মাত্র চারটি অক্ষরে ‘ভালোবাসা’ এ শব্দের গভীরতা আর ব্যাপকতা সীমাহীন। ‘ভালোবাসা দিলে মা মরে যায়/যুদ্ধ আসে, ভালোবেসে/মায়ের ছেলেরা চলে যায়’- কী প্রগাঢ় শক্তি আর বিষাদ এ ভালোবাসার।
আত্মার গহিনে লুকানো সে ভালোবাসার কথা গোপন প্রিয়াকে আজ অকপটে বলা যায়- ‘ভালোবাসি, তোমাকেই ভালোবাসি। ’ কেননা, আজ ভালোবাসার দিন। বসন্তের মিথস্ক্রিয়ায় সারা বিশ্বের প্রেমপিয়াসী যুগলরা এ দিনটিকে বেছে নেয় ভালোবাসার কথা বলতে। ভালোবাসার দিনটিতেই বেছে নেয় মনের গহিনের কথকতার কলি ফোটাতে।
প্রেমদেব কিউপিড এদিন প্রেমবাণ বাগিয়ে হৃদয় অন্দরে ঘুরে বেড়াবেন। অনুরাগে পাগল প্রেমিক-প্রেমিকারা পরাণ তাড়িত হয়ে বিদ্ধ হবে দেবতার বাঁকা ইশারায়। তাদের মনে লাগবে দোলা, ভালোবাসার রঙে রাঙাবে হৃদয়। ভালোবাসা উৎসবে মুখর হবে জনপদ। পৃথিবীর কোথাও কোথাও বন্ধু দিবস হিসেবেও মহাসমারোহে দিবসটি উদ্যাপিত হচ্ছে। তরুণ-তরুণী ছাড়িয়ে বিভিন্ন বয়সের মানুষের মনে দোলা দিয়ে যাচ্ছে দিবসটি।
ভালোবাসা দিবস কীভাবে, কবে থেকে শুরু হয়েছে- ইতিহাসের পাতায় তা নিয়ে রয়েছে হরেক কাহিনী। তবে বহুল প্রচলিত কাহিনীটি হচ্ছে, রোমান পাদ্রি সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনকে ক্রিশ্চিয়ান ধর্ম প্রচারের অভিযোগে ২৭০ সালে মৃত্যুদণ্ড দেন রোমের দ্বিতীয় ক্লডিয়াস। তিনি কারাগারে বন্দি থাকার সময় ছোট ছেলেমেয়েরা তাকে ভালোবাসার কথা জানিয়ে জানালা দিয়ে চিঠি ছুড়ে দিতো। বন্দি সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন চিকিৎসা করে জেলারের মেয়ের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দেন। এভাবে মেয়েটির সঙ্গে তার যোগাযোগ ঘটে। মারা যাওয়ার আগে মেয়েটিকে লেখা একটি চিঠিতে তিনি জানান, ‘ফ্রম ইউর ভ্যালেন্টাইন। ’ ধারণা করা হয়, এ সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের নামানুসারেই প্রথম জুলিয়াস ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন্স ডে’ হিসেবে ঘোষণা করেন।
শাশ্বত বাঙালির সাজে উৎসবের হাওয়ায় আজ যুগলের দল ভেসে বেড়াবেন শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর, চারুকলা, টিএসসি ও অমর একুশে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণসহ নগরীর এখানে-ওখানে। দিবসকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিনে নগরীর বিভিন্ন বিপণিবিতানে গিয়ে তরুণ-তরুণীদের ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কার্ড, শোপিসসহ নানা উপহারসামগ্রী কিনতে দেখা গেছে। ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বিভিন্ন সংগঠন। নামকরা হোটেল ও রেস্টুরেন্ট বিশেষ লাঞ্চ ও ক্যান্ডল-লাইট ডিনারের ব্যবস্থা করেছে। টেলিভিশনে আজ প্রচার হবে বিশেষ অনুষ্ঠান। বিভিন্ন মোবাইল ফোন কোম্পানির উদ্যোগে রাজধানীর কয়েকটি স্থানে কনসার্টের আয়োজনও করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ছিলো বসন্তবরণের দিন। একদিকে ঋতুরাজ বসন্তের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস, অন্যদিকে আজ ভালোবাসা দিবস। তবে ভালোবাসা দিবসটি কেবল প্রিয়তম-প্রিয়তমার জন্য নয়। এ দিবসের তাৎপর্য বিশাল ও সর্বজনীন। বাবা-মা, ভাই-বোন, সন্তান, বন্ধু, আত্মীয়স্বজন, প্রিয় ব্যক্তিত্ব, এমনকি পোষা-প্রাণী থেকে শুরু করে প্রিয় গাছটির প্রতিও আজ ভালোবাসা প্রদর্শনের ক্ষণ।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৮
এইচএমএস/ওএইচ/