ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

ঐতিহ্য হারাচ্ছে পোড়াবাড়ির চমচম

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৩ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০১৭
ঐতিহ্য হারাচ্ছে পোড়াবাড়ির চমচম পোড়োবাড়ির চমচম

পাঁচ আনি বাজার (টাঙ্গাইল) ঘুরে এসে : এক সময় স্বাদ আর ঘ্রাণের জন্য বিখ্যাত ছিল পোড়াবাড়ির চমচম। তবে নানা কারণেই এখন মানুষের মুখে মুখে ঐতিহ্যবাহী এ মিষ্টির বন্দনা কমতে শুরু করেছে। নেই আগের মতো জৌলুসও। এমনটাই জানা গেলো স্থানীয়দের কাছ থেকে।

অবশ্য এ বিষয়টি অস্বীকার করেন না খোদ এ মিষ্টির কারিগররাও। তারাও বলেন, আগের মতো এখন আর দেশি গরুর খাঁটি দুধ পাওয়া কঠিন।

মূলত এ দুধে তৈরি হতো ছানা। আর ধলেশ্বরীর সেই পানির বিশেষত্বও যেন হারাতে বসেছে।

যশোরথ হালই এবং পরবর্তী পোড়াবাড়ির চমচম কারিগররা যে দুধ, পানি আর চিনিতে চমচম তৈরি করতেন সেগুলোর মানও কমেছে। ফলে বিরূপ প্রভাব পড়েছে চমচমের স্বাদেও।

ফলে পোড়াবাড়ির চমচমের স্বাদ, বৈচিত্র্য আর গন্ধ নিযে আর আগের মতো প্রশংসায় গদগদ করেন না ভোজন রসিকরা।

টাঙ্গাইল শহরের পাঁচআনি বাজারের কয়েকটি মিষ্টির দোকান ঘুরে দেখা গেলো, স্বাদ-ঘ্রাণে আগের সেই জৌলুস না থাকায় অনেকেই পোড়াবাড়ির চমচমের বদলে রসগোল্লা কিনছেন।

জয়কালী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে রসগোল্লা কিনতে আসা শফিকুল ইসলাম নামে এক মাছ ব্যবসায়ী বাংলানিউজের কাছে তুলে ধরেন চমচমের বদলে তার রসগোল্লা প্রীতির নেপথ্য কথা।

‘পোড়াবাড়িতে এখন আর চমচম তৈরি হয় না। সেখানকার দু’একটি দোকান আর এ বাজারের দোকানগুলোতে তৈরি চমচমের সেই স্বাদ পাওয়া যায় না। এ কারণে এ চমচমের জনপ্রিয়তাতেও ভাটা পড়েছে।

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন অনেকেই আসেন পোড়াবাড়ির চমচমের স্বাদ নিতে। কিন্তু মনভরানো তৃপ্তি না পাওয়ায় অনেকেই এ মিষ্টির ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন, এমনটাই জানান জয়দুর্গা মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে আসা অমল পাল নামে এক ক্রেতা।

তার ভাষ্য মতে- বাপ-দাদার মুখ থেকে শুনে এনেছি পোড়াবাড়ির চমচমের গুণগত মান নির্ভর করে মূলত ধলেশ্বরীর পানি আর গরুর খাঁটি দুধের ওপর। কিন্তু এ দু’টির কোনটিই আর নেই।

শুকনো মৌসুমে ধলেশ্বরী মরা গাঙ্গে পরিণত হয়। ফলে পোড়াবাড়ির চমচম তার ঐতিহ্য যেন হারিয়ে ফেলেছে।

জয়দুর্গা মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের কারিগর দিলীপ ঘোষ নিজেই বলেন, আগের আর এখনকার চমচমের স্বাদে হেরফের তো হবেই। এখন তো দেশি গরুর খাঁটি দুধ পাওয়াই দুষ্কর।

গাভীরাও এখন আগের মতো ঘাস, লতা-পাতা খায় না। দুধ আর পানির মান খারাপ হলেই স্বাদে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়।

স্থানীয়রা আবার পোড়াবাড়ির চমচমের ঐতিহ্য হারানোর জন্য এখানকার ব্যবসায়ীদের অতি বাণিজ্যিক মনোবৃত্তিকেও দায়ী করেন। তারা বলছেন, তাদের কারণেই পোড়াবাড়ির চমচম তার গৌরব হারাতে বসেছে।

স্থানীয়রা জানান, মিষ্টি কারিগররা দেশি গাভীর দুধে চমচম তৈরির কথা বললেও আদতে বিষয়টি ঠিক উল্টো। এখানে দেশি গাভীর দুধের আকাল চলছে।

ফলে নিজেদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে বিদেশি গাভীর দুধ কিনে ছানা তৈরির পর চমচম তৈরি করছেন। বিদেশি গাভীর দুধের কারণেই পোড়াবাড়ির চমচম তার চেনা স্বাদ হারাচ্ছে।

সরেজমিনে আরো ঘুরে দেখা গেছে, এখানকার বাজারের প্রতিটি মিষ্টির দোকানের ভেতরেই রয়েছে কারখানা। এসব কারখানার নোংরা, অপরিচ্ছন্ন ও স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশ।

এসব দোকানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কোন নজরদারি না থাকায় এমন পরিবেশেই প্রতিদিন উৎপাদিত হচ্ছে মণের পর মণ চমচম।

তবে মিষ্টির কারখানায় অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের বিষয়টি প্রায় সব দোকানিই এড়িয়ে গেছেন। এ বিষয়ে তারা কোন কথা বলতে রাজি হননি।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০১৭
এমএএএম/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।