ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিচার

ভাস্কো ডা গামা আর কলম্বাসের লড়াই

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৭
ভাস্কো ডা গামা আর কলম্বাসের লড়াই মানচিত্রের গল্প

নবম অধ্যায়
একদিকে ভাস্কো ডা গামা আর অন্যদিকে কলম্বাস। একদিকে পর্তুগালের প্রিন্স হেনরি আর অন্যদিকে স্পেনের রানি ইসাবেলা। মানচিত্র দুইজনকে সমুদ্র বিজয়ে প্রণোদিত করে। সমুদ্র পথে তারা নতুন দেশ আবিষ্কারই শুধু করেন নি, সেগুলোকে দখল করে প্রায়-পুরোটা দুনিয়াকেই করেন ইউরোপের অধীনস্থ উপনিবেশ।

জেনোয়ার এক তাঁতির ঘরের সন্তান কলম্বাস ছিলেন একজন অভিজ্ঞ নাবিক। তিনি বিস্তর দরিয়ার জল ঘাঁটাঘাঁটি করেছেন।

ভূমধ্যসাগর, আটলান্টিক তো বটেই, এমনকি তিনি আইসল্যান্ডেও অভিযান চালিয়েছিলেন। উনিশ শতক থেকে সকলেই এই তথ্য মেনে নিয়েছেন যে, ১০০০ অব্দ নাগাদ নরওয়ের নাবিকরা দক্ষিণ আমেরিকায় পৌঁছেছিলেন। কিন্তু আবাস না গেঁড়ে তারা ফিরেও এসেছিলেন। তবে কি কলম্বাস তাদের কাছ থেকেই ওদিকে অভিযানের উৎসাহ পেয়েছিলেন?

সে যাই হোক, কলম্বাস ‘এন্টারপ্রাইজ অব দ্য ইন্ডিয়া’ বা ভারত আবিষ্কারের প্রকল্প প্রথম পেশ করেন তৎকালের শক্তিশালী নৃপতি পর্তুগালের রাজা দ্বিতীয় জন-এর কাছে। শর্ত ছিল, সফল হলে কলম্বাসকে এবং তার বংশধরদের আভিজাত্যের মর্যাদা দিতে হবে; আবিষ্কৃত দেশের ধন দৌলতের দশ ভাগের এক ভাগ তাকে প্রাপ্য হিসাবে দিতে হবে ইত্যাদি।

নতুন ভূ-খণ্ড আবিষ্কারের পর কলম্বাস ও তার বাহিনী।  খুব বেশি প্রত্যাশা করেন নি ক্রিস্টোফার কলম্বাস। কিন্তু রাজা জন রাজি হন নি। কলম্বাস ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের দরবারেও একই প্রস্তাব দাখিল করেছিলেন। কিন্তু কেউই এহেন উচ্চাভিলাসী পরিকল্পনায় বিশ্বাস স্থাপন করতে পারেন নি এবং তাঁতীর সন্তানকে অভিজাতের মর্যাদা দিতে সম্মত হন নি। ফলে যথারীতি অভিযাত্রা প্রস্তাব গ্রহণেও রাজাগণ সম্মত হন নি। শেষ পর্যন্ত রাজি হলেন একজন রানি। তিনি স্পেনের রানি ইসাবেলা। সম্মতিসূচক মাথা নাড়লেন তিনি কলম্বাসের প্রস্তাবে।

সরকারি সমর্থন পেয়েই জাহাজ নিয়ে অথৈ জলে লাফিয়ে পড়লেন কলম্বাস এবং ভাসতে ভাসতে  ১৪৯২ সালের ১২ অক্টোবর একটি অজানা দ্বীপে পৌঁছুলেন। ভাবলেন এটিই বুঝি মার্কো পোলো কথিত ইন্ডিজের উপকূল। ১৫০৬ সালে কলম্বাস যখন মারা যান, তখনও তিনি জানেন না যে, আসলে কোথায় পৌঁছেছেন! আবিষ্কৃত জায়গাটি সম্পর্কে তার ধারণাই ছিল না। তিনি কেন? পৃথিবীর অনেকেই জানতেন না জায়গাটি, ভারতের কোনো অংশে, না নতুন এক পৃথিবীতে পৌঁছেছিলেন কলম্বাস, তা ছিল অনেক বছর অজ্ঞাত।

