আবার অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে ডানা মেলে নিজ সন্তানের জন্য খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে যেন হয়রান। গাছের মাথার ওপর চিকন ডালপালায় ডানা শরীরের সঙ্গে লাগিয়ে যেন বিশ্রাম করছিল।
গায়ের রং ধূসর সাদা। আকারেও বেশ বড়সড়ো। লেজ ও পাখার শেষভাগ কালো রঙের। ভারী ঠোঁটের মাঝখানে ফাঁক থাকে। ঠোঁটও বেশ খানিকটা বড়। শামুক এদের প্রিয় খাবার। শামুকের খোল ভাঙে ঠোঁট দিয়ে। তারপর সেটা ওপরের দিকে তুলে ধরে। আকাশের দিকে মুখ করে গিলে ফেলে তা।
তবে খাবার হিসেবে এরা শুধু শামুকই খায় না। মাছ, কাঁকড়া, ছোট ছোট প্রাণী, ব্যাঙ প্রভৃতি এদের খাবার তালিকায় রয়েছে। দেখতে অনেকটা বকের মতো। তবে বক নয়, বক প্রজাতির। প্রিয় খাবার শামুক হওয়ায় এদের বলা হয় শামুকখোল বা শামখোল। এটি বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি।
শামুকখোলের বাসা বড় হয়। একেকটি গাছে ২৫-৩০টি বাসা দেখা যায়। শুকনো ডাল, কঞ্চি ও লতাপাতার সমন্বয়ে বাসা তৈরি করে শামুকখোল। স্ত্রী-পুরুষ পাখি মিলে ১০-১২ দিনে তৈরি করে বাসা। পাঁচ ফুট পর্যন্ত বাসার দৈর্ঘ্য হয়। ডিম দেয় জুলাই-আগস্ট মাসে। তিন থেকে পাঁচটি ডিম পাড়ে। স্ত্রী-পুরুষ পাখি মিলে ডিমে তা দেয়। ২৫ দিন লাগে ডিম ফুটে ছানা বেরুতে। ৩০ থেকে ৩৫ দিন বয়স হলে ছানা উড়তে শেখে।
বগুড়া সদর থেকে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক হয়ে দক্ষিণে দশমাইল এলাকায় যেতে হবে। এরপর পাকা সড়ক ধরে আঁকাবাঁকা পথে খানিকটা পূর্বে গেলে রামনগর গ্রাম। গ্রামের উত্তরপাশ ধরে এঁকেবেঁকে প্রবাহমান করতোয়া নদী। রয়েছে ফসলের মাঠ। গ্রামটি শেরপুর উপজেলার গাড়িদহ ইউনিয়নের মধ্যে অবস্থিত। এই গ্রামের একটি বিশাল অংশজুড়ে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালায় আবাস্থল গড়ে তুলেছে দুর্লভ প্রজাতির শামুকখোল।
তখন রাতের আঁধার কেটে সবেমাত্র ভোর। রামনগর গ্রামে শামুকখোলের আবাস্থলে পৌঁছাতে খানিকটা সময় লাগলো। সেখানে পৌঁছে শামুকখোল নিয়ে গ্রামের একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হলো। বেশ কয়েকটি স্থানে ‘পাখি শিকার দণ্ডনীয় অপরাধ’ তীর নামে শিক্ষার্থীদের পরিবেশবাদী সংগঠনের ব্যানারে ছোট আকারের সাইনবোর্ড সাঁটানো দেখা গেলো।
আব্দুল আজিজ নামে এক প্রবীণ ব্যক্তি বাংলানিউজকে জানান, প্রায় সাত মাস আগে পাখিগুলো এই গ্রামে এসেছে। এরপর সময়ের ব্যবধানে বাসা বেঁধেছে, ছানা তুলেছে। এখন ছানাগুলো বেশ বড়ও হয়েছে। স্থানীয়রা পাখিগুলোকে কোনো প্রকার জ্বালাতন করে না। শীত পড়তেই মা পাখিসহ বাচ্চারা উড়ে এই গ্রাম ছেড়ে চলে যায়।
দোকানি মুকুল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, গেলো বছর পাখিগুলো এই গ্রামে আসেনি। তবে এবার দিয়ে এই গ্রামে এসব পাখি তিনবার এলো। ঝড় হলে পাখির বাসাগুলো ভেঙে মাটিতে পড়ে যায়। এ কারণে বেশ কিছু পাখি মাটিতে পড়ে মারা গেছে।
এছাড়া ঝড়ের কারণে শিমুল গাছের একটি ডাল ভেঙে মাটিতে পড়ে মা পাখিসহ বেশ কিছু সংখ্যক বাচ্চা মারা গেছে এবার। আর শিকারিরা আসলে গ্রামবাসীর কারণে তাদের পাখি না মেরেই চলে যেতে হয়। কেননা এসব পাখির ব্যাপারে গ্রামবাসী অনেক সচেতন।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৮
এমবিএইচ/এএ