ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

নিজাম-উল-হায়দ্রাবাদের রাজপ্রাসাদে একদিন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৭
নিজাম-উল-হায়দ্রাবাদের রাজপ্রাসাদে একদিন ঝরনা ও বাগান সজ্জিত চৌমহল্লা প্যালেস, ছবি: শুভ্রনীল সাগর

হায়দ্রাবাদ থেকে: যখন তাদের সময় ছিলো তখন কতো প্রভাব-প্রতিপত্তি নিয়েই না জীবনকে যাপন করেছেন। আস্তাবলে ঘোড়া, হাতিশালায় হাতি। দাফতরিকভাবে মুঘলদের পরে তারাই ছিলেন ভারতের সবচেয়ে ধনী পরিবার। তাদের পাবিবারিক আভিজাত্য আর সৌখিনতার কথা রানি ভিক্টোরিয়ার কানেও পৌঁছে গিয়েছিল।

কিন্তু যা হয় আরকি, এখন আর সেই ‘রামও নেই, সেই অযোধ্যাও নেই’। সামন্তীয় তথা রাজতন্ত্রের পাঠ চুকিয়ে ভারতে এখন গণতান্ত্রিক শাসন।

তাদের গল্পগুলো ঠাঁই নিয়েছে ইতিহাসের পাতায়। কিন্তু হায়দ্রাবাদের স্টেটের নিজাম অর্থাৎ শাসকদের কীর্তি ও আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে এখনও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে ‘চৌমহল্লা প্যালেস’।

শাব্দিক অর্থে চৌ মানে চার, অর্থাৎ চৌমহল্লা মানে চার প্রাসাদ। প্রাসাদ মানেই পুরনো ভবন, পুরনো দিন। সেই ১৭০০ সালের কথা। উত্তর দিকের প্রাসাদ, ছবি: শুভ্রনীল সাগরমুঘল সাম্রাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলের (বর্তমান তেলেঙ্গানা ও কর্ণাটকা রাজ্য) রাজপ্রতিনিধি ছিলেন মীর কামার-উদ-দীন সিদ্দিকী।

১৭০৭ সালে সম্রাট আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর এসব অঞ্চলে মুঘলদের আধিপত্য আলগা হতে শুরু করে। ১৭২৪ সালে মীর কামার-উদ-দীন নিজেকে স্বাধীন ঘোষণা করে হায়দ্রাবাদে নিজের রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তার মাধ্যমে শুরু হয় নতুন ‘আসাফ জাহ’ রাজবংশ। উপাধি নেন, নিজাম-উল-মুল্‌ক তথা মুল্‌কের (হায়দ্রাবাদ) নিজাম। নিজাম অর্থ শাসক। তিনি ছিলেন এই রাজবংশের প্রথম আসাফ জাহ। দরবার হল ছবি: শুভ্রনীল সাগরমুঘলদের রাজপ্রতিনিধি ছিলেন; বলাই বাহুল্য, সীমাহীন সৌখিনতা ও আভিজাত্য ছিলো তার রক্তে। ধীরে ধীরে শান-শওকত বাড়াতে লাগলেন। মীর কামার-উদ-দীন মারা যান ১৭৪৮ সালে।

চৌমহল্লা প্যালেসের কাজ শুরু হয় আর দুই বছর অর্থাৎ ১৭৫০ সালে। তার ছেলে মীর সাঈদ মুহাম্মাদ খান (সালাবত জং) প্রথম প্রাসাদ প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু করলেও নানা কারণে শেষ হয় প্রায় ১শ বছর পরে ১৮৫৭ থেকে ১৮৬৯ সালের মধ্যে। এর মধ্যে নিজাম-উল-মুল্‌ক হয়েছেন আরও তিনজন। পুরোপুরিভাবে প্রাসাদ চালু হয় পঞ্চম আসাফ জাহ আফজাদ আদ-দৌলার আমলে।  ক্লক টাওয়ার, ছবি: শুভ্রনীল সাগমূল প্রাসাদ চারটি হলেও রয়েছে আরও অনেকগুলো ভবন। ইন্দো-পার্সি স্থাপত্যের মিশেলে বানানো প্রাসাদগুলো মনে করিয়ে দেয়ে নিজামদের স্বর্ণযুগের কথা। প্রায় আড়াইশো বছর পরও এর নয়নাভিরাম সৌন্দর্য, নান্দনিক কারুকাজ, নিজামদের স্মৃতিধন্য সৌখিনতার নমুনা পর্যটকদের বিস্মিত করে তোলে। লম্বা করডোর আর গম্বুজের মিলমিশ, উনিশটি ঝাড়বাতিওয়ালা দরবার হল চৌমহল্লা প্রাসাদের বিশেষত্ব।

এমনি এমনি তো আর চৌমহল্লা প্যালেসকে ইউনেস্কোর তার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ‘এশিয়া প্যাসিফিক মেরিট অ্যাওয়ার্ড ফর কালচারাল হেরিটেজ’ দেয়নি! ২০১০ সালের ১৫ মার্চ ইউনেস্কো প্রতিনিধি তাকাহিকো মাকিনো আনুষ্ঠানিকভাবে আসাফ জাহ রাজবংশের শেষ নিজাম মুকাররাম জাহ বাহাদুরের প্রাক্তন স্ত্রী রাজকুমারী এসরার হাতে সনদ তুলে দেন। অনেকগুলো প্রবেশদ্বারের একটি, ছবি: শুভ্রনীল সাগরচারটি প্রাসাদ ছাড়াও রয়েছে রয়েছে উত্তর ও দক্ষিণমুখী দু’টি চত্বর। চত্বরের মাঝখানে কৃত্রিম হৃদ ও ঝরনা। এর চারপাশ ঘিরে সুদৃশ্য বাগান। আরও রয়েছে- খিলওয়াত মুবারাক, কাউন্সিল হল, ক্লক টাওয়ার, রোশন বাংলো, বাগ্গি খানা প্রভৃতি। এসবের বিস্তারিত গল্প আরেকদিন।

শুরুর দিকে চৌমহল্লা প্যালেস ৪৫ একরের উপর প্রতিষ্টিত হলেও কালের বিবর্তনে এখন রয়েছে মাত্র ১২ একর। বাকি জমি দখল হয়ে গেছে নানাভাবে। মূল চার প্রাসাদ এখন জাদুঘর। নিজামদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র, আস্ত্র-শস্ত্র, ছবি, বই, নথি ইত্যাদি স্বর্ণালী সময়ের সাক্ষী হয়ে শোভা পাচ্ছে সেখানে। রোজ শত শত পর্যটক ভিড় করে সেসব দেখতে।

নিজামদের হাতেই গড়া হায়দ্রাবাদের অন্য দুই ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন চারমিনার ও মক্কা মসজিদের খুব কাছেই চৌমহল্লা প্যালেস। চারমিনার থেকে মাত্র ৭শ-৮শ মিটার। দক্ষিণ দিকের প্রাসাদ, ছবি: শুভ্রনীল সাগরহেঁটেই যাওয়া যাবে। শহরের যেকোনো স্থান থেকে ক্যাব ভাড়া করে যাওয়া যাবে। সহজে যাওয়া যাবে ট্রেনেও। এজন্য নামতে হবে হায়দ্রাবাদ স্টেশনে। এটি নামপল্লী স্টেশন নামেও পরিচিত। স্টেশন থেকে মসজিদ প্রায় পাঁচ কিমি। যাওয়া যাবে ক্যাব বা অটোরিকশায়।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৭
এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।