বহু বছর পর কলম্বাসের আবিষ্কার পৃথিবীর কাছে একটি সম্পূর্ন নতুন মহাদেশরূপে চিহ্নিত হয়েছিল আমেরিকো ভেসপুচ্চি নামে ফ্লোরেন্সের এক ধনী নাবিকের মাধ্যমে। কারণ, ১৪৯৯ সালে আরেকটি স্প্যানিশ অভিযানে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। অভিযানের শেষে দুটি চিঠিতে তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। নানা ভাষায় চিঠি দুটি প্রকাশিত হয়। তাতে তিনিই প্রথম লিখেন যে, আমরা যা দেখে এলাম তা এক নতুন পৃথিবী, ‘নিউ ওয়ার্ল্ড’।

লিসবন থেকে সমুদ্র অভিযান শুরু করছেন ভাস্কো ডা গামা১৫০৭ সালে একজন জার্মান ভূতত্ত্ববিদ টলেমির মানচিত্রের একটি নতুন সংস্করণ প্রকাশ করেন। সেটাতেই এক বিস্তৃর্ণ ভূখণ্ড প্রথম চিহ্নিত হয় ‘নিউ ওয়ার্ল্ড’ হিসাবে। এর আগের আর কোনও মানচিত্রে আমেরিকার কোনোই অস্তিত্ব নেই। এই নতুন বিশ্ব বা নব-আবিষ্কৃত ভূমি এশিয়া-আফ্রিকা-ইউরোপ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন; একেবারেই নতুন। আমেরিকো ভেসপুচ্চির নামানুসারে এ দেশের নাম দেওয়া হয় ‘আমেরিকা’।

গুপ্তধনের নক্সার মতো মহার্ঘ্য মানচিত্র ছিল কলম্বাসের কাছে, আমেরিকো ভেসপুচ্চির কাছে। আরেক স্মরণীয় অভিযাত্রী ভাস্কো ডা গামার কাছেও ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ মানচিত্র। কারণ, পর্তুগিজরা আগে থেকেই দরিয়া এবং পৃথিবী সম্পর্কে অবহিত ছিল। কিন্তু তার হাতে যে মানচিত্রটি ছিল, তাতে দ্রাঘিমাতে পাওয়া যায় অন্তত ১০ ডিগ্রির গোলমাল। ফলে অজানা দরিয়ায় দুঃসাহসী এই অভিযাত্রী উদ্দিষ্টের বদলে পৌঁছে যান অন্য কোথাও-নিজের অজান্তে অজানা-আনকোরা আরেকটি ‘নতুন পৃথিবী’-এর সন্ধান পান তিনি।

আমেরিকো ভেসপুচ্চি ও সম্রদু পথের মানচিত্র।  ডা গামার এই ঐতিহাসিক ভুলের প্রাপ্তি সামান্য নয়। কারণ এরই ফলাফল ইউরোপিয়ানদের কাছে ভারতের আবিষ্কার। ভুলের সূত্র সন্ধান চলছে কলম্বাসের ক্ষেত্রেও। তার কৃতিত্বের অন্য দাবিদারও আবির্ভূত হয়েছে। ১৭৫৭ সালে স্পেনের বার্সেলোনার এক পুরাতন মানচিত্রের দোকানে এমন এক মানচিত্র পাওয়া গেছে, যাতে গ্রিনল্যান্ডের একটি বড়সড় দ্বীপ রয়েছে, যার নাম ‘ভিনল্যান্ড ইনস্যুলা’। এই তো সেই তথাকথিত ‘নতুন পৃথিবী’!

দ্বিতীয় দাবিদার জন ডে নামের একজনের লিখা একটি চিঠি, যাতে জন ডে নামে একজন ইংরেজ ব্যবসায়ী স্প্যানিশ কর্তাব্যক্তিকে জানাচ্ছেন যে, ১৪৯২ সালের আগেই একজন ইংরেজ নাবিক পৌঁছেছিলেন ‘বেসিল’ বা ব্রাজিলে। এখনো চর্চা চলছে এই রহস্য উন্মোচনের জন্য, কে আগে আবিষ্কার করেছিলেন আমেরিকা।

পূর্ববর্তী পর্ব
চুম্বক, কম্পাস ও ‘বাতাসি গোলাপ’

পরবর্তী পর্ব
ফ্ল্যান্ডার্স শহরের গেরারডুস মার্কেটার

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৭
এমপি/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।