ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

মাথা নত করে বলি ‘মা আমার! মা আমার’

মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৩ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৭
মাথা নত করে বলি ‘মা আমার! মা আমার’

ঢাকা: যেখানেতে দেখি যাহা
মা-এর মতন আহা
একটি কথায় এত সুধা মেশা নাই
মায়ের মতন এত
আদর সোহাগ সে তো
আর কোনখানে কেহ পাইবে ভাই!
হেরিলে মায়ের মুখ
দূরে যায় সব দুখ...

কবি কাজী নজরুলের কয়েকটি লাইন মনে করিয়ে দেয়; ‘মা’ শব্দটির গভীরতা। পৃথিবীর সবচেয়ে অনুভূতি নিংড়ানো মধুর শব্দ ‘মা’।

যে শব্দে প্রশান্তি, ভালোবাসা ও আকুল আবেগ জড়ানো।

মায়ের ভালোবাসা কোনো দিক দিয়ে পরিমাপ করা যায় না। সন্তানের জন্য পৃথিবীর সকল স্থানে, ভিন্ন বেশে মমতার একই রূপ ‘মা’। মায়ের জন্য কখনই একটি দিন যথেষ্ট নয়। এরপরও মা দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য, জন্মদাত্রীর প্রতি যথাযথ সম্মান দেখানো। সারাবছর যে কথাটি বলা হয় না বা জড়তায়-দ্বিধায় বলতে পারি না, সেই কথাটি না হয় উপলক্ষ খুঁজে মুখ ফুটে বলা,  ‘মা'গো, ভালবাসি তোমায়’।

আমাদের সমাজে মা ও সন্তানের ভালোবাস‍া কখনও ধরা পড়ে শওকত ওসমানের জননীর ‘দরিয়াবিরি’ রূপে, যার নজির ভাসমান নারীর জীবনে বিদ্যমান। ‌আমরা রোগে ভুগি, আপদে বিপদে পড়ে ভাবি:  ‘প‍ৃথিবীতে আমি একা’। তখন মায়ের মুখটাই চোখে ভেসে ওঠে। চোখের দু’ফোঁটা পানির সঙ্গে ‘মা’ ডাক সব একাকিত্ব ও ব্যথা দূরে করে দেয়।

শৈশব হোক, বড়বেলা হোক সন্তান অসুস্থ হলে মায়ের খাওয়া-ঘুম সব হারাম। গ্রামবাংলার মায়ের এই রুপটি পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের কবিতায় ধরা পড়েছে তীব্রভাবে:
রাত থম থম স্তব্ধ, ঘোর-ঘোর-আন্ধার,
নিশ্বাস ফেলি, তাও শোনা যায়, নাই কোথা সাড়া কার।
রুগ্ন ছেলের শিয়রে বসিয়া একেলা জাগিছে মাতা,
করুণ চাহনি ঘুম ঘুম যেন ঢুলিছে চোখের পাতা।
শিয়রের কাছে নিবু নিবু দীপ ঘুরিয়া ঘুরিয়া জ্বলে,
তারি সাথে সাথে বিরহী মায়ের একেলা পরাণ দোলে।

সন্তানের জন্য মায়ের ভালাবাসা আর মায়ের জন্য সন্তানের আত্মার টান চিরায়ত। সন্তানের কাছে সবচেয়ে আপন হচ্ছেন মা। সন্তানের শৈশব ও কৈশোর কাটে মায়ের কাছে নানা আদর-আবদারে। কর্মস্থলে প্রবেশের পর নানা ব্যস্ততায় বা নিজের অজান্তে সন্তানের কাছে কিছুটা অবহেলিত হয়ে পড়েন মা। মাকে নিয়ে অব্যক্ত কথা ও  সুপ্ত ভালবাসা জেগে উঠে তখন যখন মা হয়ে যান ‘গত’।
তাই, সময় পেলে আসুন বলে উঠি:
‘...পদধূলি শিরে লয়ে মা’র;
মা’র বড় কেহ নাই
কেউ নাই কেউ নাই!
নত করি বল সবে
‘মা আমার! মা আমার। ’

 
বিশ্ব মা-দিবসের ইতিহাস শতবর্ষ পুরনো। যুক্তরাষ্ট্রে আনা জারভিস নামের এক নারী মায়েদের অনুপ্রাণিত করার মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্য সচেতন করে তুলতে উদ্যোগী হয়েছিলেন।

১৯০৫ সালে আনা জারভিস মারা গেলে তার মেয়ে আনা মারিয়া রিভস জারভিস মায়ের কাজকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য সচেষ্ট হন। ওই বছর তিনি তার সান ডে স্কুলে প্রথম এ দিনটি মাতৃ-দিবস হিসেবে পালন করেন।

১৯০৭ সালের এক রোববার আনা মারিয়া স্কুলে দেয়া বক্তব্যে মায়ের জন্য একটি দিবসের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করেন। ১৯১৪ সালের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেস মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এভাবেই শুরু হয় মা দিবসের যাত্রা।

এরই ধারাবাহিকতায় আমেরিকার পাশাপাশি মা দিবস এখন বাংলাদেশসহ শতাধিক দেশে মর্যাদার সঙ্গে দিবসটি পালিত হচ্ছে। তবে মা-দিবস বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন দিনে পালন। বাংলাদেশসহ বেশ কিছু দেশে ১৪ মে মা-দিবস পালন করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০২৩৫ ঘণ্টা, মে ১৪,২০১৭
এমসি/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।