ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

বাঁশি তৈরিতে সমৃদ্ধ হোমনার শ্রীমুদ্দি গ্রাম

ইমতিয়াজ আহমেদ জিতু, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৮ ঘণ্টা, মে ২, ২০১৭
বাঁশি তৈরিতে সমৃদ্ধ হোমনার শ্রীমুদ্দি গ্রাম বাঁশি বানানোর কাজে ব্যস্ত কারিগররা- ছবি: বাংলানিউজ

কুমিল্লা: আমাদের সংস্কৃতির সভ্যতার একটি ঐহিত্যবাহী নিদর্শন কুমিল্লার হোমনা থানার শ্রীমুদ্দি গ্রামটি। যেখানে রয়েছে প্রায় দুইশ’ বছরেরও অধিককাল ধরে বাঁশের বাঁশি তৈরির ইতিহাস। এখানকার তৈরি বাঁশিতে সুর তুলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সুরকাররা।

বাঁশির গোড়াপতন যেভাবে: শ্রীমদ্দি গ্রামের মানুষের ঘুম ভাঙে বাঁশির সুর শুনে। গ্রামের ভেতর প্রবেশ করার সময়ই কানে ভেসে আসে বাঁশির অপূর্ব সুর।

গ্রামটি দু’টি পাড়ায় বিভক্ত। একটি টেকপাড়া অন্যটি ছনাইল কান্দিপাড়া।

টেকপাড়া মূলত: মুসলিম বসতি প্রধান। যে কারণে ছনাইল কান্দিপাড়াকে নুমুইল্লা পাড়াও বলা হয়। ১৮৮০-৮৫ সালের দিকে এই ছনাইল  কান্দিপাড়ায় শুরু হয় বাঁশের বাঁশি তৈরির কাজ। বর্তমানে এখানকার প্রায় ৫০টির বেশি পরিবার পূর্ব পুরুষের ঐতিহ্য লালন করে বাঁশের বাঁশি বানিয়ে কোনো মতে জীবিকা নির্বাহ করছে। টেকপাড়ার প্রায় দশটির মতো মুসলিম পরিবারও এখন বাঁশের বাঁশি তৈরি করছে। নবীন দাস ও কুলিন দাস নামে দুই বৈরাগী ভ্রাতা প্রথম এ কাজ শুরু করেন। বাংলাদেশের আর কোথাও বাঁশি তৈরির এমন পুরোনো ঐতিহ্য খুঁজে পাওয়া যায় না। পরবর্তীতে এ পেশা ছড়িয়ে পড়ে গ্রাম জুড়ে।  
বাঁশি বানানোর কাজে ব্যস্ত কারিগররা- ছবি: বাংলানিউজ বাঁশির রকমারি নাম: বাঁশির কারিগররা জানালেন, ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যায় তাদের তৈরি বাঁশি। এখানে নয় রকমের বাঁশি পাওয়া যায়। এর মধ্যে আছে পাখি বাঁশি, ভীন বাঁশি, মোহন বাঁশি, নাগিনী বাঁশি, ক্যালেনের বাঁশি, মুখ বাঁশি, মোহন বাঁশি বড়, আড় বাঁশি, বেলুন বাঁশি, ফেন্সি বাঁশি, হুইসেল বাঁশি ও চাবি রিং বাঁশি।
 
দেশ ও দেশের সীমানা পেরিয়ে শ্রীমদ্দির বাঁশি: বৈশাখী মেলা ছাড়াও হোমনার মিরাশের মেলা, শ্রীমদ্দি কালি বাড়ির মেলা, কচুয়ার সাচারের রথ মেলা, ধামরায়ের রথমেলা, মতলবের বেলতুলীর লেংটার মেলা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া খরমপুরের মেলা, চট্টগ্রামের জব্বারের বলী খেলা, নাঙ্গলবন্দের অষ্টমী স্নান, সাতক্ষীরার পূজার মেলা, কুষ্টিয়ার, গাজীপুরে মৌসুমী বাঁশি বিক্রি ছাড়াও প্রায় সাড়া বছরই দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, শহর, বন্দর, হাট-বাজারে তারা তাদের বাঁশিবিক্রয় করে থাকে।

মধ্যস্বত্বভোগীরা শ্রীমদ্দি থেকে বাঁশি কিনে পাঠাচ্ছেন মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, কুয়েত,সংযুক্ত আরব আমিরাত ,বাহরাইন,ওমান, মালয়েশিয়া, ইউরোপের ইতালি ,জার্মানি, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, স্পেন, নেদারল্যান্ড ,কানাডা , এশিয়ার জাপান , থাইল্যান্ড , সিঙ্গাপুর, আমেরিকাসহ আরো অনেক দেশে।

স্থানীয় সূত্র মতে, প্রতিমাসে এ গ্রামের ২২ পরিবারের দুই শতাধিক মানুষ তৈরি করে দুই লাখ বাঁশি। তার সর্বনিম্ন পাইকারি দাম দাঁড়ায় ১০ ল‍াখ টাকা। তা মাসিক হিসেবে কোটি টাকার ওপরে।

বাঁশি তৈরির বর্তমান অবস্থা: শ্রীমদ্দি গ্রামে এখন আর আগের মতো বাঁশি তৈরি হয় না। বর্তমানে বাঁশি তৈরিতে বেশি খরচ হওয়ার পরও পরিবারগুলো একদিকে ঐতিহ্য আর অন্যদিকে বিকল্প পেশা না থাকায় এটিকে আকঁড়ে ধরে আছেন।   বাঁশি তৈরির কারিগর লিটন চন্দ্র পাল বলেন, শত বছর আগে বাঁশি তৈরি শুরু হলেও এখন শুধু টিকে থাকার লড়াই চলছে।
বাঁশি বানানোর কাজে ব্যস্ত কারিগররা- ছবি: বাংলানিউজ
বাঁশি শিল্পী আবদুল খালেক জানান, রঙ কয়লা ও স্পিরিটসহ বাঁশি তৈরির সব উপকরণের দাম বেড়েছে। অনেকেই এখন ঋণের বোঝা সইতে না পেরে এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় মন দিচ্ছে। হয়তো এখনও হতে পারে শ্রীমুদ্দি গ্রামের লোকজন একদিন বাঁশি তৈরির কাজ ছেড়ে দেবে।

তাই বাঁশি শিল্পীদের সরকারের কাছে দাবি, সরকারি সামান্য সহযোগিতা পেলে তারা দেশের সুনাম বিদেশে বয়ে আনতে পারবে। তাই এখন সংশ্লিষ্ট সংস্থার এ দিকে সুনজর দেওয়া প্রয়োজন।  
 
বাংলাদেশ সময়: ০১৩১ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০১৭
এএটি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।