ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

রিং, তলোয়ার থেকে ৫২ তাস! 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৭
রিং, তলোয়ার থেকে ৫২ তাস!  তাস

ঢাকা: অবসরে তাস খেলতে কে না ভালোবাসে! কিন্তু যে তাসের প্রতি আমাদের এতো নেশা, তার উৎপত্তি সম্পর্কে কতটা জানি আমরা!

তাসের উৎপত্তির পেছনে রয়েছে বিচিত্র কাহিনি আর নানা রকমের জনশ্রুতি। ধারণা করা হয়, নবম শতকের দিকে চীনে সর্বপ্রথম তাস খেলার প্রচলন ঘটে।

সে সময় ‘শাং’ রাজবংশের প্রথম রাজা ‘তাং’ রাজার রাজত্বকালে অন্তঃপুরবাসী নারীরা তাস খেলে সময় অলস কাটাতেন। খেলার তাস হিসেবে তখন কাগজের বদলে ব্যবহার করা হতো পয়সা এবং নানা রকমের প্লেট বা ধাতব পাত।
তুরপানের কাছে প্রাপ্ত ১৪০০ খ্রিস্টাব্দের চীনা লিপিতে খোদাই করা তাস।  ছবি- উইকিপিডিয়া
বাণিজ্যিক কারণে সে সময় চীন ছিল মধ্য এশিয়ার সবচে অগ্রগণ্য দেশ। ফলে মধ্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশে চীনা বণিকদের মাধ্যমেই খেলাটির প্রচলন হয় বলে ধারণা করা হয়। ভৌগোলিক নৈকট্যের কারণে সে সময়েই এ খেলা ভারতবর্ষেও ছড়িয়ে পড়ে। রিং, তলোয়ার, কাপ সহ বিভিন্ন বস্তু খেলার তাস হিসেবে ব্যবহার করা হতো তখন। এরপর ১২৯৪ সালে কাগজ ও ছাপাখানার প্রচলনের পর তাস ধারণ করে কাগুজে আকার।

ইউরোপে তাস খেলার প্রচলন ঘটে খ্রিস্টীয় চতুর্দশ শতকে। জনশ্রুতি আছে, একদা একদল বণিক যাত্রাপথে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছিলেন, ‘হে বন্ধুরা, আমি এ-মুহূর্তে কি দেখছি তা অনুমান করে বলো তো দেখি!’

অনুমান করার এ ধারণা অনুযায়ী সময় পার করতেই তখন কিছু কাঠামো তৈরি করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। যাতে করে এ খেলার মধ্য দিয়ে তারা নিজেদের অবসর পার করতে পারেন। এরপর এই বণিকদের মাধ্যমেই খেলাটি ছড়িয়ে যায় ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে।

অপরদিকে বর্তমান সময়ে যে ৫২ তাসের চল, তার প্রচলন ঘটে মিসরে। তারা এ তাস চারজন মিলে খেলত। মিশরের ‘মামলুক’ শাসকরা এ খেলার নাম দিয়েছিলেন ‘নাব’। অনেকে একে ‘নাইবি’ অথবা ‘নাইপ’ বলেও আখ্যায়িত করতেন। মামলুকরা এ বায়ান্ন তাসের খেলার প্রচলন করেছিলেন খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতকে।

এসময় তাসের নামে ও প্রতীকেও ছিল ভিন্নতা। তারা এক থেকে দশ নং তাসকে কোর্ট কার্ড হিসেবে ধরে ‘কিং’ ‘কুইন’ এবং ‘ভিজির’ চিহ্নিত কার্ড রাখত। ‘ভিজির’ একটি রুশ শব্দ, যার অর্থ হল উজির। মামলুক সম্রাটের উজির নাইয়িব এ খেলায় অনেক পৃষ্ঠপোষকতা করতেন বলে তার নামানুসারেই মিশরে তখন এ খেলার প্রসার ঘটে।
ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত ত্রয়োদশ শতকের নারীদের তাস খেলার একটি দৃশ্য।  ছবি- সংগৃহীতঊনিশ শতকের আগ পর্যন্ত এ খেলা রাজপরিবার ও সৈন্য-সামন্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে জার্মানির রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কার্ডের নামেও আসে পরিবর্তন। প্রথম দিকে তাসের প্যাকেটে ৭৮টি তাস থাকত। কিন্তু এতো বেশি তাস নিয়ে খেলা জটিল ও কষ্টকর হয়ে ওঠায় তাসের সংখ্যা কমিয়ে আনা হয় সে সময়েই।

পারস্য দেশে তাসের আগমনকাল সম্পর্কে সঠিক ইতিহাস জানা যায় না। তবে হতে পারে সিল্ক রোড অথবা ত্রয়োদশ শতকে মোঙ্গলদের হাত ধরে পারস্যে তাসের আগমন ঘটে। পারস্যের তাসে (যা সেখানে গানজেফা বা গানজাফা নামে পরিচিত) আটপ্রকার চিহ্ন বা প্রতীকের উপস্থিতি। ১৬ শতকের প্রথমদিকে মোগলরাও ভারতে একপ্রকার তাসের আবির্ভাব ঘটান। ভারতেও তখন তাসকে পারস্যের মতো ‘গানজাফা’ নামে ডাকা হতো।
পঞ্চদশ শতকে তাস খেলছেন রাজ মহলের বাসিন্দারা।  ছবি- সংগৃহীত
সময়ের সাথে সাথে বিবর্তন ঘটে ইতিহাসেরও। সমাজ ও সংস্কৃতির ভিন্নতায় বিভিন্ন দেশে এ খেলার প্রচলন এবং প্রসার হয় বিভিন্নভাবে। সেদিক থেকে ইতালি, স্পেন, জার্মানি ও ফ্রান্স তাসের নানামুখি বিবর্তনের অগ্রদূত হিসেবে খ্যাত হবার যোগ্য দাবিদার।  

আমরা বর্তমান সময়ে যে তাস ব্যবহার করছি তা ফ্রান্সের তাসের সঙ্গে বেশ সঙ্গতিপূর্ণ। তাদের যে প্রতীকগুলোর নাম হার্টস, ডায়মন্ড, স্পেইড আর ক্লাবস, বাংলায় আমরা সেগুলোকে বলি হরতন, রুইতন, ইসকাপন ও চিরতন।

বাংলাদেশ সময়: ০০৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৭
এইচএমএস/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।