ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

অন্যের জুতো সামলেই যাদের ঈদ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০১৭
অন্যের জুতো সামলেই যাদের ঈদ ঈদের জামাত চলাকালীন মসজিদের বাইরে জুতো পাহারা চলছে-ছবি-শুভ্রনীল সাগর

হায়দ্রাবাদ (মক্কা মসজিদ) থেকে: জয়নাব, মুশতাক, হাসিব, তহুরান্নেসা, আইয়ুব…। নামগুলো যেমন আলাদা; তেমনি আলাদা বয়স, লিঙ্গ, পেশা, গায়ের রঙ প্রভৃতি সবই আলাদা। কিন্তু একটি জায়গায় বড্ড মিল। তারা সবাই ‘দরিদ্র সীমার নিচে’ বসবাসকারী। 

ছোটবেলায় সমাজবিজ্ঞান বইয়ের অর্থনীতি অংশে পড়েছিলাম এই শব্দত্রয়। তখন গড়গড় মুখস্থের বয়স, অতোশত মাথায় ঢুকতো না।

থাক সে কথা, আসল কথায় আসি। কথায় কথায় আমরা বলে থাকি, সবকিছুর একটা সীমা আছে! তারা সেই সীমাও ছাড়িয়ে গেছেন।
 
অর্থনীতির পাতা থেকে তারা উঠে আসেন। তাদের দেখা যায় না এমন নয়। এরপরও বিশেষ দিনে দেখা হয়ে যায় হায়দ্রাবাদের বিখ্যাত মক্কা মসজিদে। পূণ্যভূমি মক্কা থেকে আনা মাটির তৈরি ইট দিয়ে এই মসজিদ বানানো, এজন্য নাম মক্কা মসজিদ। প্রায় ৪শ বছর আগেকার এ নয়নাভিরাম স্থাপত্য নিদর্শনটি ভারতের সবচেয়ে পুরনো মসজিদের একটি।

ঈদের জামাত চলাকালীন মসজিদের বাইরে জুতো পাহারা চলছে-ছবি-শুভ্রনীল সাগর
দেশে দেশে পালিত হচ্ছে পবিত্র ঈদ-উল-আজহা। সেই ঢেউ এসে লাগে তেলেঙ্গানা রাজ্যের রাজধানীতেও। মহা উৎসাহ-উদ্দীপনায় যে যার মতো পালন করছে ঈদ। ঈদ আসে জয়নাব-আইয়ুবদেরও।
 
আলো ফুটতেই সবার তোড়জোড়। নতুন কাপড়, মন মাতানো সুগন্ধি। বাড়িতে বাড়িতে জিভে জল আনা মণ্ডা-মিঠাই-বিরিয়ানি। হায়দ্রাবাদে ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য মক্কা মসজিদের খুব কদর। যথারীতি মসজিদ প্রাঙ্গণে আসতে থাকে ছেলে থেকে বুড়ো। মাথায় টুপি, হাতে জায়নামাজ। সেলফিও চলে দেদারসে। চারদিকে কতো আনন্দ!
 
ঐতিহাসিক এ মসজিদ প্রাঙ্গণে আসে তারাও, তবে হাতে দড়ির পুঁটলি নিয়ে। মক্কা মসজিদে একসঙ্গে ১০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। ঈদের দিনে বেড়ে যায় আরও। ১০ হাজারই ধরা যাক, এর মানে ততো জোড়া জুতো।

ঈদের জামাত চলাকালীন মসজিদের বাইরে জুতো পাহারা চলছে-ছবি-শুভ্রনীল সাগরহ্যাঁ, শুরুর লাইনের নামধারীরা বসে যান মসজিদের বিভিন্ন প্রবেশমুখে। এতো এতো মানুষের ভিড়, সাধের নতুন জুতোটির কী হবে! চিন্তা নেই, হাসিব, তহুরান্নেসারা রয়েছেন। সযত্নে জুতো ভাঁজ করে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখবেন, হাতে ধরিয়ে দেবেন একটি নম্বর লেখা টোকেন। ফিরতি পথে পাঁচ-দশ রুপি, যার যা খুশি। অনেকের টোকেনও নেই। ঈদের দিন তাই সামান্য দড়ি জোগাড় করেই চলে এসেছেন— ঘণ্টা দুয়েক বসেই কিছু টাকা হয়ে যাবে, এদিনের চুলোটা ভালোভাবে জ্বলবে।
 
তারা সবাই আসলে প্রান্তিক দিনমজুর। কেউ বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন, কেউ হোটেল বা দোকানের কামলা। বছরের দুই ঈদে একটু বাড়তি আয়। তাও বাড়তি আর কই! ওই টাকা ‘খাদ্য’তেই বেরিয়ে যাবে, বাকি চার মৌলিক চাহিদার কথা না তোলাই ভালো।
 
ঈদ আসে ঈদ যায়। জয়নাবের বয়স ষাট ছাড়ায়। কিন্তু ‘ঈদ মানে আনন্দ’ তাদের সীমারেখায় ভুলেও পথ মাড়ায় না। তারা যে দারিদ্র্য সীমার নিচে। গোটা অর্থনীতির যাবতীয় রেখা তাদের মাথার উপর গেড়ে বসে রয়েছে, তারা মাথা তুলবেনই বা কী করে। যাকগে, সেসব বড় বড় কথা।

ঈদের জামাত চলাকালীন মসজিদের বাইরে জুতো পাহারা চলছে-ছবি-শুভ্রনীল সাগর
এরপরও ঈদ মানে আনন্দ। ছোট্ট বাবুটার নতুন কাপড়ের আনন্দ, খাদ্য রসিকদের সেমাই-কোর্মা-পোলাও। বাবার ছেলেকে নিয়ে নামাজে যাওয়া, বাড়িময় স্বজনের গমগম, সবার খুশি দেখে উদয়াস্ত খেটেও মায়ের আনন্দ।
 
আনন্দ-জয়নাব, মুশতাক, হাসিব, তহুরান্নেসা, আইয়ুবদেরও। যতো বেশি জুতো, ততো বেশি ঈদের আনন্দ।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৭
এসএনএস
 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।