ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

মানচিত্র থেকে গ্লোব

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩, ২০১৮
মানচিত্র থেকে গ্লোব মানচিত্রের গল্প

চতুর্দশ অধ্যায়
ব্রহ্মপুত্রের উৎস-সন্ধানী কিনথুপ-এর চেয়েও অনেক বেশি রোমাঞ্চকর এবং উত্তেজক ব্রিটিশ-ভারতের জরিপ-উদ্যোগের অন্তিম কাহিনি। ইংরেজদের অনেক দুর্নামের পাশে কিঞ্চিৎ সুনামের সঙ্গে এই কীর্তি এখন মানচিত্রের ইতিহাসের নেপথ্য-কথাস্বরূপ লিপিবদ্ধ রয়েছে।

ইতিহাস রচয়িতাদের কাছে এসব আশ্চর্যজনক বিষয় এবং অবিশ্বাস্য বিজয়-কাহিনির মতো। সেসব কাহিনী অপ্রতিরোধ্য।

কোনো ঐতিহাসিকের সাধ্য নেই তা এড়িয়ে যাবেন!

যার প্রমাণ পাওয়া যায়, ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত ম্যাথু এইচ এডনির বিশাল গবেষণাগ্রন্থ ‘ম্যাপিং অ্যান এম্পায়ার’। আশ্চর্যের বিষয় হলো, এডনির বইকেও হার মানিয়েছে মানচিত্র নিয়ে রচিত রয়াল সাইজে পাঁচশ পৃষ্ঠারও বেশি কলেবরের জন নোবল উইলফোর্ড-এর ‘দ্য ম্যাপমেকার্স: দ্য স্টোরি অব দ্য পাইওনিয়ার্স ইন কার্টোগ্রাফি ফ্রম অ্যান্টিকুইটি টু দ্য স্পেস এজ’। লন্ডনের পিমলিকো প্রকাশনী থেকে সচিত্র এই বইটি এক কথায় মানচিত্র সম্পর্কে একটি বিশ্বকোষ। সেই সুপ্রাচীনকাল থেকে আজকের এই একুশ শতকের কালক্রম পর্যন্ত নিজেদের পৃথিবীর সন্ধানে মানুষ হাজার হাজার বছর ধরে মানচিত্র নামক চর্চায় যা করেছে, তার সবই সবিস্তারে বর্ণিত রয়েছে এই গ্রন্থে। মানচিত্র সংক্রান্ত তথ্য আর তত্ত্ব চলেছে হাত ধরাধরি করে।

লেখক উইলফোর্ড অতিশয় পণ্ডিত ব্যক্তি। যদিও তার মুখ্য পেশা সাংবাদিকতা, তথাপি মানচিত্র বিষয়ে তিনি একজন বিশেষজ্ঞ। পেশাজীবনে তিনি প্রখ্যাত ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ পত্রিকায় কাজ করেছেন। কাজ করেছেন ‘টাইম’ ম্যাগাজিনেও। ১৯৬৫ সাল থেকে তিনি বিজ্ঞান-প্রতিবেদক হিসাবে যুক্ত হয়েছিলেন ‘নিউইর্য়ক টাইমস’ পত্রিকার সঙ্গে। তিনি সাংবাদিকতার জন্য দুই-দুইবার নামজাদা ‘পুলিৎজার পুরস্কার’ পেয়েছেন। বিজ্ঞান বিষয়ক বেশ কিছু বইয়ের লেখক জন নোবেল উইলফোর্ড দুই-দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনাও করেছেন।

উইলফোর্ডের ‘দ্য ম্যাপমেকার্স’ প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৮১ সালে। ১৯৯৭ সালে আমেরিকার বিখ্যাত ‘লাইব্রেরি অব কংগ্রেস’-এ ম্যাপ ডিভিশনে উঁকি দিতে গিয়ে তার মনে হলো মানচিত্রের দুনিয়ায় ইতিমধ্যে আরও কত কাণ্ডই না ঘটে গেছে! সুতরাং বইটির পরিমার্জন ও পরিবর্ধন অতিশয় জরুরি। অতঃপর তিনি সে কাজে আত্মনিয়োগ করেন। ফলে ২০০৪ সালে আমেরিকায় প্রকাশিত হয় বইটির নতুন সংস্করণ।

