ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

মানুষের খুলি আর হাড়গোড়ে তৈরি যে ভয়ংকর দালান!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০১৭
মানুষের খুলি আর হাড়গোড়ে তৈরি যে ভয়ংকর দালান! মানুষের খুলি আর হাড়গোড়ে তৈরি টাওয়ার ; ছবি- সংগৃহীত

ঢাকা: মানব সভ্যতার ইতিহাস কখনো হাসায় আবার কখনো কাঁদায়। সপ্তাশ্চর্য পিরামিডের কথা সবাই জানি। পাথরের উপর পাথর বসিয়ে শ্রমে আর ঘামে তৈরি এক আশ্চর্য স্থাপনা। কিন্তু মানুষের খুলি দিয়ে তৈরি টাওয়ার বা মিনারের কথা কেউ কি কখনো ভেবেছেন?

অকল্পনীয়, নিষ্ঠুর কিংবা অমানবিক যাই মনে হোক না কেন এরকম খুলি দিয়ে তৈরি একটি উঁচু টাওয়ারের দেখা মিলেছে মেক্সিকোর রাজধানী মেক্সিকো সিটির এক পুরনো মন্দিরে। মানুষের হাড় আর খুলি দিয়ে তৈরি এ দালানের সন্ধান স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে আজটেক সাম্রাজ্যের ঘৃণ্য নরবলি প্রথার সংস্কৃতি।

শুধু পুরুষই নয় সেখানে দেখা মিলেছে মহিলা ও শিশুদের মাথার খুলিরও।

সন্ধান পাওয়া এই মন্দিরটির নাম ‘টেম্পলো মেয়র’, যা মেক্সিকোর আজটেক সভ্যতার তৎকালীন রাজধানী টেনোকটিটলান এ অবস্থিত। শহরটির বর্তমান নাম মেক্সিকো সিটি। নৃতাত্ত্বিকরা মন্দির খুঁড়ে দেয়ালে গাঁথুনি দেয়া ৬৫০টি খুলির সন্ধান পেয়েছেন। এছাড়াও সন্ধান মিলেছে টুকরো টুকরো হাজারো হাড়-গোড়ের।

ধারণা করা হচ্ছে মন্দিরটির দালান ‘হুয়ে জম্পানতলি’ রীতির অংশ বিশেষ, যেখানে নরবলি দেওয়া হতো। এখানে রয়েছে অসংখ্য মানুষের খুলি। হেরনান কোরটেজ এর অধীনে স্পেনিশ যোদ্ধারা যখন মেক্সিকো জয় করে তখন তারা এ মন্দির দেখে আঁতকে উঠেছিলেন। পরবর্তীতে তাদের বর্ণনায় এ রোমহর্ষক অভিজ্ঞতার কথা উঠে আসে।

ইতিহাসবিদরা জানিয়েছেন, স্পেনের মেক্সিকো বিজয়ের আগে মেসোআমেরিকানরা তাদের সংস্কৃতি অনুযায়ী যুদ্ধে হেরে যাওয়া সৈনিকদের শিরশ্ছেদ করা খুলি দিয়ে ‘হুয়ে জম্পানতলি’ তৈরি করতো।

পুরাতন মেক্সিকো সিটিতে নৃতাত্ত্বিকরা ২০১৫ সাল থেকে এ খনন কাজ শুরু করেন। খনন এখনো সম্পূর্ণ হয়নি, আরো অসংখ্য মাথার খুলি ও হাড়ের সন্ধান মিলতে পারে বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা।

খননের ঘটনা তদন্তকারী নৃতাত্ত্বিক রডরিগো বোলানোস বলেছেন, আমরা ধারণা করেছিলাম এগুলো পুরষদের খুলি হবে। বিশেষ করে তরুণ যোদ্ধাদের। কিন্তু নারী আর শিশুরাও যে যুদ্ধে গিয়েছিল তা আমাদের বিস্মিত করেছে।

তিনি বলেন, এখানে এমন কিছু ঘটেছে যা আমাদের ধারণার বাইরে। বিষয়টি একেবারেই নতুন এবং প্রথম।

টেম্পলো মন্দিরের খননে কাজ করছেন আরেক নৃতাত্ত্বিক রাউল বেরেরা। তিনি বলেছেন, ‘হুয়ে জম্পানতলি’ রীতির অনুষ্ঠান জনসম্মুখে সম্পন্ন করার পর বলির শিকার হওয়া ব্যক্তিদের দেহ দালানের মধ্যে বসিয়ে দেওয়া হয়। ছয় মিটার ব্যাসের এ দালানটি চ্যাপল অব হুইটজিলোপকটলি এর কোণায় অবস্থিত। যার পাশেই নীচে আজটেক সভ্যতার সূর্য, যুদ্ধ ও নরবলির দেবতার অবস্থান। এ জায়গাটিতে এখনো খনন বাকি রয়েছে।

বেরেরা বলেন, ১৫২১ সালে মেক্সিকো জয়ের প্রাক্কালে কোরটেজের সঙ্গী সৈনিক এনড্রেস দে তাপিয়া খুলির প্রাসাদের যে বর্ণনা দিয়েছিলেন এটা যে সেটাই তাতে কোন সন্দেহ নেই।

নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে স্পেনিশ সৈনিক তাপিয়া বলেছিলেন, ‘হুয়ে জম্পানতলি’ মন্দিরে হাজার হাজার মানুষের মাথার খুলি দেখেছিলাম আমি।  সূর্য দেবতাকে খুশি করতে আজটেক ও মেসোআমেরিকান সভ্যতার লোকেরা নরবলি করতো।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০১৭
জিওয়াই/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।