ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

আষাঢ়ষ্য আনন্দ দিনের কথা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০৩ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৭
আষাঢ়ষ্য আনন্দ দিনের কথা ছবি: সংগৃহীত

এসেছে আষাঢ়। বইছে আষাঢ়ে বৃষ্টির আনন্দ ধারা। ‘এমন দিনে ঘরে থাকা দায়। এমন ঘণঘোর বরিষায়’- কবির সেই মর্মবাণী মনে রেখে স্মরি সেই দিনগুলোর কথা।

একদা গ্রামে যথা ছিলো বাস- এই আষাঢ়ের দিনগুলোয় তখন কেটেছে দুরন্ত শৈশব। আষাঢ় মানেই ঘরের টিনের চালে বৃষ্টি রিমঝিম।

সে বৃষ্টি দিনের বেলায় রোমাঞ্চকর বটে কিন্তু গভীর রাতে গায়ে দেয় কাটা ধরে, লাগে ভয়। পরিচিত শব্দটাই যেনো ভুতুরে হয়ে কানে বাজে। কাঁথা টেনে মায়ের কোলের দিকে আরেকটু এগিয়ে। ওম নিতে যতটা নয়, তার চেয়ে বেশি যেনো ভয় তাড়ানোর চেষ্টা। এভাবেই রাত এগোয় আষাঢ়ের। সুবেহ সাদিকের আলো ফোঁটে দেরি করে। তখনও টিনের চালে বৃষ্টি ট্যাপ ট্যাপ। ঘুম ভাঙা মায়ের মুখে ‘মরার বৃ্ষ্টি’ বলে প্রকৃতিকে মৃদু ভৎর্সনা। তবে কিশোর মনের জগতে তখন অনেক জল্পনা। ভোর হয়। ঘরে আর মন রয় না। ছুটে যেতে যায় মাঠে। ভোরবেলাতেই সেজে যায় দিনের পরিকল্পনা। আজ আর ক্লাস হবে না। দুই পিরিয়ডেই বাজবে ছুটির ঘণ্টা। এরপর শিক্ষক-ছাত্র মিলে জমবে ফুটবল। সারা গায়ে কাদামেখে পেটে ক্ষুধা ধরিয়ে তবেই শেষ হবে সে খেলা। এরপর গোসলের পালা। পুকুরে কিংবা নদীতে বৃষ্টির মাঝেই ঝাপাঝাপি। পুকুরে পানিতে ডুব দিয়ে বড় বড় বৃষ্টির ফোঁটা পড়ার অদ্ভুত শব্দ শোনা। ডিগবাজিতে পানিতে ঝাপিয়ে পড়া কিংবা পিচ্ছিল কাদার ওপর দিয়ে স্লিপ কেটে নামা। আনন্দের বন্যায় ভাসতে ভাসতে এসবের উপভোগ দুপুর পার করে দেয়া। দুপুরের খাবারের সাথে মায়ের অবধারিত বকুনিতে দ্বিগুন পেট ভরে বিকেলের মাঠে ছুটে যাওয়ার ক্ষণগণনা। বিকেলেও বৃষ্টির ছাট কমেনা, কিংবা সামান্য ধরে আসে শুধু। তাতেই দে ছুট। হা-ডু-ডু কিংবা দারিয়াবান্দার কোট যে ডাকছে তোমায়। হা-ডু-ডুর কোটে থকথকে কাদা মেখে খেলায় হার কিংবা জিত নিয়ে আরেক দফা পুকুরে কিংবা নদীতে ঝাপিয়ে তবেই বাড়ি ফেরা। সন্ধ্যায় ঘোর বৃষ্টি যখন আবার শুরু হয় তখন টানা রিমঝিম শব্দে কানে বাজে মধুর সুর। সে সুর ঘুম বয়ে আনে চোখে। আষাঢ়ের এই দিনগুলো হয় সত্যিই মধুর। আষাঢ়ে কিছু খাবার তৈরি হয় যা অন্য ঋতুতে কম মেলে। খই-চিড়া-ছোলা ভাজা। রান্নার লাকরি থাকে শ্যাতশ্যাতে তাতে চুলায় ফুঁক দিয়ে দিয়ে ধোয়া ছুটিয়ে নিবু নিবু আঁচে রান্না। তবে বর্ষার এই সামান্য কষ্ট ভূলে থাকে সবাই অন্য আনন্দে। বর্ষা মানেই মাঠে মাঠে পানি জমবে। পড়বে ফসলের চাষ। ডোবা নিচু জমিগুলোতে জমে থাকা পানিতে মিলবে মাছ। এই মওসুমে গাঁও গেরামের মানুষ বৃষ্টি কাদা ডিঙ্গিয়ে যাবে কাজে। চাষি মাথাল মাথায় নামবে মাঠের কাজে। বৃষ্টির মাঝেও সরসরম হয়ে উঠবে সব কিছু। গাঁয়ে গাঁয়ে জাগবে সারা। এভাবেই আষাঢ় আনন্দ ডেকে আনবে ধরায়। বৃষ্টি সবসময়ই প্রতিক্ষিত। বৃষ্টিতে চারিদিক হয়ে উঠবে আরও সবুজ। ঝিম ধরা এক সৌন্দর্য্য নিয়ে এগুবে আষাঢ়। শ্রাবণের অঝোর ধারার দিকে।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।