ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

পদ্মার চরে শরতের লুটোপুটি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩, ২০১৭
পদ্মার চরে শরতের লুটোপুটি পদ্মার চরে শরতের লুটোপুটি

মাদারীপুর: শরত যেন লুটোপুটি খাচ্ছে পদ্মার চরে। পুরো চরজুড়ে শুভ্রতার ছড়াছড়ি। যেদিকে চোখ যায় শুধু কাশবন আর কাশবন। তাতে মাথা তুলে দাঁড়ানো শীষের মতো সাদা ফুলের বাতাসে দোল খাওয়ার দৃশ্য। এ যেন এক অন্যরকম সৌন্দর্য। পদ্মার চরে না আসলে বোঝার উপায় নেই প্রকৃতিতে এখন শরৎ।

মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার কোল ঘেঁষে বয়ে চলেছে পদ্মা। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের যোগাযোগের অন্যতম নৌপথ কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া রুট।

শিবচরের কাঁঠালবাড়ী দিয়ে পদ্মা পার হলেই মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট।

কাঁঠালবাড়ী ঘাট থেকে শিমুলিয়া ঘাটের দূরত্বের বেশির ভাগ অংশেই রয়েছে ক্যানেলের মতো নদীপথ। আর এই ক্যানেল পথ পার হয়ে মূল নদী। দীর্ঘ এই নৌ পথের ক্যানেলের মতো অংশের দুই পাড়ে রয়েছে সুবিশাল চর। এই ক্যানেল পথ দিয়েই লঞ্চ, স্পিডবোট ও ফেরিযোগে যেতে হয় শিমুলিয়া ঘাটে। আর এই নৌপথের দুইপাড় জুড়ে এখন শুধুই সাদা আর সাদা । ঘর কাঁশফুলে ছেয়ে আছে নদীর দুই পাড়।

লঞ্চ ও ফেরিতে করে যারা ঢাকায় যাচ্ছেন বা এই নৌপথ পাড়ি দিচ্ছেন তাদের জন্য প্রকৃতির এক অনন্য সৌন্দর্য এখন পদ্মাজুড়ে। বেশ সময় ধরে বসে থাকার ক্লান্তি দূর হয়ে যাচ্ছে কাশবনের সৌন্দর্য দেখে দেখে। অনেকে আবার সেলফোনে ধারণ করে নিচ্ছেন দিগন্ত বিস্তৃত কাশবনের চিত্র।

গত ত্রিশ সেপ্টেম্বর শনিবার। বহুল কাঙ্খিত পদ্মাসেতুর প্রথম স্প্যান বসানো হলো। ফলে মাথা তুলে দাঁড়ালো পদ্মাসেতু। অনেক দূর থেকেও স্পষ্ট দেখা যায় সেতুর এই অংশ বিশেষ। পদ্মাসেতু দেখতে এসে পদ্মার চরের কাশবনের দৃশ্য বাড়তি পাওনা হিসেবে যোগ হচ্ছে দর্শনার্থীদের জন্য। নৌকা, ট্রলার, স্পিডবোটে করে পদ্মার মৃদু ঢেউতোলা জলে পরন্ত বিকেল কাটাচ্ছেন অনেকেই। চোখ জুড়িয়ে দেখছেন কাশফুল, পদ্মানদীর স্বচ্ছ জল, নীলকাশে সাদা মেঘের ভেলা।

তবে ঢাকাগামী যাত্রীদের কাছে পদ্মার দুইপাশের চরের কাশবন অপার ভালো লাগায় পরিণত হয়েছে এই মৌসুমে।

মাদারীপুর থেকে ঢাকাগামী যাত্রী শুভ চৌধুরী বলেন,‘কাঁঠালবাড়ী ঘাট থেকে ফেরিতে করে শিমুলিয়া ঘাটে যাচ্ছিলেন তিনি। সাধারণত ফেরিতে দুই ঘণ্টার মতো সময় বসে থাকা সবসময়ই ছিল বিরক্তিকর। কিন্তু আজকে বিরক্তির ছিটেফোঁটাও ছিলো না। অবাক হয়ে গেছি পদ্মার দুইপাশ জুড়ে এতো কাশফুল দেখে। ঘন সাদা মেঘের মতো বাতাসে দোল খাচ্ছে। মুগ্ধ হয়ে কাশফুল দেখতে দেখতে কখন যে শিমুলিয়া এসে পৌছেছেন টেরই পাননি। ’

তিনি আরো বলেন,‘শীতকাল আসলে এমনিতেই বোঝা যায়। ঠান্ডা লাগে, কুয়াশা পড়ে। এছাড়া কদম ফুল ফুটলে মনে হয় বর্ষা, শিমুল, কৃষ্ণচূড়া জানান দেয় বসন্তের। আর এই কাশফুল দেখলেই মনে পরে দেশে এখন শরৎকাল। ’

ঢাকাগামী অপর এক যাত্রী মায়িশা বলেন,‘কাঁঠালবাড়ী ঘাট থেকে মূল পদ্মানদীতে পৌছানোর আগ পর্যন্ত নদী পথের দুইধারে এতো কাশফুল যে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। মনে হয় সাদা মেঘ নেমে এসেছে নদীর পাড়ে। আসলে এই সোন্দর্যে নৌপথের ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। ’

শরতের আকাশে সাদা কালো মেঘের হালকা বাতাসে ভেসে বেড়ানো। পদ্মার জলে জলযানের ঢেউ। মৃদু বাতাস প্রকৃতিতে। আর নদীর পারজুড়ে কাশবনের ক্ষেত। পুরো চর এই মৌসুমে ফুলে ফুলে ছেয়ে যায়। ফুল পরে গেলে এই কাশফুলে বীজ আসে। বীজসহ কাশেফুলের ছড়া কেটে নেয় কৃষকেরা। গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও এই কাশফুলের পাতাও বিক্রি হয় ঝাড়– তৈরিতে। আবার কাশফুলের পাতা দিয়ে চরের ছোট ছোট ঘরের ছাউনীও তৈরি করে পদ্মার চরে বসবাসরত মানুষেরা। বাণিজ্যিক ভাবে গ্রামীন হাট-বাজারে বিক্রি হয় কাশফুলের পাতা। তবে শরতের এই সময়ে নদীতীরে কাশফুলের মুগ্ধকর সৌন্দর্য কিছুটা ক্লান্তি ভুলিয়ে দেয় ব্যস্ত মানুষের। কিছুটা ভাবুক করে তোলে কিছু সময়ের জন্য। মিশে যেতে ইচ্ছে করে প্রকৃতির সাথে!

বাংলাদেশ সময়: ০৩৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০১৭
বিএস 
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।