ম্যাপ বা মানচিত্র সংক্রান্ত কী নেই বইটিতে! পৃথিবীর প্রায় সব দেশের মানচিত্র আঁকার আনুপূর্বিক বিস্তারিত বিবরণ, দুই আমেরিকা (উত্তর ও দক্ষিণ) তো বটেই, মেরু অঞ্চলের মানচিত্র, ক্যাপ্টেন কুক-এর অভিযান, সমুদ্রতটের মানচিত্র, দ্রাঘিমার সন্ধানে ইংরেজ ঘড়ি-কারিগর জন হ্যারিসন-এর কাণ্ড কারখানা থেকে শুরু করে আকাশ থেকে তৈরি মানচিত্র (মহাকাশ থেকে তৈরিও), চাঁদ, মঙ্গলগ্রহ, মহাকাশের মানচিত্র ইত্যাদি কিছুই বাদ নেই। সব অধ্যায়ই তথ্যবহুল, বিস্তৃত এবং সবিস্তারে আলোচিত, যা মানচিত্রের পথে উন্মুক্ত করে দেয় অজানা ও অদেখা জ্ঞানের জগৎ।

মানচিত্রের আলোচনা অসমাপ্ত থাকবে যদি গ্লোব বা ভূ-গোলকের প্রসঙ্গে কিছু না বলা হয়। পৃথিবীর প্রথম গোলক বা গ্লোব তৈরি করে গ্রিকরা। কিন্তু তা আজ আর খুঁজে পাওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু মহাকালের স্রোতে ভেসে ভেসে যে গোলকটি এখনো টিকে রয়েছে, সেটি তৈরি করেন মার্টিন বেহারিম নামে একজন জার্মান। তিনি বেশ কিছুকাল পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে ছিলেন। তিনি পর্তুগিজদের নানা সামুদ্রিক অভিযানে নানাভাবে সহায়তাও করেছেন।

১৪৯০ সালে মার্টিন বেহারিম নিজের দেশ জার্মানিতে ফিরে যান এবং নুরেমবার্গ-এ বসে একটি গ্লোব তৈরি করেন। সেটি এখনও নাকি রয়েছে! এর পরিধি ৫০ সেন্টিমিটার। কাঠের গোলকের উপর চামড়ার ফালিতে আঁকা মানচিত্র টুকরো টুকরো করে সেঁটে দেওয়া হয়েছিল তাতে। মানচিত্রটি মার্টিনের নির্দেশনায় আঁকেন একজন শিল্পী। এতে সুমেরু এবং কুমেরু রয়েছে। রয়েছে ৩৬ ডিগ্রি বিষুবরেখাও। একমাত্র দ্রাঘিমা লিসবনের পশ্চিমে ৮০ ডিগ্রিতে অবস্থিত। ছয় রঙে আঁকা এই গোলকে এক হাজার একশ স্থানের নাম, এগারোটি ছবিও রয়েছে। মার্টিন গোলকটির নাম দেন ‘এরাডাফেল’ বা ‘আর্থ অ্যাপল’ বা ‘বিশ্ব আপেল’।

পৃথিবীর মানচিত্রের সূত্রে চলে আসে চাঁদের মানচিত্রের কথাও। পৃথিবীতে বসে কে বা কারা প্রথম রচনা করেছিলেন চাঁদের মানচিত্র? কারা চিহ্নিত করেছেন ঐ চাঁদ-বদনে কলঙ্ক ? কারাই বা নামাঙ্কিত করেছেন চাঁদে অবস্থিত পাহাড়, সমুদ্র ইত্যাদিকে? এসব প্রশ্নের প্রথম উত্তর দেওয়ার কৃতিত্ব একজনের নয়; বহু জনের।

পূর্ববর্তী পর্ব
‘আই হ্যাভ ডিসকভারড দ্য হাইয়েস্ট মাউন্টেন’

বাংলাদেশ সময়: ১১২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৮
এমপি/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।