কোনো কোনো গাছে ফুল থেকে বেড়িয়েছে এলাচের দানা। বেলে দো-আঁশ মাটিতে এলাচের ফলনও হয়েছে ভালো।
স্বপ্ন বাস্তাবায়নে দীর্ঘ প্রতীক্ষা, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও বাঙালির রান্নার সুঘ্রাণ এলাচ (মসলা) ঘরে তোলার স্বপ্নে বিভোর ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের যুবক রেজাউল করিম। আর মাত্র চার থেকে পাঁচ মাস পর তার স্বপ্নের এলাচ (মসলা) বিক্রি করে নিজের ভাগ্য বদলানোর প্রহর গুনছেন কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার যাদুর চর ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চলের নতুন চুলিয়ার চর গ্রামের যুবক রেজাউল করিম।
এলাচ চাষের মাধ্যমে নিজেকে স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি দেশকে মসলা আমদানি নির্ভরতা কমানোর তার যে লক্ষ্য তা এখন বাস্তবায়নের চূড়ান্ত পর্যায়ে। আর কয়টা মাস পরেই স্বপ্নের এলাচ বিক্রি করবেন যুবক রেজাউল।
বাড়ির উঠোনে মাত্র দেড় শতক জমিতে দুই সহস্রাধিক গাছে এখন শোভা পাচ্ছে এলাচ ফুল ও ফল। ফুলের সুঘ্রাণ চারিদিকে যেন জানান দিচ্ছে কষ্ট সাধ্য এই এলাচ চাষের সফলতা।
নতুন চুলিয়ার চরের এলাচ চাষি রেজাউল করিম বাংলানিউজকে জানান, বাড়ির উঁচু ভিটায় বেলে-দোঁআশ মাটিতে বর্তমানে দুই সহ¯্রাধিক এলাচ গাছে ফুল ও ফল ধরেছে। ফুল আসা শুরু হয় ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে। ফুল থেকে মসলা পরিপক্ক হতে সময় নেবে আরো ৪/৫ মাস।
আগস্ট মাসে গাছ থেকে পরিপক্ক এলাচ সংগ্রহ করে ৩/৪ দিন রোদে শুকানোর পর তা ব্যবহারের উপযোগী হবে। এরপর এলাচ (মসলা) বাজারজাত করা সম্ভব হবে। যে হারে ফুল ও ফল এসেছে তাতে দুই সহ¯্রাধিক গাছে এলাচ (মসলা) উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে অন্ততপক্ষে ৩৫ থেকে ৪০ কেজি। প্রতিকেজি এলাচ থেকে দুই হাজার টাকা বাজার দরে বিক্রি করে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা পাবেন বলে আশা করছেন।
প্রতিবছর যেমন গাছের সংখ্যাও বাড়ছে তেমনি উৎপাদনও বাড়ছে। তবে এর পরিচর্যায় খরচ তেমন একটা নেই বলেই চলে। দুই হাজার এলাচ গাছে সার প্রয়োগ ও পরিচর্যায় এ পর্যন্ত তার খরচ হয়েছে মাত্র ৫/৬ হাজার টাকা।
রৌমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বাংলানিউজকে জানান, ভারত, চীন. মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও শুরু হয়েছে এলাচ চাষ। সবচেয়ে আশার কথা হচ্ছে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে এলাচ চাষ হচ্ছে।
যাদুর চর ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চলের নতুন চুলিয়ার চর গ্রামের যুবক রেজাউল করিমের এলাচ বাগানে ফুল ও ফল এসেছে। এখন শুধু ৪/৫ মাস অপেক্ষার পালা পরিপক্ক হওয়ার জন্য। কৃষি বিভাগ সবসময় তার সাথে যোগাযোগ রাখছে এবং পরামর্শ দিচ্ছে। এলাচ আরো ব্যাপক আকারে চাষ শুরু হলে প্রত্যন্ত এ এলাকার অর্থনৈতিক পরিবর্তন ঘটবে তেমনি দেশে মসলার আমদানি নির্ভরতাও কমে যাবে। তবে মসলা চাষে সরকারের সহায়তা ও পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে প্রত্যন্ত এলাকাগুলোর অর্থসামাজিক অবস্থার পরিবর্তনে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩২ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৮
এফইএস/এএটি