৪র্থ পর্ব: চার ভাইয়ের বাগান বিলাস ও একটি গুপ্তপথ
** ৫ম পর্ব: জগৎশেঠকে সপরিবারে হত্যা করা হয় যে প্রাসাদে
** ৬ষ্ঠ পর্ব: নুরলদীনের ‘জাগো বাহে’ শোনা যায় নসীপুর প্রাসাদে
** ৭ম পর্ব: কিরীটেশ্বরী মন্দির ও জগদ্বন্ধু সুন্দরের আশ্রম
** ৮ম পর্ব: মুর্শিদকুলি খাঁর কলিজাখেকো মেয়ের সমাধি!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।