ঢাকা, সোমবার, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ১০ রবিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

ঐতিহ্যের খেজুর রসে শীতের পদধ্বনি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৭
ঐতিহ্যের খেজুর রসে শীতের পদধ্বনি রস সংগ্রহের প্রস্তুতি হিসেবে খেজুর গাছ পরিষ্কার করছেন গাছি; ছবি-আরিফ জাহান

বগুড়া: আবহমান গ্রাম বাংলার অনেক ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে আজ। তবে খেজুর গাছের রস সেই ঐতিহ্যের একটা অংশ হিসেবে টিকে রয়েছে এখনও। ব্যাপক পরিসরে না হলেও সীমিত আকারে প্রত্যেক বছরের শীত মৌসুমেই দেখা মেলে এই খেজুর রসের।

কার্তিক-অগ্রহায়ণ হেমন্তকাল। হেমন্তের আগমনে পদধ্বনি পাওয়া যায় শীতের।

ঋতুবৈচিত্রের ধারায় প্রকৃতিতে ফোঁটায় ফোঁটায় শিশির বিন্দু গায়ে জড়িয়ে আসে শীত। আর শীতের সঙ্গে সম্পর্ক খেজুর রসের।

হেমন্তকালেই শুরু হয় গাছিদের তোড়জোড়। রস আহরণে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন তারা। ইতোমধ্যেই গ্রামাঞ্চলে গাছিরা খেজুর গাছ থেকে রস নামানোর কাজে নেমে পড়েছেন। বগুড়ার ১২টি উপজেলার মধ্যে কাহালু, শাজাহানপুর, নন্দীগ্রাম, আদমদীঘি, শেরপুর বরেন্দ্রখ্যাত উপজেলা হিসেবে পরিচিত।
 
এসব উপজেলাসহ অন্য উপজেলা মিলে বগুড়ায় প্রায় অর্ধলাখের মত খেজুর গাছ রয়েছে বলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়। তবে কালের আবর্তে খেজুর গাছের সংখ্যা কমছে আশঙ্কাজনক হারে।
 
সরেজমিনে দেখা যায়, গাছিরা প্রথমে গাছের মাথা থেকে ডালপালা কেটে পরিষ্কার করে নেন। পরে নির্দিষ্ট স্থান হালকা করে কয়েকদিন পরপর কেটে পরিষ্কার করেন তারা। খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করছেন গাছি; ছবি- আরিফ জাহান এ কাজে গাছিরা ছ্যান (স্থানীয় ভাষায়) নামের ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করেন। এক্ষেত্রে খেজুর গাছের সঙ্গে নিজেদের শক্তভাবে দড়ি দিয়ে বেঁধে নেন তারা। তাদের সঙ্গে থাকে বাঁশের তৈরি পাত্র। যার ভেতর থাকে গাছ পরিষ্কার করার বিভিন্ন সরঞ্জামাদি।
 
গাছ তৈরির প্রস্তুতি সম্পন্ন করার পর থেকেই মূলত রস নামানোর পর্বটা শুরু হয়। গাছের মাথার নির্দিষ্ট স্থানে বাঁশের বানানো দু’টি চোখা খুঁটি পোতা হয়। সঙ্গে দড়ি বা সুতা বেঁধে মাটির পাত্র ঝুলে দেওয়া হয়। পাত্রের ভেতর রস পড়ার জন্য বাঁশের তৈরি নালার মত ভিন্ন একটি খুঁটি পুতে দেওয়া হয় সেই গাছের মাথায়। এভাবেই গাছির নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরে খেজুর রস।
 
খেজুর রস বড়ই মধুর। শীতের সকালে মানুষ খেজুর রসে মুড়ি মাখিয়ে খান। গ্রামে গ্রামে চলে খেজুর রসের পায়েস, পিঠা-পুলি তৈরির ধুম। জামাই-মেয়ে ও স্বজনদের নিমন্ত্রণ করে বাড়ি বাড়ি চলে শীতের বাহারি পিঠা উৎসব। খেজুর রসে বানানো হয় নালী, দানাদার ও পাটালি গুড়ও।

গাছি আব্দুল জব্বার, মফিজ উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, গাছের মাথা হালকাভাবে ছেটে দিয়ে প্রতিদিন বিকেলে নির্ধারিত স্থানে মাটির পাত্র ঝুলিয়ে দেয়া হয়। পরদিন ভোরে গাছ থেকে পাত্র নামিয়ে আনা হয়। গাছভেদে ৪-৫ কেজি হারে রস পাওয়া যায়। সপ্তাহে ২-৩দিন পরপর রস সংগ্রহ করা হয়। এতে বেশি পরিমাণ রস পাওয়া যায়।    
 
এসব গাছিরা জানান, বাণিজ্যিকভাবে কেউ খেজুর গাছ লাগায় না। প্রাকৃতিকভাবেই এসব খেজুর গাছ জন্ম নিয়েছে। পতিত জমি, ভিটা, জমির আইলসহ বিভিন্ন স্থানে এসব খেজুর গাছের দেখা মেলে। একটি সময় এ জেলায় বিপুল সংখ্যক খেজুর গাছ ছিলো। প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে মানুষ সিংহভাগ খেজুর গাছ কেটে ফেলেছেন বলেও জানান তারা।
 
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কার্যালয়ের হর্টিকালচার সেন্টারের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে জানান, নভেম্বর থেকে শুরু করে মোটামুটি ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খেজুর রস সংগ্রহ করা যায়। ইতোমধ্যেই জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গাছিরা এই রস সংগ্রহে মাঠে নেমেছেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৭
এমবিএইচ/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।