ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

ফিচার

রসের স্বাদে রসের মেলা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৮
রসের স্বাদে রসের মেলা রসের মেলায় খেজুর রস। ছবি: সুমন শেখ/বাংলানিউজ

ঢাকা: খেজুর গাছ থেকে রসের হাড়ি চুরি করে রস খাওয়ার স্মৃতি গ্রামে বেড়ে ওঠা অনেকেরই মূল্যবান স্মৃতি! এরপর দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে এখন বয়সের ভারে তারা যেমন নতজানু, তেমনি অনেকেই গ্রামে না থাকার কারণে ভুলতে বসেছেন শীতের সাত সকালে খেজুর রস খাওয়ার রসবোধ। 

তবে যে রসের সঙ্গে এতো সখ্যতা, সেই মিঠা রস কি আর এতো সহজে পিছু ছাড়ে! তাই তো সে রসের চিরন্তন স্বাদ শহুরে মানুষের জিহ্বায় পৌঁছে দিতে রাজধানীতে হয়ে গেল রসের মেলা।

বাঙালির রসবোধ সর্বজন বিদিত।

বাঙালির চিন্তা মননে রসবোধ আগেও ছিল, এখনও আছে। সেই রসবোধকে আরও রসালো করতেই শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায় ‘রঙ্গে ভরা বঙ্গ’ আয়োজন করে এ রসের মেলার।

**বকুলতলায় খেজুর রসের ঘ্রাণ!

সকালে মেলার উদ্বোধন করেন অধ্যাপক হায়াত মামুদ। এসময় তিনি বলেন, শুধু খাবার জন্য নয়, বাঙালির মধ্যে রসবোধ সৃষ্টিও এ মেলার অন্যতম উদ্দেশ্য।

শুকনো পাতা দিয়ে তৈরি বাটিতে খেজুর গুড় ও খৈ-মুড়ি খেতে দেওয়া হয়।  ছবি: সুমন শেখ/বাংলানিউজস্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, কিশোর বেলায় শীতের রাতে গাছ থেকে রস চুরি করে খেতাম আমরা। তবে অনেকদিন সে রস খাওয়া হয় না। গ্রামের সে রসে আলাদা একটা ঘ্রাণ ছিল, তবে শহরের এ রস মিঠে হলেও কৈশোরের সে ঘ্রাণটা পাওয়া যায় না।

রসের মেলায় আগত সবাইকে খেজুরের রস, খেজুরের গুড়, খৈ ও মুড়ি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। শুকনো পাতা দিয়ে তৈরি বাটিতে খেজুর গুড় ও খৈ-মুড়ি খেতে খেতে এ সময় রসবোধে মেতেছেন অনেকেই। তাদের সে রসবোধকে আরও মিঠে করে তুলে পোড়ামাটির গ্লাসে কুয়াশা মাখ খেজুর রসের মিঠে স্বাদ।

রসের এ মেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সরকারি কর্ম কমিশনের সচিব আকতারী মমতাজ। এসময় তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, ছেলেবেলায় গ্রামে ভোরবেলা গাছ থেকে রস এনে সকলে গোল হয়ে বসতাম আমরা। তারপর রসের পিঠা-পায়েস, নলেন গুড়ের সঙ্গে মুড়ি দিয়ে নাশতা করতাম। আজকের এ রসের মেলা সে স্মৃতিকে মনে করিয়ে দিয়েই স্মৃতিকাতর করে দিচ্ছে।

আকতারী মমতাজ বলেন, খেজুর রস আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতির একটি অংশ। আমাদের জন্যই এখন তা অনেক দূরে সরে গেছে। আমাদের সন্তানেরা এখন কোল্ড ড্রিংকসের স্বাদ জানে, খেজুর রসের স্বাদ জানে না। এ দায়ভার আমাদেরই। তাই আমাদেরই উন্নয়নের স্বার্থে এগিয়ে আসতে হবে।  

‘গ্রামের গাছিদের (যারা খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে) উন্নয়নে আমাদেরই কাজ করতে হবে। কেননা এখন গ্রামে খেজুর গাছ পাওয়া গেলেও আর গাছি পাওয়া যায় না। ’

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন শিল্পী নিসার হোসেন, বাংলা একাডেমির ফোকলোর বিভাগের পরিচালক শাহিদা বেগম প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে লোক সংগীত পরিবেশন করেন জনি বয়াতি ও মালেক সরকার। অনুষ্ঠান চলে দুপুর পর্যন্ত।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৮
এইচএমএস/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।