ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক অস্তিত্বের জানান দিলো নৃ-গোষ্ঠীরা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৮
সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক অস্তিত্বের জানান দিলো নৃ-গোষ্ঠীরা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের নৃত্য-ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: এ দেশে নানা নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর বসবাস। প্রতেক্যেরই রয়েছে নিজস্বতা, গৌরবময় সংস্কৃতি। সংস্কৃতির এই মেলবন্ধনে তারাও বিশ্বজনীন হয়ে উঠতে চায় সগৌরবে।

‘আমাদের পরিচয়, আমাদের সংস্কৃতি’ -এই স্লোগানটি ঘিরে শ্রীমঙ্গলে অনুষ্ঠিত হলো দু’দিনব্যাপী (২২-২৩ নভেম্বর) সম্মেলন ও সাংস্কৃতিকপর্ব। প্রান্তিক ও বিছিন্ন জনগোষ্ঠীর সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সুরক্ষা দানে করণীয় ভূমিকা নিয়ে নানা মতামত, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন সারাদেশ থেকে আসা জাতীয় ব্যক্তিসহ নৃ-জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা।

 **প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি জাতীয় গৌরবের প্রতীক

শুক্রবার (২৩ নভেম্বর) সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার শেষ আয়োজনে শ্রীমঙ্গল মহসীন অডিটরিয়ামে পরিপূর্ণ দর্শকের উপস্থিতিতে সাঁওতাল, ওরাও, গারো, মুন্ডা, ঘটোয়ার, ভূমিজ প্রভৃতি নৃ-সমাজের প্রতিনিধিরা তাদের নৃত্য, গীতি এবং নাটক নিয়ে নিজেদের সংস্কৃতি তুলে ধরেন।  

এই সাংস্কৃতিক পর্বে প্রধান অতিথি হয়ে এর উদ্বোধন ঘোষণা করেন বরেণ্য লেখক ড. হরিশংকর জলদাস। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ চা জনগোষ্ঠী আদিবাসী ফ্রন্টের সভাপতি পরিমল সিং বাড়াইক। ‘বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি’ -এই বিষয়ের উপর প্রবন্ধ পাঠ করেন সিলেটের কবি ও গবেষক এ কে শেরাম।  
 
নৃ-জনগোষ্ঠীর নেতা পরিমল সিং বাড়াইকের সঞ্চালনায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব। পালকিছড়া চা বাগানের মুন্ডা, ওরাও, সাঁওতাল, রায়, ঘাটোয়ার প্রভৃতি নৃ-জনগোষ্ঠীরা নিয়ে আসেন ‘হৃদয়ে বাংলাদেশ’ শীর্ষক নৃত্য।  
 
এরপর পরিবেশিত হয় শ্রীমঙ্গলের রামনগর মৈতৈ সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী মণিপুরী নৃত্য। তাদের নৃত্যের দু’টি ধারা ৩০ মিনিটের মধ্যে এখানে উপস্থাপিত হয়। প্রথমটি- ‘রাস নৃত্য’। কার্তিকীয় রাস উৎসবে মনোমুগ্ধকর রাস নৃত্য হয়ে থাকে। এছাড়া ব্যাক্তিগতভাবে কেউ মানত করলে সামাজিকভাবে এই নৃত্যের আয়োজন করা হয়। নৃত্যটিতে কাপড়ের তৈরি জাগোই পোশাক পরে পুং এবং করতালের তালে তালে গান করে মাসের পূর্নিমাতে রাস নৃত্য করা হয়। মণিপুরী নৃত্যের পরবর্তী পরিবেশিত ধারাটি হলো- ‘নূপি পালা’। রথযাত্রার সময় নূপি পালার নৃত্য করা হয়। ভগবানের তুষ্টির জন্য নারীরা এই গান ও নাচ করেন।
 
তৃতীয় পর্বে ‘গারো-নৃত্য’ নিয়ে মঞ্চে আসে গারো সম্প্রদায়ের নৃ-জনগোষ্ঠীরা। হরিণছড়া চা বাগান, বিদ্যাবিল চা বাগান এবং নাসিমাবাদ চা বাগানের চা শ্রমিকরা এই চমৎকার নৃত্যটি পরিবেশন করেন।
 
সিন্দুরখান চা বাগানের তাঁতি, বুনার্জী, মাহালি, দাস প্রভৃতি সম্প্রদায় চতুর্থ পর্বে পরিবেশন করেন মনোমুগ্ধকর ‘ওরিয়া নৃত্য’। ওড়িয়া জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন নৃত্য ও গীত রয়েছে। এই জনগোষ্ঠীর প্রধান ধর্মীয় উৎসব ‘দন্ড ব্রত’। এই যাত্রাপালার মাধ্যমে শিব ও গৌরীর মাহাত্ম্য প্রচার করা হয়।
 
পঞ্চমপর্বে পালকিছড়া চা বাগানের শ্রমিকরা পরিবেশন করেন ‘ঝুমুর নৃত্য ও গান’। ঝুমুর নৃত্য চা জনগোষ্ঠীদের একটি জনপ্রিয় নাচ। মৃত্যু অনুষ্ঠান বাদে সব ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানে এ নৃত্যটি পরিবেশন করা হয়।
 
এরপর অনুষ্ঠিত হয় মুন্ডা জনগোষ্ঠীদের ‘লাঠি নৃত্য’। চা জনগোষ্ঠীদের অতি জনপ্রিয় নৃত্য কাঠি নাচ। এই নাচটি সাধারণত শ্রী কৃষ্ণের দোলযাত্রা উৎসবে পরিবেশন করা হয়। তারা রাধাকৃষ্ণ ও গোপিসখা সেজে কাঠি হাতে জোড়ায় জোড়ায় নৃত্য পরিবেশন করে।  
 
সবশেষে পরিবেশিত হয় চা জনগোষ্ঠীর কালচার ও ভূমি অধিকার বিষয়ক নাটক- ‘নিজ ভূমে পরবাসী’। এটি পরিবেশন করেন হবিগঞ্জ চুনারুঘাটের দেউন্দি চা বাগানের ভূমিজ, গোয়ালা, বাউরি, চাষা, বিশ্বাস, রায়, ঘাটোয়ার প্রভৃতি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর চা শ্রমিক ও তাদের সন্তানরা। এই নাটকটির রচনা ও পরিচালনায় ছিলেন ডা. সুনীল বিশ্বাস। চা জনগোষ্ঠীর ঐতিহাসিক একটি আন্দোলন ‘মূলকে চলো’। ১৯২১ সালের ২ মে এই আন্দোলনটি হয়েছিল। আন্দোলনেরই প্রেক্ষাপট নিয়েই ছিল এই নাটকটি।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৯ ঘণ্টা, ২৪ নভেম্বর, ২০১৮
বিবিবি/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।